বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের : গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বিএনপির কারণেই বারবার হোঁচট খায়

আগের সংবাদ

আত্রাই উপজেলা মিলনায়তনের পাশে জলাবদ্ধতা

পরের সংবাদ

প্রজাতন্ত্রে কর্মরতদের কাছ থেকে সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রজাতন্ত্রের কাজে নিযুক্ত সব ব্যক্তিই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছে। ফলে রাষ্ট্রের সব শ্রেণি ও পেশার লোক তাদের কাছে প্রতিদিনই দেখা করতে যায় বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজে। এ ক্ষেত্রে জনগণের এসব কাজ কোনো তর্ক ছাড়াই দ্রুত সম্পাদন করে দেয়াই তাদের একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত সব ব্যক্তি জনগণের সেবা করার মাধ্যমে মন জোগাবেন এবং দেশকে ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখবেন- এটাই তাদের কাছে জনগণের স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু তারা যখন সেবকের বদলে নিজেদের প্রভু মনে করে জনগণকে অবমূল্যায়ন করেন ঠিক তখনই দেখা দেয় বিপত্তি।
কিছু দিন ধরেই দেশের প্রশাসন ক্যাডারদের নামে তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন করে কথা না বলার জন্য বিভিন্ন সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি কিংবা হেনস্থা করার বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে। এই বিষয়টি যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্যবার খবরের শিরোনাম হয়েছে। সর্বশেষ প্রশাসনের একজন বড় কর্মকর্তা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সঙ্গে স্যার ডাকা নিয়ে যা করলেন তা সত্যিই নিন্দনীয়। অবশ্য ইতোমধ্যে ব্যাপারটি তিনি মিটিয়ে নিয়েছেন। তবুও প্রশ্ন থেকে যায় এই মানসিকতা কেন? দেশের সব ধরনের জনগণ বিভিন্ন কাজে তাদের কাছে যাবে এবং সেবা চাইবে, তাই বলে তাদের স্যার ডাকতে হবে, না হলে তারা সেবাপ্রার্থীদের অপমান করবে, অফিস থেকে বের করে দেবে, ক্ষমতার দম্ভ দেখাবে- এটা সত্যিই দুঃখজনক। এমন দুঃখজনক এবং অন্যায় পন্থা থেকে তাদের দ্রুত বের হয়ে আসা উচিত, কারণ দেশের মানুষ সেই ব্রিটিশ আমলে পড়ে নেই, দেশ এগিয়েছে অনেক দূর, সঙ্গে সঙ্গে মানুষও শিক্ষিত হচ্ছে তারা বুঝতে শিখছে ন্যায় অন্যায় এবং তারা এও বুঝতে শিখছে দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় চলা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত সবার কাজই হচ্ছে জনগণের সেবা করা, তাদের স্যার সম্বোধন করা কোনো অবস্থাতেই বাধ্যতামূলক নয়। ফলে এই উপলব্ধি থেকে সমাজের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবাদ হচ্ছে এবং সেই প্রতিবাদে অনেক মানুষ অংশগ্রহণ করছে। তারা সবাই এমন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক চিন্তাধারার অবসান চায়। প্রকৃতপক্ষে একটি উচ্চতর পদে বসলে মানুষ এমনিতেই সমীহ করে এবং উক্ত ব্যক্তির সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আচরণও সংযতভাবেই করে। তার মধ্যে জোর করে স্যার ডাক শোনার জন্য যারা বিভিন্ন জায়গায় অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন তাদের ভেবে দেখা উচিত বিষয়টা তাদের জন্য কতটা লজ্জাজনক। মূলত জোর করে সম্মান আদায় করা যায় না। আপনার আচার, ব্যবহার এবং কর্ম ঠিক থাকলে জনগণ আপনাকে এমনিতেই সম্মান দেবে। প্রকৃতপক্ষে কাজের জায়গায় নিজেকে সেবাগ্রহীতাদের বন্ধু মনে করলে কাজের ক্ষেত্রটা অনেক সুমধুর থাকে। সে ক্ষেত্রে আমাকে কেউ স্যার সম্বোধন করল কি না তাতে কিছু যায় আসে না। বরং স্যার না ডেকে ভাই, চাচা, আপা ডাকলে বন্ধনটা আরো দৃঢ় হয় বলে আমরা মনে করি। সে ক্ষেত্রে কাজ করতে আরো সুবিধা হবে। অনেক সময় দেখা যায় স্যার না ডাকার কারণে অনেক প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী রেগে যান এবং সেবাগ্রহীতার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে আর উৎসাহ দেখান না। এ ক্ষেত্রে যে তারা কতটুকু জঘন্য মনমানসিকতার পরিচয় দেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না পবিত্র সংবিধানের ২১নং অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জনগণের সেবার চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছে। এই সেবা তারা কতটুকু দিচ্ছে তা ভাববার সময় এসেছে।
আমরা প্রত্যাশা করব প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনগণের বন্ধু হিসেবে মিলেমিশে কাজ করবেন। এবং তাদের শিক্ষাদীক্ষায় বড় হওয়ার পরিচয়টা ভালো আচার ব্যবহারের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেবেন। প্রজাতন্ত্রের নিযুক্ত প্রতিজন মানুষের সহনশীল আচরণই পারে তাদের জনগণের কাছাকাছি নিয়ে যেতে। আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা জনগণ এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যে যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে তা একদিন মিটে যাবে। সব ধরনের জনগণ প্রজাতন্ত্রে নিযুক্তদের কাছ থেকে আন্তরিক সেবা পাবে।

রতন কুমার তুরী : লেখক এবং শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়