ইন্ডিয়ান হায়ার এডুকেশন মিট উদ্বোধন

আগের সংবাদ

ভোরের কাগজ, এনজিও ফোরাম ও বাউইনের সেমিনারে বক্তারা : এসডিজি ৬ অর্জনে কার্যক্রম বেগবান করার তাগিদ

পরের সংবাদ

শিবচরে বাস খাদে, নিহত ১৯ : আন্ডারপাসের দেয়ালে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি > আহত ১৫ জনের ৮ জন ঢামেকে

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মিঠুন রায়, শিবচর (মাদারীপুর) থেকে : মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ১৯ জন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগেরই মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত বলে জানা গেছে। বাসের চাকা ফেটে অথবা দ্রুতগতির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশ, স্থানীয় এলাকাবাসী ও আহত যাত্রীদের সূত্রে জানা যায়, গতকাল রবিবার ভোরে খুলনা থেকে দুই তৃতীয়াংশ যাত্রী নিয়ে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা-মেট্রো-ব-১৫-৩৩৪৮) ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া এসে বাসটি আরো ১৫ জন যাত্রী তোলে। পদ্মা সেতুর আগে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর সীমানা এলাকায় এসে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। এক্সপ্রেস হাইওয়ের নিচের আন্ডারপাসের গাইড ওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হন। আরো অন্তত ২০ জনকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর আরো ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৮ জনের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়।
নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জ গোপিনাথপুর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া, বনগ্রাম এলাকার শামসুল শেখের ছেলে মোসতাক আহম্মেদ, সদর উপজেলার নশর আলী শেখের ছেলে সজীব শেখ, পাচুরিয়া এলাকার মাসুদ হোসেনের মেয়ে সুইটি আক্তার, টুঙ্গিপাড়ার কাঞ্চন শেখের ছেলে করিম শেখ, সদর উপজেলার আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি, মোকসেদপুর এলাকার আমজেদ আলীর ছেলে মাসুদ আলী, খুলনা সোনাডাঙা এলাকার শেখ মোহাম্মদ আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন, খুলনা সাউথ মেন্টাল রোড এলাকার চিত্ত রঞ্জন ঘোষের ছেলে চিন্ময় প্রসুন ঘোষ, ডুমুরিয়া এলাকার পরিমল সাদু খায়ের ছেলে মহাদেব কুমার সাদু খা, আমতলা এলাকার শাহজাহান মোল্লার ছেলে আশফাকুর জাহান লিংকন, বাগেরহাট জেলার শান্তি রঞ্জন মজুমদারের ছেলে অনাদি মজুমদার, ফরিদপুর হিদাডাঙ্গা এলাকার সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল, নড়াইল লোহাগড়া এলাকার বকু শিকদারের ছেলে ফরহাদ শিকদার, পাবনা সুজানগর এলাকার গহর আলীর ছেলে ইউসুফ

আলী, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার কুমলাই গ্রামের আলহাজ আলী আকব্বর, বাসের চালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলী আকবরের ছেলে জাহিদ হাসান, সুপার ভাইজার গোপালগঞ্জ সদর থানার মিনহাজ বিশ্বাস ও চালকের সহকারী মো. মিরাজ।
দুর্ঘটনায় ছেলেসহ বেঁচে যাওয়া আহত আনোয়ারা বেগম বলেন, বাসটি চলতে চলতে হঠাৎ বিকট শব্দ হলো। তারপর দেখি উপর থেকে অনেক নিচে পড়ে গেলাম। তারপর স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে।
আরেক আহত দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি একেবারে বাসের পিছনের সিটে বসে ছিলাম। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমের মধ্যেই বিকট শব্দ পাই। সঙ্গে সঙ্গেই বাসটি উল্টে নিচে পড়ে যায়। পরে উদ্ধার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
স্থানীয় দোকানি আবুল হোসেন বলেন, সকালে দোকান খুলতেই বিকট শব্দে তাকিয়ে দেখি বাসটি হাইওয়ে থেকে পড়ে গেল। আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ মিয়া বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে উন্নতমানে মহাসড়ক নির্মাণ করলেও পরিবহন শ্রমিকরা এটা বোঝে না। এরা এই মহাসড়কে ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালায়। এতে ঝুঁকি বেড়ে মানুষ মরছে।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কর্মকর্তা ডা. মিঠুন বিশ্বাস বলেন, নিহতদের বেশিরভাগেরই মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীবুল ইসলাম বলেন, নিহতদের পরিবারগুলোকে ২৫ হাজার করে অনুদান দেয়া হয়েছে। মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম বলেন, প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে সকালে হালকা বৃষ্টির কারণে রাস্তা পিচ্ছিল ছিল। গাড়ি দ্রুত চালানোয় হয়তো চাকা ব্লাস্ট হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, এ দুর্ঘটনায় মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার হাজরাকে প্রধান ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপর সদস্যরা হলেন মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির (পিপিএম), বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ হাসানাত-ই-রাব্বি, মাদারীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হোসেন। আগামী দুই কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঢামেকে চিকিৎসাধীন ৮ জনই সংকটাপন্ন : এদিকে আমাদের ঢামেক প্রতিনিধি হায়দার আলী জানান, আহতদের মধ্যে নারীসহ ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে দুজনকে মৃত অবস্থাতেই আনা হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বাকি ৮ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তারা হলেন- ইমামুল হোসাইন সাগর (৩৫), আব্দুল হামিম (৫৫), অমিত (২৮), শেখ ফয়সাল আহমেদ (৪০), মো. বদরুদ্দোজা (৩০), পঙ্কজ কান্তি ঘোষ (৫০), ঝুমা আক্তার (৩৪) ও বুলবুল (৫০)। গতকাল রবিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে এম্বুলেন্সযোগে তাদের ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ জন আমাদের এখানে এসেছেন। তার ভেতর দুজন পথিমধ্যেই মারা গেছেন। বাকিরা মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন ও সার্জারি এবং ইএনটি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সবার অবস্থাই সংকটাপন্ন। তবে আহতদের মধ্যে একজন আমাদের ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে (ওসেক) আছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাই ওসেকে রেখে তাকে চিকিৎসা দিচ্ছি। কারণ সেখানে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) রয়েছে। প্রয়োজন হলে দ্রুত তাকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা রাখছি সবাই সুস্থ হবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়