বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘সবুজ মানব প্রাচীর’ তৈরি করল জিএলটিএস

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়ায় জোটের মিশন

পরের সংবাদ

আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা : কিছু আন্তর্জাতিক শক্তি দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র চায় না

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** রমজান মাসেও আন্দোলন কেন ** বাইরে নালিশ এবং কান্নাকাটি
করা বিএনপির চরিত্র **

কাগজ প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি সরকারে থাকতে আওয়ামী লীগের ওপর যে পরিমাণ অত্যাচার করেছিল, সরকারে এসে আমরা সেই পথে যাইনি। আমাদের নেতাকর্মীর ওপর তারা যে পরিমাণ অত্যাচার করেছিল, তার এক ভাগও যদি আমরা করি, তাহলে বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু আমরা তাদের ওপর কোনো অত্যাচার করিনি। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি জানি অনেক আন্তর্জাতিক শক্তি আছে, যাদের এ ধারাবাহিক গণতন্ত্র পছন্দ হয় না। আর আমাদের কিছু আঁতেল আছে তাদের তো পছন্দই না। তারা মনে করে, একটা অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের কদর বাড়ে। কারণ যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে, তাদের কিছু লোক হাতের

লাঠি লাগে বা খুঁটি লাগে। সেই লাঠি হতে পারছে না বলেই তাদের মনে খুব দুঃখ। তারা সবসময় দেশে এবং বিদেশে বদনাম তো করবেই, আবার দেশের মধ্যেও আজেবাজে লিখে যাচ্ছে যেন কিছুই নাকি হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের একেবারে তৃণমূল মানুষের কাছে যান, তাদের মধ্যে যে আস্থা ও বিশ্বাস আছে; সেটাই আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ভেতরে না, বাইরে গিয়ে নালিশ করা, কান্নাকাটি করা- এটাই তাদের চরিত্র। তারা মনে করে বিদেশ থেকে এসে কেউ তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। বাংলার মানুষ এখন অনেক সজাগ, অনেক সচেতন। জাতি যে লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, আমরা ২১ বছর পর যখন ক্ষমতায় আসি তখন আমরা অনেকগুলো কাজ করে বাংলাদেশকে একটা মর্যাদায় নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ২০০১ সালে আমরা সরকারের আসতে পারিনি। কেন পারিনি? বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রি করতে যদি আমি রাজি হতাম; আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধাই হতো না। কিন্তু দেশের মানুষের সম্পদ বেচে দিয়ে, আর দেশের মানুষের মুখ কালো করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে ক্ষমতায় যাবে- ওই রাজনীতি আমি করি না।
স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধ একটি জনযুদ্ধ ছিল। যারা ট্রেনিং নিয়ে দেশে এসেছে, দেশের মানুষকে তৈরি করেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাধা দিয়েছে। শুধু ট্রেনিংপ্রাপ্তরা নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও মাঠে নেমে গিয়েছিল। যে যেভাবে পেরেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটা গেরিলা যুদ্ধ। তাই গেরিলা যোদ্ধারা দেশে ঢুকলে মা-বোনেরা রান্না করে খাবার দেয়া, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের তথ্য দেয়া; সেই কাজগুলো করেছে। একটা জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পারভীন জামান কল্পনা ও এডভোকেট সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা হয়। সেই অবৈধ ক্ষমতা দখল মূলত লেবাস পরে ক্ষমতায় উত্তরণ। রাজনীতিকে গালি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে তারপর আবার সেই লেবাস খুলে নিজেরাই রাজনৈতিক হয়ে যাওয়া আর ক্ষমতা উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করা কালচারটাই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে। আজ সেই অবৈধভাবে ক্ষমতা দলখকারীদের হাতে তৈরি করা যে সংগঠন তারা (বিএনপি) নাকি গণতন্ত্র চায়! গণতন্ত্রের জন্য নাকি তারা লড়াই করে? তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি- তোদের জন্মটা কোথায়? উচ্চ আদালতই বলে দিয়েছেন যে জিয়া-এরশাদ এদের সবার ক্ষমতা দখল ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের আমল, এরশাদের আমল, খালেদা জিয়ার আমল। তারা (বিএনপি) নালিশ করে বেড়ায় তাদের ওপর নাকি খুব অত্যাচার করা হয়েছে। আরে অত্যাচার তো আমরা করিই নাই। অত্যাচার করেছে তো ওই বিএনপি-জামায়াত জোট। জিয়াউর রহমান এসে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার থেকে শুরু করে কয়েক হাজার মানুষকে, বিমানবাহিনীর অফিসারদেরকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। তাদের পরিবারগুলো তাদের লাশও পায়নি। