বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘সবুজ মানব প্রাচীর’ তৈরি করল জিএলটিএস

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়ায় জোটের মিশন

পরের সংবাদ

কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত নিয়ে পাল্টাপাল্টি হুমকি

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার বিপ্লব : প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে পারে মস্কো। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন ১৩ মাস পর প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র রাখার সিদ্ধান্তে ভবিষ্যতে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনার ইঙ্গিত পাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল। যদিও পুতিন বলেছেন, বেলারুশে পারমাণবিক হাতিয়ার রাখলে পরমাণু অপ্রসার সমঝোতা লঙ্ঘন হবে না।
কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের কোনো বৈশ্বিক সংজ্ঞা নেই। এগুলোর বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করা হয় অস্ত্রের সাইজ, পাল্লা এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পরিধির ভিত্তিতে। এগুলো সাধারণ বোমা থেকে কিছুটা বড় হয়। এই বোমা বিস্ফোরণে রেডিও অ্যাকটিভ বের হয় এবং বিস্ফোরণের বাইরে আরো মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্রগুলোকে নন-স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্রও বলা হয়। যেগুলো স্ট্যাটেজিক অস্ত্রের বিপরীত। যুক্তরাষ্ট্রের সংজ্ঞা অনুযায়ী, নন-স্ট্রেটেজিক অস্ত্র ‘শত্রæর যুদ্ধ তৈরি করার ক্ষমতা এবং যুদ্ধ করার ইচ্ছা’কে কমিয়ে দেয়। এই অস্ত্র অবকাঠামো, যাতায়াত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে দিতে পারে। ট্যাকটিক্যাল অস্ত্র তৈরিই হয়েছে সীমিত এবং তাৎক্ষণিক সামরিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য। তুলনামূলকভাবে স্বল্পপাল্লার এসব অস্ত্র বিমান থেকে ছোড়া বোমা এবং কামানের শেলের সঙ্গেও জুড়ে দেয়া যায়। এগুলো পারমাণবিক বোমার মতো সভ্যতা বিধ্বস্ত করে না, তবে নির্দিষ্ট দূরত্বে নির্দিষ্ট শহর বন্দর বা জায়গা ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। এগুলো কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে ছোড়ার জন্য বিশালাকৃতির ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল থেকে অনেক ছোট।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অ্যালেক্স গাতাপোলাস বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে কমান্ডারদের সহযোগিতার জন্য ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করা হয়েছে। সামরিক পরিকল্পনাকারীরা মনে করেছিলেন, স্বল্পপাল্লার ছোট অস্ত্র ট্যাকটিক্যাল ‘কৌশলগত’ পরিস্থিতিতে ব্যবহার উপকারী হবে। একটি ট্যাকটিক্যাল অস্ত্র কিলোটনের এক ভগ্নাংশ থেকে ৫০ কিলোটন পর্যন্ত শক্তিশালী হতে পারে। হিরোশিমা ধ্বংস করেছিল যে বোমা সেটি ১৫ কিলোটন শক্তিশালী ছিল।
যে কারণে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের এই ব্যবস্থা নিচ্ছেন পুতিন : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাাদিমির পুতিন বলেছেন, আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে সামরিক পারমাণবিক হাতিয়ার রাখার জন্য বেলারুশে মজুতকেন্দ্র তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হবে। তিনি এই পদক্ষেপের সপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে বর্তমানে তিনি শুধু তাই করতে চেয়েছেন। বেলজিয়াম, জার্মানি, গ্রীস, ইতালি, নেদারল্যান্ডস এবং তুরস্কে মার্কিনীরা বহু বছর ধরে পরমাণু অস্ত্র স্থাপন করে রেখেছে বলে বেলারুশে রাশিয়ান পারমাণবিক অস্ত্রের ন্যায্যতা রয়েছে। বেলারুশে রাশিয়ান পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন পুরোপুরি সূ² এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলছে। পুতিন ইউক্রেনে রাশিয়ান পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনকে মিত্র দেশগুলোতে সামরিক ঘাঁটিতে মার্কিন অস্ত্র মোতায়েনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। পুতিন যুক্তি দিয়েছেন যে, বেলারুশে তার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকেই অনুসরণ করছে।
