১ মিনিট ‘ব্ল্যাকআউট’ : আলোর মিছিলে গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি

আগের সংবাদ

পাঠ্যবই কেলেঙ্কারি : গোয়েন্দা নজরদারিতে ৪ কর্মকর্তা

পরের সংবাদ

বিরলে বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. দেলোয়ার হোসেন, দিনাজপুর থেকে : দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই জমিতে জৈব সারের প্রয়োগ, আগাছা দমন মালচিং পদ্ধতি ও পোকামাকড় দমনে ফেরোমন ট্র্যাপের ব্যবহার করে উপজেলার ধামইর ইউনিয়নের ৫০০ কৃষক-কৃষানি ২৫টি দলে নিরাপদ সবজি চাষ করছেন। দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরে অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় তার কার্যালয়ে এই তথ্য জানান।
প্রদীপ কুমার বলেন, চলতি মার্চ মাসে তিনি বেশ কয়েকদিন জেলার বিরল উপজেলার এসব বিষমুক্ত সবজি চাষে ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ওই উপজেলার ধামইর ইউনিয়নের কেশবপুর, মাটিয়ান, গিরিধরপুর, কাশিডাঙ্গা, গোবিন্দপুর এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বেগুনগাছগুলোতে উঁকি দিচ্ছে বেগুনি রঙের ফুল। পাতার আড়ালে বাজারে বিক্রির উপযোগী সবুজ রঙের বেগুন। লুনা, ভেনচুরা, নাড়িয়া, বুলবুলিসহ বিভিন্ন জাতের বেগুনের খেত। টমেটোগাছে ফুটে আছে হলুদ ফুল। এসব সবজি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই চাষ করতে কৃষকদের কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ ধরনের সবজি চাষ দিনাজপুর জেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে করতে কৃষকদের সহযোগিতা দেয়া হবে। বিরল উপজেলার পাইপপাড়া গ্রামের কৃষক ফজরুল রহমান জানান, মিষ্টিকুমড়া ও লাউয়ের লকলকে ডগায় সাদা-হলুদ ফুল বিষমুক্ত অবস্থায় এখন জমিতে শোভা পাচ্ছে। তার সবজি চাষের জমির পরিমাণ ২০ শতক। তবে তার গ্রামে অনেকে আরো বেশি পরিমান জমিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করেছেন। পৃথক জমিতে পৃথক শস্যের আবাদ হয় এ অঞ্চলে। কেউ লাগিয়েছেন বেগুন, টমেটো, চিচিঙ্গা, করলা। কেউবা লাউ, মিষ্টিকুমড়া। আছে শিম-পটোলের ক্ষেতও। প্রকল্প থেকে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নেয়ার জন্য প্রতিটি দলে একটি করে ভ্যান দেয়া হবে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন (১ম সংশোধিত)’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি বাংলাদেশের ২০টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিরল উপজেলা তার মধ্যে একটি। প্রকল্পের আওতায় শুরুতে সংশ্লিষ্ট কৃষকের মধ্যে জৈব সার, বীজ, মালচিং পেপার, ফেরোমন ট্র্যাপ, নেট, হলুদ আঠালো ফাঁদ সরবরাহ করা হয়েছে। তবে অল্প সময়ে উপকার পেয়ে অনেক কৃষক তাদের বাকি জমির মধ্যে নিজ খরচে বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু করেছেন। প্রায় ১০০ একর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, রমজান মাসে বাজারে বেগুন ও সবজির চাহিদা বেশি থাকে। ভালো দাম ও বেশি ফলনের আশায় কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তা নিয়ে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করেছি। জমিতে জৈব সার প্রয়োগের পাশাপাশি আগাছা দমনে মালচিং পদ্ধতি, পোকামাকড় দমনে ফেরোমন ট্র্যাপ, হলুদ আঠালো ফাঁদ বসানো হয়েছে। এবার নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি চাষ করে বাজারে গিয়ে গর্ব করে বলতে পারছি। তাছাড়া বাজারে বিষমুক্ত সবজির চাহিদা এবং দামও বেশি। মানুষকে নিরাপদ সবজি খাওয়াতে পেরে অন্তরে আনন্দ পাই। আগে সপ্তাহে দু-তিনবার কীটনাশক ছিটাতাম। ফাঁদ দেয়ার পরে সেই খরচটা বেঁচে গেছে। আগে সেচ দিতে হতো সপ্তাহে অন্তত একবার। এখন সেখানে মাসে দুবার সেচ দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে নিড়ানি খরচ কমেছে। আগের নিয়মে আবাদ করলে ২০ শতকে খরচ পড়ত ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা। এখন সেখানে খরচ হচ্ছে ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকা। ঠিকমতো ফলন হলে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কেজি বেগুন পাব। রমজানে বেগুনের চাহিদা বেশি। পাইকারিতে সর্বনি¤œ ২৫ টাকা কেজি দর পেলে লাভ থাকবে ৬৫-৭০ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, নিরাপদ সবজি চাষ প্রকল্পে সফলতা দেখা যাচ্ছে। রবি মৌসুমে কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সার-বীজ ও কিছু উপকরণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। পরে কৃষকরা নিজে থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিরাপদ সবজি চাষ শুরু করেছেন। তারা জৈব সারও উৎপাদন করছেন। ধামইর ইউনিয়নে কৃষকদের নিয়ে ২৫টি দল করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়