প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা : রাখী দাশ পুরকায়স্থ ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক

আগের সংবাদ

বধ্যভূমি দেখার দায়িত্ব কার : সারাদেশে ৫ হাজারের বেশি বধ্যভূমি, ২২ বছরে ২০টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ হয়েছে

পরের সংবাদ

ফরিদপুরে ৭টি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ > বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে ঘৃণা করো : ও.কাদের

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মশিউর রহমান খোকন, ফরিদপুর প্রতিনিধি ও বিভাষ দত্ত, ফরিদপুর শহর প্রতিনিধি : কথা কর্তৃত্ব করে, কথা নেতৃত্ব দেয়, সবার কথা কর্তৃত্ব করে না, সবার কথা নেতৃত্ব দেয় না। আজ আমরা সেই মানুষটির কথা বলব যার কথা সাড়ে ৭ কোটি স্বাধীনতাপাগল বাঙালিকে উজ্জীবিত করেছিল স্বাধীনতার মন্ত্রে। তখন এই মানুষটির বয়স ছিল ৫৪ বছর ৬ মাস ৭ দিন আর ওই বয়সেই তিনি ৪ হাজার ৬৮৩ দিন জেল খেটেছিলেন। জন্মদিবসে তিনি বলেছিলেন, আমার জন্ম আর মৃত্যু কিসের, আমার জনগণই আমার জীবন। এই ছিলেন আমাদের বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ৭টি ভাষায় উপস্থাপন এবং বঙ্গবন্ধুর ভাষণ উৎসবের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে একথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ফরিদপুর শেখ জামাল স্টেডিয়ামে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, হাজার বছর আমরা পরাধীন ছিলাম। আমাদের পূর্বপুরুষরা রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে। বাংলার মাটি বারবার রঞ্জিত হয়েছে। এখানে ক্ষুদিরাম ফাঁসির মঞ্চে স্বাধীনতার জয়গান গেয়ে গেছেন। এখানে সূর্যসেন ফাঁসির মঞ্চে গেছে। এই বাংলায় তিতুমীর বাঁশের কেল্লা তৈরি করে বিদ্রোহ করেছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। হাজার বছর পর এই বৃহত্তর ফরিদপুরের টুঙ্গিপাড়ায় মধুমতি তীরে এক বীর মা তাকে জন্ম দিয়ে আমাদের ধন্য করেছেন। তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের পরাজয়, অপমান, রক্তের প্রতিশোধ নিয়ে ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে যুক্ত করেছিলেন এই দেশ। যে মহামানবের জন্ম না হলে আজকে সবুজের পটভূমিতে লাল সূর্যের পতাকা পতপত করে উড়ত না, যে মহামানবের ৭ মার্চের ভাষণ জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল তিনি হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্বাসঘাতকরা, মীরজাফররা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। তিনি আজ টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তিনি এখনো বাংলার সফল বহতা নদী, তিনি বঙ্গবন্ধু। যতদিন বাংলাদেশ আছে, যতদিন পাখিরা গান গাইবে, চন্দ্র-সূর্য উদয় হবে, যতদিন বাংলার নদীর কলতান থাকবে, যতদিন বাংলায় সমুদ্রের গর্জন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নেই।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, অনন্য অসাধারণ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। ৭টি ভাষায় শিশু-কিশোররা উচ্চারণ করেছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। এরকম একটি অনুষ্ঠানের কথা শুনেই আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছিলাম। বক্তৃতা করার জন্য নয়, বক্তৃতা শিশুরাই করেছে। তিনি বলেন, বক্তৃতা অনেক করেছি, প্রতিদিনই করি। আজ বক্তৃতা শুনতে এসেছি। ৭ ভাষায় অসাধারণ উচ্চরণে আমাদের বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা করে গেল। এটা আমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসিয়ে রেখেছিল। আমি অখণ্ড মনোযোগে শুনছিলাম বাচ্চাদের সেই বিভিন্ন ভাষায় উচ্চারিত জাতির পিতার সর্বকালের অন্যতম সেরা ভাষণ।
ওবায়দুল কাদের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা কি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসো? যদি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসো তাহলে দুর্নীতিকে ঘৃণা করো, সন্ত্রাসকে ঘৃণা করো, ভেজালকে ঘৃণা করো, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে ঘৃণা করো, জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করো।
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, যেসব ভাষায় ৭ মার্চের ভাষণ অনুবাদ করা হয়েছে, আমরা দেখেছি সেইসব ভাষায় ওই শব্দগুলো নেই। করুণ ইতিহাস, মুমূর্ষু আর্তনাদের ইতিহাস, আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিতের ইতিহাস- শব্দগুলো ওই সব ভাষায় নেই। ‘আর যদি একটা গুলি চলে’ এমন শব্দমালা ওই সব ভাষায় উচ্চারিত হয়নি। ছাত্র-ছাত্রীদের ওই সব ভাষা মুখস্ত করতে, আত্মস্থ করতে প্রচুর সময় ব্যয় করতে করছে। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ অনুধাবন করার জন্য, ৭টি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারের আগেই আমরা আশা করব আমাদের এই কর্মকাণ্ড আপনার মাধ্যমে সাড়া বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। আমরা আশা করব- ৭ মার্চের ভাষণের দিনটি বাংলাদেশের ভাষণ দিবস ও আর্ন্তজাতিক ভাষণ দিবস প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়া হোক। আজকের এই ভাষণ অনুষ্ঠান সারা বাংলাদেশে মডেল হিসেবে ফরিদপুর উপস্থাপিত হবে।
ভাষণ উৎসবে ইংরেজি, হিন্দি, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, ফার্সি, আরবি ও চাইনিজ ভাষায় ৭ মার্চের ভাষণ উপস্থাপন করা হয়। ভাষণ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক আরিফ, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, ফরিদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ভাষণ উৎসবের পুরস্কার তুলে দেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়