সিপিডির সংবাদ সম্মেলন : নবায়নযোগ্য জ¦ালানি নীতি বাস্তবায়নে বড় বাধা দুর্নীতি

আগের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্মার্ট বাংলাদেশ : মতিয়া চৌধুরী, সংসদ উপনেতা

পরের সংবাদ

ঐতিহ্যবাহী খাবারে জমজমাট চকবাজারের ইফতার বাজার

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : আস্ত কোয়েল রোস্ট, আস্ত কবুতর রোস্ট, আস্ত মুরগির রোস্ট, খাসির রান রোস্ট। শিক কাবাব, জালি কাবাব, মুঠি কাবাব। হালিম, দই বড়া, শাহী জিলাপি। সবকিছু থরে থরে সাজানো। হাঁক ডাকে বিক্রেতারা। ইফতারের জন্য এসব খাবার কিনতে ভিড় জমান ক্রেতারা। রমজানের প্রথম দিনে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতার বাজারের চিরচেনা চিত্র এটি। এ বছর ইফতারি এসব খাবারের দাম বেশি হলেও যেন অভিযোগ নেই কারো। পছন্দের ইফতারি খাবার কিনতে ভিড় জমান ঢাকার নানা স্থান থেকে আগত ক্রেতারা।
গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগেই চকবাজার শাহী মসজিদের সামনে বাহারী ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। শুধু শাহী মসজিদ নয়, পুরান ঢাকার সব অলিগলিতে ঐতিহ্যবাহী ইফতারি খাবারের দোকান বসে। এদিকে জুম্মার নামাজ পড়ে প্রথম রমজানের ইফতার কেনা শুরু করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, পুরান ঢাকার নানা বাহারী ও ঐতিহ্যবাহী খাবার। মো. মিলন ২৫ বছর ধরে চকবাজার শাহী মসজিদের সামনে নানা প্রকার ইফতারি খাবার বিক্রি করেন। এ বছর তিনি আস্ত ব্রয়লার মুরগির রোস্ট ৩০০ টাকা, আস্ত ছোট কোয়েল রোস্ট ৮০ টাকা, বড় কোয়েল রোস্ট ১০০ টাকা, ছোট মুরগি রোস্ট ২০০ টাকা, চিকেন ড্রাম স্টিক ৭০ টাকা, চিকেন সাসলিক ২৫ টাকা, আস্ত মুরগির গ্রিল ৪০০ টাকা, শাহী পরোটা ৩০ টাকা, শাহী টিকা ৩০ টাকা করে বিক্রি করছেন।
মিলন ভোরের কাগজকে বলেন, আমার বাপ-দাদারা আগে ইফতারি বিক্রি করত। আমি এখন ছোট

ভাইদের নিয়ে করছি। রমজানের সময় ইফতারি বিক্রি আমাদের মৌসুমি ব্যবসা। অন্য কাজও করি। ৩০ হাজার টাকার ইফতারি এনেছি। ৫-৬ হাজার টাকার মতো লাভ হতে পারে। খাবারের দাম গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। কোয়েল গত বছর ৬০ টাকা ছিল, এ বছর ৮০ টাকা। মুরগির রোস্টের দাম ৫০ টাকা বেড়েছে।
অন্যদিকে ১৮ বছরের স্কুল ছাত্র সামি হককে দেখা গেল সুতি কাবাব বিক্রি করতে। তিনি বলেন, আমরা ৭টি দোকানে দেড় মন সুতি কাবাব এনেছি। ১৪০০ টাকা করে কেজি। প্রায় সব বিক্রি হয়ে গেছে। এছাড়া আস্ত মুরগি রোস্ট, কোয়েল রোস্ট ও চিকেন সাসলিক এনেছি। সব বিক্রির পথে। বাপ দাদার ব্যবসা আমাদের। রমজানের সময় শাহী মসজিদের সামনেই বিক্রি করি। এবার দাম একটু বেশি। গত বছর সুতি কাবাব ১২০০ টাকা ছিল। এবার সব জিনিসের দাম বেশি। তবুও সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
চকবাজারে বড় বাপের পোলায় খায় বিক্রি করছিলেন মোহাম্মদ হোসেন। বিক্রির ব্যস্ততায় কথা বলারও সময় নেই তার। তার ভাই মোহাম্মদ জুয়েল ভোরের কাগজকে বলেন, ৭৩ বছর ধরে এ খাবার আমরা বিক্রি করে আসছি। এ খাবার সবাই পছন্দ করে বলেই যুগ যুগ ধরে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত বছর বড় বাপের পোলা ছিল ৬০০ টাকা কেজি। এ বছর ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আজ ৪-৫ মন বড় বাপের পোলায় খায় এনেছি। এছাড়া সুতি কাবাব, আস্ত মুরগি ও কোয়েল এনেছি। বিক্রি প্রায় শেষ।
চকবাজারে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের দই বড়া। এমনই একজন বিক্রেতা মো. আলী হোসেন বলেন, দই বড়ায় রয়েছে অনেক শক্তি। তাই সারাদিন রোজা থাকার পর সবাই দই বড়া খোঁজে। ৫ পিচের দই বড়া ২০০ টাকা। টক, মিস্টি, ঝাল স্বাধের নানা দই বড়া রয়েছে।

এদিকে চিকেন ফ্রাই ৭০ টাকা, চিকেন এক রান গ্রিল ১৩০, ফিরনি ২০ থেকে ৩০ টাকা, গরুর কোপ্তা ৪০ টাকা, চিকেন কোপ্তা ৩৫ টাকা, টিকেন টিক্কা ৬০ টাকা, চিকেন ঝালি কাবাব ৩০ টাকা, চিকেন সমুচা ২৫ টাকা, চিকেন রোল প্যাটিস ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বড় বড় শাহী জিলাপি ৩০০ টাকা কেজি ও মুড়ি ১৮০ করে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
চকবাজারে ইফতার কিনতে আসা আজিম উদ্দিন বলেন, প্রথম রমজানে চকবাজারের ইফতার কিনতে এসেছি। সুতি কাবাব, হালিম ও শাহী জিলাপী কিনেছি। আর কিছু খাবার কিনব। দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি। বেশি হওয়ারই কথা। সব জিনিসের এমনিতেই দাম বেশি।
এদিকে শুধু চকবাজারে স্থানীয়রা নয়, ইফতার কিনতে এসেছেন উত্তরা, বনানী ও মিরপুর থেকেও। উত্তরা থেকে চকবাজারে ইফতার কিনতে আসা মালিহা সুলতানা বলেন, চকবাজারে শুনেছি বিখ্যাত খাবার পাওয়া যায়। তাই প্রথম রমজানে এসেছি। হালিম আমাদের পরিবারের খুব প্রিয়। সঙ্গে সুতি কাবাব, চিকেন সাসলিক, চিকেন ঝালি কাবাব, পেঁয়াজু, মাঠা ও ছোলা-বুট কিনেছি।
এদিকে গতকাল চকবাজারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। অভিযান পরিচালনার সময় সংস্থাটির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুমন মজুমদার বলেন, রমজানে আমরা মাসব্যাপী অভিযান পরিচালনা করব। তবে আজ প্রথমদিনে কোনো জরিমানার ঘটনা ঘটেনি। আমরা নির্দেশনাগুলো মানার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছি সবাইকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়