কাগজ প্রতিবেদক : আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে গতকাল ব্যাট হাতে ৩৮ বলে ৬৭ রানের মারমুখী ইনিংস খেলেন টাইগার ব্যাটার রনি তালুকদার। ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচে এসে এই ব্যাটার প্রথম ফিফটি দেখা পান। ওপেনিং জুটিতে লিটন দাসের সঙ্গে মিলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির পাওয়ারপ্লেতে নিজেদের সর্বোচ্চ ৮১ রানের রেকর্ড গড়েন রনি। বয়স কোন বিষয় না এটাই প্রমাণ করেন রনি। ৩২ বছর বয়সে দলে জায়গা করে নিয়ে সেটাই প্রমাণ করেন তিনি। আর গতকাল ৬৭ রানের মারমুখী ইনিংস খেলে জিতে নেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। বাংলাদেশি বোলারদের দাপটে আট ওভার শেষ হওয়ার আগেই জয় নিশ্চিত হয় টাইগারদের। এমন মুহুর্তে একটি বাউন্ডারি ঠেকাতে গিয়ে রিস্কি ডাইভ দেন ম্যাচ জয়ের নায়ক রনি তালুকদার। এই ডাইভের কারণে চোটে পড়ায় তিনি ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিজ হাতে গ্রহণ করতে পারেননি।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামে টাইগাররা। ওপেনিং করতে এসে শুরুতেই ঝড় তোলের দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার। লিটন ফিরলেও ২৪ বলে ফিফটি পূরণ করেন রনি। ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরিও করে ফেলতে পারেন এই ব্যাটার। তবে গ্রাহাম হিউমের বলে বোল্ড হয়ে ৩৮ বলে ৭ চার ৩ ছক্কায় ৬৭ রানে থামে তার ইনিংস। হিউমের ফুললেংথের বল পুরোপুরি মিস করে বোল্ড রনি তালুকদার। লিটনের সঙ্গে ৯১, নাজমুলের সঙ্গে ২৭ রানের পর শামীম হোসেনের সঙ্গে ৩৬ রানের জুটির পর থামেন রনি। ১৫৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টিতে এটি তার সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ২৪ রানের। এর আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২০১৫ সালে অভিষেক হয় তার।
দক্ষিণ আপ্রিকার বিপক্ষে সেই ম্যাচে করেন ২২ বলে ২১ রান। এরপর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দীর্ঘ আট বছর দেখা যায়নি এই তারকাকে। তবে বিপিএলে ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে ইংলিশদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে জায়গা হয় তার। ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে করেন ১৪ বলে ২১ রান। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট হাতে থিতু হতে পারেননি তিনি। খেলেন ১৪ বলে ৯ রানের ইনিংস। তবে শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে ২২ বলে ২৪ রানের ইনিংস উপহার দেন। সেই সুবাদে আইরিশদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও স্কোয়াডে জায়গা পান রনি। বিপিএলের নবম আসরে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১৩ ম্যাচ খেলে ১২৯ এর বেশি স্ট্রাইক রেট নিয়ে ৪২৫ রান করেন রনি। তার এই রান ছিল আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দল ফাইনালে খেলতে না পারলেও প্লে-অফে তুলতে দারুণ ভূমিকা রাখেন এই ব্যাটার। ফলে খুব সহজেই নজর কাড়েন তিনি। শুধু এই বিপিএলে নয় এর আগের আসরগুলোতেও ব্যাট হাতে রান পেয়েছেন রনি। তাছাড়া তার স্ট্রাইকরেটও ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া ঘরোয়া লিগেও নিয়মিতই রান করে আসছিলেন এই ওপেনার। বিপিএলে এই পারফরমেন্সের সুবাদে দীর্ঘদিন পরে জায়গা করে নেন জাতীয় দলে।
এখন পর্যন্ত শুধু টি-টোয়েন্টিতেই অভিষেক হয়েছে রনির। ৫টি টি-টোয়েন্টি খেলে ১২৯.০৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৪২ রান। লম্বা সময়ে অনেক উত্থান পতন গেছে রনির। কখনো পারফরমেন্স এসেছে, কখনো আসেনি। এর মাঝে হারিয়েছেন বাবাকে।
কিন্তু কখনো হাল ছাড়েননি ও হারাননি মনোবল রনি। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ডাক পেয়ে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারেননি রনি। জাতীয় দলে ফিরছেন রনি এই খবরটি তিনি পান নির্বাচক কমিটির সদস্য সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের ফোন কলে। ইংল্যান্ড সিরিজে দলে ডাক পাওয়ার পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘প্রত্যাশা তো ছিলই, সঙ্গে আমার প্রত্যয় ছিল যে আমি আবার জাতীয় দলে ফিরব। মাঝের সময়টায় আমি নিজেকে নিয়ে অনেক কাজ করেছি। ইমরান স্যারের সঙ্গে নিজের কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। অভিজ্ঞতার দিক থেকেও আমি অনেকটা বদলেছি। প্রথমে বাশার ভাই যখন আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন, মাকেই জানালাম প্রথমে। মায়ের বিশ্বাস ছিল আমাকে নিতে পারে।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটে বয়সের কারণে বাদ পড়া ক্রিকেটারদের ফেরা কঠিন হয়ে যায়। শাহরিয়ার নাফীস, তুষার ইমরান, নাইম ইসলামদের মতো ক্রিকেটাররা দিনের পর দিন পারফর্ম করেও জাতীয় দলের জন্য বিবেচিত হননি। সেখানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রনি। জাতীয় দলে ফেরা এই তারকা নারায়ণগঞ্জের একটি ক্রিকেট একাডেমিতে নিজের ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে যেহেতু ঘরোয়া ক্রিকেট নির্দিষ্ট সময়েই আয়োজিত হয়, তাই জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়ে বাড়তি যতœ নেয়াটা কঠিন হয়ে যায়। সব মিলিয়ে তার এই প্রত্যাবর্তন দলের জন্য আশীর্বাদ। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে আগামী বিশ্বকাপেও দলের অন্যতম ব্যাটার হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন তিনি। এছাড়া টি- টোয়েন্টির পাশাপাশি ওয়ানডে কিংবা টেস্টেও সুযোগ মিলতে পারে তার।