বেলারুশের সীমানা : বেলারুশ একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। পূর্ব ও উত্তরপূর্বে রয়েছে রাশিয়া, দক্ষিণে ইউক্রেন, পশ্চিমে পোল্যান্ড আর উত্তর-পশ্চিমে লিথুয়ানিয়া ও ল্যাটভিয়া। বেলারুশের বাদবাকি প্রতিবেশী দেশগুলো ন্যাটো কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- রাশিয়ার চারপাশে একমাত্র বেলারুশের ওপরই রুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রাশিয়ার মজুতের পরিমাণ : পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২২ সালে পুতিনের হাতে ৫৯৭৭টি পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে ৫৪২৮টি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, রাশিয়ার হাতে যে ৫৯৭৭টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে, তার মধ্যে ১৫০০টি বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তা আক্রমণ চালানোর যোগ্য। এছাড়া ২৮৮৯টি পারমাণবিক অস্ত্র রিজার্ভ এবং ১৫৮৮টি সামরিক অস্ত্র হিসেবে মোতায়েন রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ৮১২টি ল্যান্ড-বেসড ব্যালিস্টিক মিসাইল, ৫৭৬টি সাবমেরিন-লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল বসানো আছে। ২০০টি পারমাণবিক অস্ত্র রাখা হয়েছে বোমারু ঘাঁটিতে।
প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, রাশিয়ার ১০টি পারমাণবিক-অস্ত্রযুক্ত পরমাণু ডুবোজাহাজ বা নিউক্লিয়ার সাবমেরিন রয়েছে যাতে ৮০০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং ৬০-৭০টি নিউক্লিয়ার বোমা বহন করা যায়। ¯œায়ুযুদ্ধের সময় রাশিয়ার হাতে ছিল ৪০,০০০টি ওয়ারহেড, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিল ৩০,০০০টি। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, আমেরিকা ১,৬৪৪টি সামরিক পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে। অন্যদিকে চীন, ফ্রান্স ও ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের হাতে রয়েছে যথাক্রমে ৩৫০, ২৯০ এবং ২২৫টি ওয়ারহেড।
পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা : ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর থেকে হাতেগোনা কয়েকটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে ১৯৯২ সালে। চীন ও ফ্রান্স ১৯৯৬ সালে, ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে এবং উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালে। রাশিয়ার শেষবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল প্রায় ৩৩ বছর আগে ১৯৯০ সালে।
রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে : স্ট্র্যাটেজিক হোক কিংবা নন-স্ট্র্যাটেজিক হোক, রাশিয়ার যে কোনো ধরনের পরমাণু বোমার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সে দেশের প্রেসিডেন্টের হাতে। তিনিই এ বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেন। তবে পরমাণু বোমা ব্যবহারের আগে প্রেসিডেন্ট অবশ্যই রাশিয়ান সিকিউরিটি কাউন্সিলের উচ্চপদস্থ সহযোগীদের পরামর্শ নেবেন। তারপরই ওয়ারহেড সংশ্লিষ্ট স্থানে পাঠানো হয় এবং নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
পশ্চিমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ : ইউক্রেন এবং পশ্চিমারা নতুন চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে পুতিনের ঘোষণার পর। বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের অর্থ হলো রুশ অস্ত্র তিনটি ন্যাটো দেশের দিকে তাক করা থাকবে। পুতিনের এই ঘোষণা এমন সময়ে এসেছে যখন পশ্চিমারা ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে। পোল্যান্ড এবং স্লোভাকিয়া ঘোষণা করেছে যে তারা ইউক্রেনে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান পাঠাবে। এর আগে যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে ক্ষয়প্রাপ্ত ইউরেনিয়ামযুক্ত আর্মার-পিয়ার্সিং রাউন্ড সরবরাহ করার ঘোষণা করেছিল।
আর্মগেডন ঝুঁকি : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুতিনকে বলেছেন, আপনি যদি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করেন তাহলে আপনি আর্মগেডন এর উত্তর পাবেন। আর্মগেডন হলো খ্রিস্টান গ্রন্থে উল্লেখিত ভালো এবং মন্দের মধ্যে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এবং প্রায়শই পৃথিবীকে ধ্বংস করবে এমন যুদ্ধ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। জো বাইডেন বলেছেন, পারমাণবিক ‘আর্মগেডন’ ঝুঁকি ১৯৬২ সালে কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়