অর্থনৈতিক অঞ্চলে সৌদিকে জমির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

আগের সংবাদ

চিকিৎসা গবেষণায় আগ্রহ কম : বরাদ্দ, অবকাঠামো সীমিত > প্রণোদনা স্বল্পতা > প্রাইভেট প্র্যাকটিসে মনোযোগ বেশি

পরের সংবাদ

দেশে আবেদনবিদ স্বল্পতা নিরসনে করণীয়

প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১২, ২০২৩ , ১:২৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে বর্তমানে অ্যানেসথেটিস্ট বা আবেদনবিদের স্বল্পতা শল্য চিকিৎসায় গুরুতর সংকটের সৃষ্টি করেছে, যা সংবাদচিত্র দুটিতে প্রতিফলিত হয়েছে : (ক) জেলা উপজেলার সরকারি চিকিৎসক, নার্স ও জনবল সংকটসহ স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জনৈক সংসদ সদস্য সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘জেলা সদরগুলোতে আধুনিক হাসপাতাল হচ্ছে। আধুনিক ভৌত কাঠামো হচ্ছে। কিন্তু অভিজ্ঞ জনবল নেই। অ্যানেসথেটিস্ট নেই। উপজেলা হাসপাতালে রোগী গেলে তাদের জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। জেলা হাসপাতালে গেলে পাঠিয়ে দেয়া হয় ঢাকায় (আজকের পত্রিকা, ০৫-০৬-২২)।’ (খ) খুলনা মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য বলছে অপারেশনের জন্য অপেক্ষমাণ রোগীর সংখ্যা এখন পাঁচ শতাধিকের বেশি। ৬ মাস ধরে অপেক্ষা করছেন এসব রোগী। চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারছেন না। বিশেষত ওটির সংখ্যাস্বল্পতা, ওটিতে শয্যার সংখ্যাস্বল্পতা এবং আবেদনবিদের সংকট থাকায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে রোগীর অপেক্ষা। রোগ চলে যাচ্ছে জটিল পর্যায়ে (দৈনিক বাংলা, ০৬-১২-২২)।
উল্লিখিত সংবাদচিত্র দুটির বিশ্লেষণে যা পাওয়া গেল তা হচ্ছে : (১) চিকিৎসক, নার্স ও জনবল সংকটের কারণে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা বেহাল দশায় পতিত হযেছে, (২) আবেদনবিদ সংকটের কারণে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি পর্যায়ে শল্য চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে, (৩) শল্য চিকিৎসার রোগীরা রেফার হয়ে টারশিয়ারি পর্যায়ে অর্থাৎ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় এবং ঢাকায় ভিড় করছে এবং সেখানেও প্রয়োজনীয়সংখ্যক আবেদনবিদের অভাবে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। যে কোনো ধরনের সার্জারি অথবা সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কিছু সময় চেতনানাশক প্রবেশ করার প্রয়োজন হয় রোগীকে ঘুম পাড়ানোর জন্য কিংবা অচেতন করতে। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হয় তাকে বলা হয় অ্যানেসথেটিস্ট বা আবেদনবিদ। জাতীয় অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী আইসিইউ ওয়ার্ডে প্রতি ৫ জন রোগীর জন্য একজন আবেদনবিদ দরকার। সে হিসেবে তিন বেলার জন্য ৬ আবেদনবিদ প্রয়োজন। আর দুই চিকিৎসকের যদি অফ থাকে, তাহলে সেখানে আরো দুজন লাগবে। সব মিলিয়ে ১০ জন আইসিইউ রোগীর জন্য ৮ জন আবেদনবিদ চিকিৎসক লাগবে। অতএব ৬৩ হাজার আইসিইউ শয্যার জন্য আবেদনবিদ লাগবে ৫০ হাজার ৪০০ জন। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে দেশে আবেদনবিদ আছেন মাত্র ৩ হাজারের মতো। অতএব প্রয়োজনের তুলনায় আবেদনবিদের সংখ্যা মাত্র ৫.৯ শতাংশ।
আবেদনবিদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য করণীয় : (ক) সরকার যদি বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে জুনিয়র কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেন, (খ) সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন : নেপালে অ্যানেসথেসিয়া, অর্থোপেডিকস ও নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের ৩০০ ভাগ প্রণোদনা দেয়া হয়। ভারতেও অগ্রাধিকার দেয়া হয়। কারণ এই বিভাগের চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন না। যুক্তরাজ্যে একজন সার্জন ও আবেদনবিদ সমান ফি পান। কিন্তু আমাদের দেশে সার্জনের ফি ৫০ হাজার টাকা হলে আবেদনবিদকে দেয়া হয় ২-৩ হাজার টাকা। (গ) সরকারি সুযোগ সুবিধা বাড়ানো, (ঘ) সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিল করা: এই সিদ্ধান্ত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. রুহুল হকের সময় হয়ে আছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার যত সময়ক্ষেপণ করবে ততই সমস্যা গুরুতর হবে। অতএব এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ কাম্য।

ডা. হাসান শহীদুল আলম : চিকিৎসক, চট্টগ্রাম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়