কাগজ প্রতিবেদক : বিশ্বে বিনিয়োগের সবচেয়ে উপযোগী জায়গা বাংলাদেশ। এদেশে বিনিয়োগ করলে সফল হবে। এটা বুঝেই বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, সরকারের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা বিজনেস সামিটে এসেছেন। এর মাধ্যমে সামিট সফল হয়েছে। এসব উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত রয়েছে। এগুলোর কর্মযজ্ঞ চালু হলে ২০৪১ নয়, এর আগেই আমরা ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছে যাব।
গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ৩ দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন এসব কথা জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, গ্যাস বিদ্যুৎ জ্বালানি সংকট ও নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি ৪৭০ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। এখন সরকার ব্যবসাবান্ধব। পদ্মা সেতু চালু করেছে। বিভিন্ন বড় বড় অবকাঠামোর কাজ চলছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এই কর্মযজ্ঞ বলে দেয় ২০৪১ সালে এক ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে নয়, সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি হবে, এমন পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ভোক্তার বাজারে বাংলাদেশ এখন ৯ম। এখানে ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে যার ৬৮ শতাংশ জনশক্তি কর্মক্ষম। এখানে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। কারণ আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছি। এখানে ভোক্তা বাজার আছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার ৪টি দেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ-ভারত-ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। এটি বুঝেই দক্ষিণ কেরিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ শুরু করেছে। তারা বুঝেছে এখানে বিনিয়োগ করলে সফল হবেই।
বিজনেস সামিট প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এই প্রথম বাংলাদেশ বিজনেস সামিট করেছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় কিছু ভুল-ত্রæটি হলেও সফলতাই বেশি। সফল হওয়ার অন্যতম কারণ ৮৯৬ জন সামিটে অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। ৩শর বেশি বিদেশি এসেছেন। সামিটে প্রতিটি সেশন ছিল প্রাণবন্ত। বেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা আগ্রহ নিয়ে সেশনগুলোয় অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে ৪টি ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে। সৌদি আরো বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। আরো কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই সামিটের উদ্দেশ্য ছিল ব্র্যান্ডিং করা ও দেশের সক্ষমতা তুলে ধরা, এতে আমরা সফল হয়েছি। তিনি জানান, বিভিন্ন সেশনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতার কথা উঠে এসেছে। প্রতিটি সেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠাব। আশা করছি সরকার আমাদের সব ধরনের সহায়তা করবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সামিটে কৃষিপণ্যের উপর বেশি

জোর দেয়া হয়েছে। এ খাতের প্রসারে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ আছে। কীভাবে কৃষিপণ্যকে আরো বহুমুখী করে রপ্তানির বাজার স¤প্রসারণ করা যায় এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি সালাউদ্দিন আলমগীর, এম এ মোমেন, আমীন হেলালী, হাবিবুল্লাহ ডন ও এমএ রাজ্জাক খান রাজ এবং বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. মাসরুর রিয়াজ। এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিজনেস সামিটের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যে গত শনিবার শুরু হয় দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সম্মেলন ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’। এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সামিটে বিভিন্ন কৌশলগত বিষয়ে ৩ প্লেনারি সেশন, ১৪টি প্যারালাল সেশন, বিজনেস টু বিজনেস মিট, নেটওয়ার্কিং সেশন, একটি ওপেন হাউস রিসেপশন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এবারের সামিটে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ৭টি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭টি দেশের ৩০০টিরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।