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অগণিত নেতাকর্মী ধরে নিয়ে গেছে। জিয়ার আমলে ছিল সাদা মাইক্রোবাস, সেটিতে যে উঠছে সে আর কোনো দিন মায়ের কোলে ফিরে আসেনি। এইভাবে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তারা আর কোনো লাশও খুঁজে পায়নি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা তো তাদের মিছিল-মিটিং করতে দিচ্ছি। আওয়ামী লীগকে তো কোনোদিন মাঠেই নামতে দেয়নি। হাত কেটেছে, পা কেটেছে, চোখ তুলে নিয়েছে, পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বাড়ি-ঘর দখল করে সেখানে রাতারাতি পুকুর কেটেছে। সারা বাংলাদেশে তারা তাণ্ডব করে বেড়িয়েছে। আর তারা আসে গণতন্ত্রের ছবক দিতে? তাদের ওপর নাকি অত্যাচার হয়? ওরা যা আমাদের সঙ্গে করেছে তার যদি এক ভাগও আমরা করি তাহলে ওদের তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা তো সে পথে যাইনি, আমরা তো আর প্রতিশোধ নিতে যাইনি। ওরা যে অন্যায়গুলো করেছে আমরা মানুষের জন্য সেই ন্যায় বিচারগুলো করেছি, ন্যায়ের কাজ করে যাচ্ছি।
রমজান মাসে আন্দোলন করায় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্তত এই রমজান মাসে তো জনগণকে আন্দোলন থেকে নিস্তার দেন। দেশবাসীর নিশ্চয়ই মনে আছে, রমজান মাসে বেতন বাড়ানোর আন্দোলনে খালেদা জিয়া ১৭ শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। যারা রমজান মাসে মানুষকে গুলি করে হত্যা করে, তারা রমজান মাসের প্রতি সম্মান দেখাবে কী করে? তাইতো তারা এই মাসে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। পবিত্র রমজান মাস ও মানুষের দুর্ভোগের প্রতি তাদের কোনো অনুভূতিই নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো ইফতার পার্টি না করে, রমজান মাসে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘবের জন্য তাদের মধ্যে এই অর্থ ও খাবার বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়াটাই আমাদের অঙ্গীকার, আমরা এটা করছি। আওয়ামী লীগ যেটা বলে সেটা করে। স্বাধীনতার এই ৫৩ বছরে ২৯ বছর ছিল বাংলাদেশের কালো অধ্যায়। সেই কালো যুগ কেটে আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য নতুন সূর্যের আলো নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আলোর পথের যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ, সেই পথেই চলে যাবে। দেশের মানুষকে বলব, আওয়ামী লীগের প্রতি যে আশা ও বিশ্বাস নিয়ে চলেছে, সেই আশা ও বিশ্বাস নিয়ে যেন এগিয়ে যায়, কারো মিথ্যা কথায় যেন বিভ্রান্ত না হয়।
নিজ দলের নেতাকর্মীর প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। যে অবৈধ শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসেছিল- তাদের কোনো প্রেতাত্মা যেন আবার বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে না পারে, আবার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে- সে জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং দেশের জনগণ অতন্দ্র প্রহরীর মতো, সবাইকে সজাগ থেকে দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমরা ২০০৮ সালে নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছি, আবার ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আছি বলে ধারাবাহিক গণতন্ত্র রয়েছে, ধারাবাহিক উন্নয়ন রয়েছে। তাই আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্ব বলতে বাধ্য হয়, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এখান থেকে আর পেছনে হাঁটবে না। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়