১ মিনিট ‘ব্ল্যাকআউট’ : আলোর মিছিলে গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি

আগের সংবাদ

পাঠ্যবই কেলেঙ্কারি : গোয়েন্দা নজরদারিতে ৪ কর্মকর্তা

পরের সংবাদ

তিন বছরের প্রকল্প ১৩ বছরে : খরচ বেড়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা > খুলনা-মোংলা রেলপথের উদ্বোধন জুন-জুলাইয়ে

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এন রায় রাজা : প্রকল্প গ্রহণের ১৩ বছর পর অবশেষে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পথে। ২০১০ সালে এটি একনেকে পাস হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আরিফুজ্জামান। গতকাল শনিবার তিনি ভোরের কাগজকে একথা জানিয়ে বলেন, রূপসা রেল সেতুর কাজও শেষের পথে। আর চলতি বছরের জুনে না হলেও জুলাই মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েক দফা পিডি পরিবর্তন, ডিজাইনে ত্রæটি এবং সময় বাড়ানোর ফলে প্রকল্প ব্যয় অনেকাংশে বেড়ে গেছে। কাজে ধীরগতির কারণে ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকারও বেশি। দফায় দফায় প্রকল্প সংশোধনের ফলে ব্যয় বাড়ছে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি, ৩ বছরের প্রকল্প ১৩ বছর ধরে চলছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পটি অনেক আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নতুন প্রকল্প হলে যা হয়, নতুন নতুন এলাকায় নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়। তবে সেগুলো মোকাবিলা করে আমরা কাজ যথাসম্ভব এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। তাছাড়া রূপসা নদীর উপর রেল ব্রিজের ডিজাইনে কিছু ত্রæটি থাকায় তা সংশোধন করতে হয়েছে। এখানেও সময়ক্ষেপণ হয়েছে।
তিনি বলেন, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ২০১০ সালে একনেকে পাস হয়, এটি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, করোনা পরিস্থিতি, জলাভূমিতে মাটি ভরাটসহ নানা সমস্যার কারণে এটি শেষ করতে সময় লাগছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৯৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, ১০-১২ কিলোমিটারের কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে। তবে জুনের মধ্যে পুরো রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে আমরা এগোচ্ছি।
তিনি বলেন, দুই দফায় ডিপিপি সংশোধনের পর প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ২ হাজার ৯৪৮ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। বাকি ১ হাজার ৩১২ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সরকারি ফান্ড থেকে ব্যয় হয়েছে। রেলপথটি চালু হলে মোংলা বন্দরে অর্থনৈতিভাবে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।
প্রকল্পটি শেষ হতে কেন এত বিলম্ব- এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফুজ্জামান বলেন, স্পেসিফিক কোনো কারণ বলতে চাই না, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। এখন সেগুলো মোকাবিলা করে প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে। ছোটখাটো কিছু কাজ বাকি আছে, সেগুলো করছি। রূপসা নদীর উপর রেলব্রিজের কাজও প্রায় শেষের পথে। সেতুর ডিজাইনে কিছু ত্রæটি ছিল, সেটা কিছুদিন আগে সংশোধন হয়েছে। তবে যতক্ষণ প্রজেক্ট কমিশন না হয় ততক্ষণ বলা যাবে না কাজ শেষ হয়েছে। এখন মনে করছি জুন বা জুলাইয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এটা যেহেতু ভারতীয় এলওসির (লোন অব ক্রেডিট) কাজ সেহেতু ভারতীয় ইরকন ইন্ডিয়া লিমিটেড রেলপথের কাজটা করছে। আর লার্সেন এন্ড ট্রুবো (এলএটি) রূপসা রেল ব্রিজের কাজ করছে। ইরকনের পক্ষে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পরিচালক বলরাম দে বলেন, এ প্রকল্পের রেললাইন, টেলি কমিউনিকেশন, সিগন্যালিং ও রূপসা নদীতে সেতু নির্মাণসহ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অবকাঠামোর সব কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ছিল। রূপসা নদীতে স্প্যান স্থাপন ছিল বেশ চ্যালেঞ্জ। সেসব মোকাবিলা করেই শেষ হয়েছে এ প্রকল্পের কাজ, যার ফলে বিলম্ব হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এর আয়ুষ্কাল ১০০ বছরেরও বেশি হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বিগত ২০১০ সালে অনুমোদন করে। কয়েকবার পিডি পরিবর্তন, সময় বর্ধনের সঙ্গে সঙ্গে অর্থ ব্যয়ও কয়েক দফা বেড়ে যায়। প্রকল্পটি ৩টি ভাগে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ : রেললাইন নির্মাণ, প্যাকেজ-২ : রূপসা নদীর উপর রেলসেতু ও

প্যাকেজ-৩ : টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং সিস্টেম। এসব প্রকল্পের আওতায় মূল লাইনসহ রেলওয়ে ট্রাকের দৈর্ঘ্য ৯২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। আর রূপসা নদীর উপর নির্মাণ করা হচ্ছে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রূপসা রেলসেতু। আর কিছু লুপ লাইনও রয়েছে।
তিনি জানান, এরই মধ্যে ওই সেতুর কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে। তাছাড়া ৩১টি ছোট-বড় সেতুর কাজও শেষ। আর ১০৭টি কালভার্টের মধ্যে ১০৫টির কাজও শেষ হয়েছে। ৯টি ভিইউপির নির্মাণকাজ এবং ২৯ এলসি গেটের ২৬টি কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়া ৭টি স্টেশন বিল্ডিংয়ের মধ্যে ফুলতলা, আড়ংঘাটা ও মোহাম্মদ নগরের কাজও শেষ হয়েছে। বাকি ৫টি স্টেশনের মধ্যে কাটাখালি ৮০ শতাংশ, চুলকাঠি ৭০ শতাংশ, ভাগা ৭২ শতাংশ, দিগরাজ ৯৮ শতাংশ ও মোংলা স্টেশন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রেলপথটি চালু হলে মোংলা বন্দরসহ পুরো এলাকায় অনেক পরিবর্তন আসবে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য এটা খুবই সুখবর যে আগামী জুনে এটির উদ্বোধন করব আমরা। একইসঙ্গে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপ্রকল্প এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। তবে খুলনা-মোংলা রেলপথটি শেষ হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা যুক্ত হবে। একইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে মোংলা থেকে সরাসরি যাত্রীবাহী বা পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এর ফলে বাণিজ্যের এক নতুন দুয়ার খুলে যাবে। আর রেলপথটি চালু হলে প্রত্যন্ত অঞ্চল মোংলাসহ ওই অঞ্চলের এলাকাবাসীর যাতায়াতের জন্য এটি একটি মাইলফলক হবে।
এদিকে রেলপথটি চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছেন পুরো এলাকাবাসী, সেখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। খুলনা থেকে নদী-খাল-বিল পেরিয়ে অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের বুক চিরে এ রেলপথ সরাসরি খুলনা থেকে মোংলাকে যুক্ত করছে। এমনকি মোংলা থেকে খুলনা হয়ে বন্ধন এক্সপ্রেস করে ভারতের কলকাতাও যাতয়াত করতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা। এ রেলসেবা চালু হলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে, বাড়বে পর্যটকের সংখ্যা। রেলপথ না থাকার কারণে এতদিন মোংলা বন্দরের বড় বড় কন্টেইনার পরিবহনের সমস্যা হতো। এছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে পর্যটক পরিবহনও সহজ হবে। দীর্ঘ ৭৩ বছর পর মোংলা সমুদ্রবন্দরে রেলপথ যুক্ত হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়