নায়িকা মাহি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

আগের সংবাদ

শিবচরে বাস খাদে, নিহত ১৯ : আন্ডারপাসের দেয়ালে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি > আহত ১৫ জনের ৮ জন ঢামেকে

পরের সংবাদ

বর্ষায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা চট্টগ্রাম নগরবাসীর : চসিক-চউক ব্যস্ত দোষারোপে

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তাব্যক্তিরা নগরবাসীকে আশ্বাস দিয়ে আসছেন নগরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসবে। অথচ প্রতি বছরই বৃষ্টি হলেই ডুবছে নগরী। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল ও নালার ভেতর থাকা অস্থায়ী বাঁধগুলো অপসারণ করা এবং খাল-নালার ময়লা-আবর্জনা অপসারণের প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। খাল-নালায় অস্থায়ী বাঁধ এবং ময়লা-আবর্জনায় নালাগুলো ভর্তি থাকায় এবারো জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় ভুগছেন নগরবাসী।
গত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, খাল-নালার ভেতর থাকা অস্থায়ী বাঁধগুলো চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) অপসারণ না করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আর চউকের পক্ষ থেকে বলা হয়, জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে খাল-নালার পলিথিন ও আবর্জনা অপসারণ করতে হবে চসিককে। খাল-নালার ময়লা চসিক অপসারণ না করায় পানি প্রবাহ ব্যাহত হয়ে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরে ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার সময় প্রতি বছর মানুষের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যায়। এতে নষ্ট হয় গৃহস্থালি জিনিসপত্র থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক পণ্যসামগ্রী। জলাবদ্ধতায় প্রতি বছর কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের আওতায় নগরের বিভিন্ন খালে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। পাঁচটি খালের মুখে দেয়া হচ্ছে স্লুইসগেট। এসব কারণে খালগুলোর বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দেয়া হয়েছে। খালের বিভিন্ন স্থানে মাটি দিয়ে ভরাট করে রাখা হয়েছে। খালের অনেক জায়গায় আগাছা জন্মে রীতিমতো ঝোপ-ঝাড় হয়ে গেছে। এতে পানি চলাচলের পথ সরু হয়ে গেছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ চাক্তাই খালের অবস্থা খুবই করুণ। এই খালের কিছু জায়গায় আগাছা আর ময়লায় খাল দেখা যায় না। পানি নিষ্কাশনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম রাজাখালী খালেরও প্রায় একই অবস্থা। কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত এই খালের মুখে চলছে স্লুইসগেট নির্মাণকাজ। কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত মরিয়মবিবি খাল ও টেকপাড়া খালের ভেতরও বাঁধ দেয়া হয়েছে। নগরের ষোলশহর ২ নম্বর গেট ও মুরাদপুর এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চশমা খাল। কিন্তু খাল প্রশস্ত করা ও প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের জন্য বাঁধ দেয়া হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকছে। নগরীর চকবাজার ধুনিরপুল এলাকায় চাক্তাই খালের পুরোটা ভরাট হয়ে আছে পলিথিন, আবর্জনা আর মাটিতে। খালের এ অংশ ভরাট থাকায় বৃষ্টি হলেই চকবাজার, কাপাসগোলা, বাদুরতলাসহ আশপাশের এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান ‘খাল পুনঃখনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় সময়সীমা বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। বর্তমানে এই সময় বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সরকারের কাছে।
এদিকে গত ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মেগা প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে নগরের যেসব খালে অস্থায়ী বাঁধ দেয়া হয়েছে তা আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে অপসারণ করা হবে। এছাড়া চউকের নির্মাণকাজ শেষ হওয়া খালগুলো চসিককে বুঝিয়ে দেয়া হবে। চউকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত

মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও চউকের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ এবং চার প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা। সভায় চউকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় ২০টি খালের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু খালগুলো বুঝে নিচ্ছে না চসিক। খালগুলো বুঝে নিলে প্রয়োজনে আরো এক বছর প্রকল্পের আওতায় খালগুলো পরিষ্কার করে দেয়া হবে। এছাড়া চউকের দুটি প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ১৭টি স্লুইসগেটের দায়িত্বও সিটি করপোরেশন বুঝে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সভায়।
সভায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, খাল-নালায় ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে জরিমানাসহ শাস্তি দিতে হবে। সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের কাজ চলছে অনেক দিন ধরে। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না। খাল-নালা ভরাট হয়ে আছে। বাঁধও রয়ে গেছে। এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সভায় চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, চট্টগ্রাম শহরের ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি খাল এবং প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে ৩০০ কিলোমিটার ড্রেন নিয়ে চউক কাজ করছে। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে অবশিষ্ট খাল ও ড্রেনসমূহের কাজ সিটি করপোরেশনকে করতে হবে। প্রকল্পভুক্ত খাল ও ড্রেনের বাঁধ, ময়লা ও মাটি অপসারণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং বর্ষার আগে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ও ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, প্রকল্পের কাজের জন্য খালে মাটি ফেলে নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। কিছু ইতোমধ্যে কেটে দেয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় কাজ শেষ সেগুলো এ মাসের মধ্যেই সরিয়ে নেয়া হবে। কিছু খালে মাটি থাকবে। তাতে জলাবদ্ধতা হবে না। কারণ পয়েন্টগুলোতে প্রয়োজনীয় পানি চলাচলের পথ রাখা হবে। এবার পরিস্থিতি অবশ্যই গতবারের চেয়ে ভালো থাকবে।
চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর নালা-খালগুলো। অনেক ক্ষেত্রে সংগ্রহ করা আবর্জনা আবার খালে গিয়েই পড়ে। এক মাস আগে পরিষ্কার করা খাল এখন আবার আবর্জনায় ভরে গেছে। খাল-নালাগুলো থেকে নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়