মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : দাম্পত্য কলহের জেরে ও সম্পত্তির লোভে স্বামী মো. এমদাদুল হককে (৪৮) হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী নারগিস মোস্তারী (৪০)। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২১ মার্চ বিকাল সাড়ে ৫টায় সেমাইয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে মো. এমদাদুল হককে অচেতন করেন তিনি। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রæতিতে স্থানীয় আইয়ুব আলীর সহায়তায় স্বামীর হাতে জিআই তার পেঁচিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে এমদাদুল হকের মৃত্যু নিশ্চিত করেন স্ত্রী নারগিস মোস্তারী। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন নারগিস মোস্তারী ও মো. আইয়ুব আলী।
গত ২২ মার্চ রাতে এমদাদুল হককে হত্যার ঘটনায় স্ত্রী নারগিস মোস্তারী ও মো. আইয়ুব আলীকে আসামি করে মিরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৩) দায়ের করেন তার ছোট ভাই কামাল পাশা। নারগিস মোস্তারী উপজেলার ১৬নং সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরের বাজার গ্রামের আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে। মো. আইয়ুব নবী প্রকাশ আইয়ুব আলী প্রকাশ আলী (২২) নোয়াখালী জেলার চরজব্বর থানার চরভাটা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি বর্তমানে মিরসরাইয়ের সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরের বাজার গ্রামের আলী চৌধুরী বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
জবানবন্দিতে নারগিস মোস্তারী বলেন, বিগত ১ বছর আগে আবুধাবি থেকে দেশে আসেন স্বামী এমদাদুল হক। পারিবারিক জীবনে তাদের নাহিয়ান (১৯) ও নামিয়ান (৮) নামে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বামীর সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো।
দাম্পত্য কলহের জেরে ও সম্পত্তির লোভে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। হত্যাকাণ্ডে সহায়তার জন্য ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মো. আইয়ুব নবীকেও সঙ্গে নেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২১ মার্চ বিকাল সাড়ে ৫টায় সেমাইয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মো. এমদাদুল হককে অচেতন করেন তিনি। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আইয়ুব আলীর সহায়তায় স্বামীর হাতে জিআই তার পেঁচিয়ে কারেন্টের তার দিয়ে শক দিয়ে এমদাদুল হকের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। রাত ১০টায় আইয়ুব আলী নিজ বাড়ি সাহেরখালী চলে যান। মঙ্গলবার রাত ২টায় নারগিস মোস্তারী তার দেবর কামাল পাশাকে ফোন দিয়ে বলেন তার ভাই বৈদ্যুতিক শক খেয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরসরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এমদাদুল হকের মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে তার লাশ। তার বাম হাতে পোড়া চিহ্ন এবং নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। পিঠেও কালচে দাগ ছিল। স্ত্রীর কথায় সন্দেহ হওয়ায় অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করি। পরবর্তীতে তিনি স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। হত্যাকাণ্ডে আইয়ুব আলী নামে আরো একজন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি। তার দেয়া ঠিকানা মতে বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরবাজার এলাকা থেকে আইয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইয়ুব আলী পেশায় দিনমজুর। হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করলে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন নারগিস মোস্তারী। কথামত স্বামী এমদাদুল হককে হত্যার পর নগদ ৫০০ টাকা আইয়ুব আলীকে দেন নারগিস মোস্তারী। স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পত্তি বিক্রি করে বাকি টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। আইয়ুব আলীর সঙ্গে বাবার বাড়িতে ঘরের কাজ করানোর সময় পরিচয় হয় তার (নারগিস মোস্তারী)। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিআই তার, মাল্টিপ্ল্যাগ, প্লাস ও আইয়ুব আলীর কাছে থাকা ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া নারগিস মোস্তারী ও আইয়ুব আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার বাদী কামাল পাশা বলেন, সম্পত্তির লোভে আমার ভাইকে হত্যা করেছেন ভাবি। অচেতন করে আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভাইয়া এক বছর আগে আবুধাবি (ইউএই) থেকে বাড়িতে আসেন। ভাবি সবসময় বাবার বাড়িতে থাকতে চাইত এবং উনার বাবার বাড়ির এলাকায় ভাইয়াকে বাড়ি করতে বলত। ভাইয়া রাজি না থাকায় প্রায় সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। সেজন্য ভাইয়াকে এভাবে মেরে ফেলবে কখনো চিন্তাও করতে পারিনি। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
মিরসরাই থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, দাম্পত্য কলহ ও সম্পত্তির লোভে স্বামী এমদাদুল হককে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী নারগিস মোস্তারী। হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেন আইয়ুব আলী নামে আরেকজন। তারা দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বিজ্ঞ আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।