মানবতাবিরোধী অপরাধ : দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে চারজনের আপিল

আগের সংবাদ

ঝিকরগাছা : বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল পরিদর্শন করলেন উপসচিব

পরের সংবাদ

শওকত মাহমুদকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কেন বিএনপির! : সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘রাজনীতিবিদরা যদি ব্যর্থ হন, তাহলে পেশাজীবীরা গণ অভ্যুত্থানের দায়িত্ব নেবেন’ বছর দুয়েক আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদের এমন বক্তব্যে ঘোর সন্দেহ দানাবাঁধে দলটিতে। এর জের ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে পেশাজীবী এই নেতাকে দুইবার শোকজ করা হয়। শওকত মাহমুদ সেই শোকজের জবাব দিলেও সন্দেহের রেশ কাটেনি বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। সর্বশেষ ইনসাফ কমিটি পুনর্গঠনের জেরে গতকাল মঙ্গলবার শওকত মাহমুদকে বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো দলটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় শওকত মাহমুদকে। বহিষ্কারের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শওকত মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, শুধু এই টুকুই বলব, বিষয়টি আমার জন্য দুঃখজনক।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত বছরের এপ্রিলে শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিল বিএনপি। তিনি পেশাজীবী সমাজের ব্যানারে একটি সমাবেশ ডেকে সরকার পতনের ডাক দিয়েছিলেন। সেই পটভূমিতে তখন ওই সমাবেশের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক ছিল না বলে দলটির নেতারা বলেছিলেন। ২০১৯ এবং ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও ঢাকায় এ ধরনের দুটি বড় জমায়েত করে রাস্তায় নেমেছিল জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এবং পেশাজীবী পরিষদ। এরও নেতৃত্বে ছিলেন শওকত মাহমুদ। তখনো তাকে কারণ দর্শনোর নোটিস দিয়েছিল।
দুইবার কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়ার পর থেকেই শওকত মাহমুদ মূলত দল থেকে বিচ্ছিন্ন। বিএনপির কোনো কর্মকাণ্ডে আর জড়িত হতে দেখা যায়নি তাকে। সম্প্রতি রাজধানীতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লা অঞ্চলের বিএনপি সমর্থিত ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়ও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শওকত মাহমুদকে বহিষ্কার করা হয়েছে এমন দাবি করা হলেও সূত্র বলছে, শওকত মাহমুদ সরকারের সঙ্গে গোপন আতাতের মাধ্যমে দল

ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন- এমন তথ্য রয়েছে বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের কাছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দায়িত্ব দেয়া হলেও সেটা পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন বলে দলটির ক্ষোভ রয়েছে।
ইনসাফ কমিটির নৈশভোজ নিয়ে বিএনপির সন্দেহ : গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার প্রায় ১০ বছর পর নৈশভোজ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফের প্রকাশ্যে আসার ঘোষণা দেয় ইনসাফ কমিটি। প্রতিষ্ঠার সময় ফরহাদ মজহার আহ্বায়ক ও শওকত মাহমুদ সদস্য সচিব ছিলেন এই সংগঠনের। আমন্ত্রণপত্র দিয়ে ও ফোন করে ওই নৈশভোজে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিমন্ত্রণ করা হয়। তবে আমন্ত্রণ পাওয়া অনেকেই সেখানে যাননি।
অনুষ্ঠানে অন্তবর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠনের দাবি করা হয়। এছাড়া জাতীয় সরকার গঠনের পর সেই সরকারকে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়।
বিএনপি নীতিনির্ধারকদের মতে, দীর্ঘদিন পর শওকত মাহমুদ এই কমিটি পুনর্গঠন করে কাজ করার ঘোষণা দেয়ার পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা বোঝাতে চান, এর পেছনে সরকার রয়েছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, গত সোমাবার বিষয়টি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ওঠে। বেশির ভাগ নেতাই এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বারবার নোটিস দেয়ার পরেও তিনি একের পর এক সন্দেহমূলক কাজ করে যাচ্ছেন এমন অভিযোগ এনে তাকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে। কোনো কোনো নেতা বলেন, শওকত মাহমুদ পুরনো দলকে নতুন করে সামনে আনছেন, তার মানে ভিন্ন কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। দলকে বিপদে ফেলতে যাচ্ছেন দলের সংস্কারপন্থি নেতারা। বৈঠক শেষে সবার মতের ভিত্তিতেই তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিটি দলের কিছু নিয়ম আছে। কেউ কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অনিয়ম ঘটাতে চাইলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি রাজপথে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে। এমন অবস্থায় হঠাৎ রাস্তায় সরকার পতনের ডাক, নতুন করে পুরনো দলের কমিটি পুনর্গঠন- এ ধরনের তৎপরতা ঐক্য প্রক্রিয়াকে বিভক্ত ও বিনষ্ট করার একটি চক্রান্ত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়