১ মিনিট ‘ব্ল্যাকআউট’ : আলোর মিছিলে গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি

আগের সংবাদ

পাঠ্যবই কেলেঙ্কারি : গোয়েন্দা নজরদারিতে ৪ কর্মকর্তা

পরের সংবাদ

স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হচ্ছে সেই নজরখালি ফসল রক্ষা বাঁধ

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা : শেষপর্যন্ত সরকারি সহায়তা না পেয়ে, স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হচ্ছে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে নজরখালি ফসল রক্ষা বাঁধ। নির্মাণ না করায় হুমকির মুখে পড়েছিল জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসল। স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে নজরখালি বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেখানে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন প্রায় দুই শতাধিক স্থানীয়

কৃষক। তারা নিজস্ব অর্থায়নে বাঁশ, বস্তা দিয়ে বাঁধটি নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার যাদুকাটা, বৌলাই, রক্তি, পাটলাই ও পইকরতলা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। গত সপ্তাহে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে গত মঙ্গলবার থেকে এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আর এসব নদীর পানি বেশিরভাগ নজরখালি দিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করে। গত ২ মার্চ তারিখে দৈনিক ভোরের কাগজে ‘নজরখালি বাঁধ নিয়ে নাটকীয়তা, দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ৮২ গ্রামের কৃষকদের’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়া গত মাসের (ফেব্রুয়ারি) ২৮ তারিখে মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা বাজারে নজরখালী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাড়ে ৪ লাখ কৃষি পরিবারসহ এ জেলার ২৫ লাখ লোকের একমাত্র ফসল বোরো ধান রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ২০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওরের ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। জেলায় ১ হাজার ৭৮টি পিআইসির (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) মাধ্যমে ৭৪৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ-পুনর্নিমাণ, ২১৮টি ব্রিজ ক্লোজিং এবং বিকল্প ৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে টাঙ্গুয়ার হাওরের ভিতরে অবস্থিত নজরখালিতে বাঁধ নির্মাণ করতে আপত্তি জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, নজরখালি বাঁধ নির্মাণ করতে কৃষকদের সঙ্গে সেখানে অবস্থান করছেন মধ্যনগরের রংচী গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘গতবছর পানি উন্নয়ন বোর্র্ড (পাউবো) আট লাখ টাকা ব্যয়ে এই বাঁধ নির্মাণ করেছিল। কিন্তু প্রথম পর্যায়ের পাহাড়ি ঢলের চাপেই তা ভেঙে যায়। এতে প্রায় সাত হাজার একর কাঁচা বোরোধান চোখের পলকে তলিয়ে গিয়েছিল। এ বছর পরিবেশ রক্ষার অজুহাতে এই বাঁধটি নির্মাণ করা হয়নি। এখন কৃষকদের চাঁদার টাকায় বাঁশ ও বস্তা কিনে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সারাদিন কাজ শেষে দুই শতাধিক কৃষক বাঁধের পাড়েই খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম নজরখালি বাঁধটি পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় কৃষকদেও তিনি এ বাঁধ নির্মাণে আশ্বস্ত করেন। সেই সঙ্গে নজরখালি বাঁধসহ টাঙ্গুয়ার হাওরে তিন কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। কিন্তু হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড উপমন্ত্রীর নির্দেশনা মানেনি। এদিকে গতকাল রবিবার দুপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নজরখালি বাঁধের নির্মাণ কাজ দেখতে আসেন। তার সঙ্গে ছিলেন তাহিরপুরের ইউএনও সুপ্রভাত চাকমা। এছাড়াও মধ্যনগরের বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ, সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বাঁধ নির্মাণ কাজে কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
স্বেচ্ছাশ্রমে নজরখালি বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, ‘নজরখালি বাঁধ বরাবরই স্থানীয় কৃষকরা নির্মাণ করে। অবশ্য গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি নির্মাণ করেছিল। এ বিষয়ে বলার কিছু নেই। ‘নজরখালি ফসল রক্ষা বাঁধটির অবস্থান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায়। তবে তাহিরপুর ও পার্শ্ববর্তী মধ্যনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের বোরো ফসল রক্ষায় এই বাঁধটি গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় কৃষকদের মতে, নজরখালি বাঁধের আওতায় প্রায় নয় হাজার হেক্টর বোরো ফসলের জমি রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়