সিপিডির সংবাদ সম্মেলন : নবায়নযোগ্য জ¦ালানি নীতি বাস্তবায়নে বড় বাধা দুর্নীতি

আগের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্মার্ট বাংলাদেশ : মতিয়া চৌধুরী, সংসদ উপনেতা

পরের সংবাদ

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২৩ : আ.লীগে খালেক নাকি বিথার, বিএনপি নীরব

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাবুল আকতার ও শেখ ইমন, খুলনা থেকে : এ বছরের জুন থেকে হতে পারে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক মাঠে নেমে পড়েছেন। এদিকে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের বোন ও শহীদ ইকবাল বিথারের স্ত্রী অধ্যাপক রুনু ইকবাল বিথার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মী নির্বাচনী কোনো আলোচনায়ই নেই। এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের চেয়ে ৩১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা রংয়ের পোস্টার-ব্যানার সাঁটানো শুরু করেছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, প্রথম সভা থেকে পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের মেয়াদ ধরা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ২০১৮

সালের ১৫ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ওই বছরের ১১ অক্টোবর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুযায়ী আগামী ১৩ এপ্রিল থেকে খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান ও মো. আলমগীর হোসেন জানান, আগামী জুনে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হতে পারে। এদিকে দুজন নির্বাচন কমিশনারের এমন ঘোষণার পরপরই মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও ৩১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাইয়ের ছেলে শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল ২০২২ সালের ২১ জুলাই একটি অনুষ্ঠানে মেয়র প্রার্থী হিসেবে তালুকদার আব্দুল খালেকের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। এর পরপরই খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশসহ নানা অনুষ্ঠানে তালুকদার আব্দুল খালেককে ভোট দিয়ে পুনরায় মেয়র পদে নির্বাচিত করার জন্য নেতাকর্মীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, চলতি মার্চ মাসে খুলনায় সফর করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। এ সময় জনসভার মাধ্যমে তালুকদার আব্দুল খালেককে মেয়র প্রার্থী হিসেবে তার পরিচয় করিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সফর পিছিয়ে গেছে। এদিকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের বোন ও শহীদ ইকবাল বিথারের স্ত্রী অধ্যাপক রুনু ইকবাল বিথার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
খুলনা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চেলের রাজনৈতিক অভিভাবক বঙ্গবন্ধুর ভাইয়ের ছেলে শেখ হেলালউদ্দিন জানিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের খুলনায় এবারো মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। খুলনা-২ আসনের এমপি শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলও এর মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন। সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সব নেতাকর্মীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাবুল রানা আরো বলেন, নির্বাচনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ওয়ার্ড পর্যায়ে আমরা প্রার্থী মনোনয়ন দেব। একই ওয়ার্ডে দলের একাধিক প্রার্থী যেন না হন। আমাদের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনের জন্য তা ভালো হবে।
এবারের কেসিসি নির্বাচন সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে বিএনপি। তাদের নেতাকর্মী নির্বাচনী কোনো আলোচনায়ই নেই। স্থানীয় ভোট নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই বললেই চলে। নানাবিধ আন্দোলন আর দলীয় কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত বিএনপির নেতাকর্মী। এ কারণে আগামী নির্বাচনে বর্তমান মেয়রের প্রতিদ্ব›দ্বী কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী না থাকায় তালুকদার আব্দুল খালেকের পথ অনেকটাই পরিষ্কার।
খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, বিএনপি সব সময় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না- এই সিদ্ধান্তে দলীয় নেতাকর্মী অটল আছে। ফলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে দল যদি কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রার্থী মনোনীত করে, তখন নির্বাচনের মাঠে নামব। আপাতত কেসিসি নির্বাচন নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলনসহ দলীয় কর্মসূচি নিয়েই দলীয় নেতাকর্মী এখন ব্যস্ত আছে।
এদিকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রাতে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নগর ও জেলা কমিটির যৌথ সভায় মেয়র প্রার্থী হিসেবে নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলের মুখপাত্র শেখ মো. নাসিরুদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি কাউন্সিলর পদেও গোটা দশেক প্রার্থী থাকতে পারেন।
অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। জাতীয় পার্টির খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি শফিকুল আলম মধু জানান, জাতীয় পার্টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে দলীয়ভাবে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনীত করবে। সেই ক্ষেত্রে তিনি নিজে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন।
সিপিবির মেয়র প্রার্থী হিসেবে এবারো মিজানুর রহমান বাবুর নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক এমপি আব্দুল গফফার বিশ্বাস ও গণ-অধিকার পরিষদের তামান্না শিখা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নাগরিক ফোরামের প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (আনারস প্রতীক) ১ লাখ ৮১ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক পান ১ লাখ ২০ হাজার ৫৮ ভোট। তখন খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোটার ছিল ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন, সংরক্ষিত ১০টি মহিলা আসনে ৪৫ জন ও ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩৬ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন।
২০১৮ সালের ১৫ মে কেসিসি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন নগর সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন সাবেক এমপি, সাবেক নগর সভাপতি ও বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ২০২২ সালের নভেম্বর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর কমিটি থেকে বাদ পড়েন সাবেক নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়