ভারত মিয়ানমার থাইল্যান্ড : কানেক্টিভিটি প্রকল্পে যুক্ত হতে আগ্রহী বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

শুভ জন্মদিন পিতা

পরের সংবাদ

সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলা : সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন ঘিরে সংঘাতে জড়ালেন আইনজীবীরা

প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দিনভর হাতাহাতি, ভাঙচুর ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের (২০২৩-২৪) প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার আবার ভোট গ্রহণ চলবে। এই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্ট উত্তপ্ত থাকলেও উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে। নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব রূপ নেয় হাতাহাতি ও হামলায়। ভোট চলাকালে পাল্টাপাল্টি হামলায় আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর করা হয়।
আইনজীবীরা জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিএনপি-সমর্থিত প্যানেল থেকে মনোনীত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুসের সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত উপকমিটির একজন সদস্যের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। অন্যদিকে উপকমিটির পক্ষ থেকে বারবার প্রার্থীদের নির্ধারিত জায়গায় যেতে বলা হয়। এর কিছুক্ষণ পর বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, কমিশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। এর পক্ষে-বিপক্ষে হট্টগোল শুরু হয়। বেশ কিছুক্ষণ তা চলে। সকাল ১০ থেকে ভোট শুরুর কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোটকেন্দ্রের সামনে যায় পুলিশ। এসময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মিলনায়তনের ভেতর থেকে পুলিশ বের করে দেয়। আইনজীবীদের দুই একজন লাঞ্ছিত হন। সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। সাংবাদিকদের মধ্যে আহত এটিএন নিউজের সাংবাদিক জাবেদ আক্তারের অবস্থা গুরুতর। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্য সাংবাদিকরা হলেন- প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাস, জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফজলুল হক মৃধা, আজকের পত্রিকার নূর মোহাম্মদ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জান্নাতুল ফেরদৌস, বৈশাখী টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন ইব্রাহিম হোসেন, এটিএন বাংলার ক্যামেরা পারসন হুমায়ুন কবির, মানবজমিনের আব্দুল্লাহ আল মারুফ। আহত সাংবাদিক ফজলুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, পুলিশ আমাকে ঘিরে ধরে পিটিয়েছে। এতে আমার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লেগেছে। পুলিশ বিভিন্ন সাংবাদিকদের মুঠোফোন ও ক্যামেরা কেড়ে নেয়। প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাস বলেন, হট্টগোলের ছবি তোলার সময় পুলিশ আমার পরিচয়পত্র দেখতে চায়। পরিচয়পত্র দেখানোর পর সেটির ছবি তুলে রাখে পুলিশ সদস্যরা। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা আমাকে গালাগালি দেয় এবং গায়ে হাত তোলে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে দুপুর ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ মনোনীত উপকমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোট শুরু হয়। তবে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ভোটে অংশে নেয়নি। এ নিয়ে দিনভর সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণে উত্তেজনা বিরাজ করে।
এ প্রেক্ষাপটে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল বিকাল তিনটায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ভবনের সামনে প্রেস

ব্রিফিং করে। ব্রিফিংয়ে প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, সমিতির নিয়ম অনুযায়ী সমিতির সিনিয়র সদস্যকে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয়েছে। কিন্তু কমিশনের প্রধান পদত্যাগ করায় কোনো আলোচনা ছাড়াই অন্য একজনকে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। এটি আমাদের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ। তাই এ কমিশন বৈধ নয়। অবৈধ কমিশনের মাধ্যমে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। এ কমিশন বাদ দিয়ে নতুন কমিশন গঠন ও ভোটের নতুন তারিখ ঘোষণা করতে হবে। এ সময় সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা ও হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সরজমিনে দেখা যায়, ব্রিফিং শেষ করে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে সমিতি প্রাঙ্গণে থাকা ভোটের প্যান্ডেলের দিকে যান। সেখানে প্যান্ডেল ছিড়ে ফেলেন তারা। চেয়ার ভাঙচুর করেন। তারা আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় গেট বন্ধ করে সমিতি ভবনে ও প্রাঙ্গণে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা সরে গিয়ে পুলিশের সাহায্য চায়। পরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা ধাওয়া দেয় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা স্লোগানসহ পাল্টা মিছিল করে। এ সময় আইনজীবী মো. তাহিরুল ইসলামের কক্ষ নং-১৪৬ ও আইনজীবী কামরুল ইসলাম সজলের কক্ষ নং-১৩১ ভাঙৃচুর করা হয়। পরে পুলিশ আইনজীবী ভবনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের খোঁজ করে। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সমিতির দুই দিনব্যাপী ভোট গ্রহণের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে।
মর্মাহত প্রধান বিচারপতি : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন বিষয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের লাঠিপেটা ও মারধরের বিষয়টি দুপুরে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করে অবহিত করেন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতির নেতৃত্বে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
তফশিল ঘোষণার পর থেকে উত্তেজনা : সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে ২৩ ফেব্রুয়ারি তফশিল ঘোষণার পর থেকে সমিতি প্রাঙ্গণে উত্তেজনা শুরু হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাল্টাপাল্টি নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি করে দুই পক্ষ। পরে দুইপক্ষের সমঝোতায় গত ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটি গঠন করা হয়। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন মো. মনসুরুল হক চৌধুরী। সেদিন থেকে আবার উত্তেজনা চরমে উঠে। পরবর্তী আহ্বায়ক কে হবেন, এটি নিয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সুপ্রিম কোর্টে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। অন্যদিকে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন। মনিরুজ্জামান নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যালট পেপারে সই করতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমিতির তিন তলার সম্মেলনকক্ষে যান। এতে আপত্তি জানান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তারা কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেন। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল ও হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গতকাল সকাল থেকেই সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে কাযর্করী কমিটির সভাপতি পদে একটি, সহসভাপতি পদে দুটি, সম্পাদক পদে একটি, কোষাধ্যক্ষ পদে একটি, সহসম্পাদক পদে দুটি এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য পদে সাতটি পদসহ সর্বমোট ১৪টি পদে নির্বাচন হচ্ছে। বর্তমানে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকসহ সাতটি পদে আছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। সহসম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ অপর সাতটি পদে আছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়