কাতার নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : প্রবাসে অপরাধে জড়ালে দায় নেবে না সরকার, দালালের মাধ্যমে কেউ বিদেশমুখী হবেন না

আগের সংবাদ

বিপর্যয় সামালের সক্ষমতা কম : ইঞ্জিনিয়ার ও প্যারামেডিকেল টিম নেই, প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম

পরের সংবাদ

ক্যাম্পগুলোতে অস্থিরতা বাড়ায় আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জসিম আজাদ, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে : কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিবেশ দিন দিন অস্থির হয়ে উঠছে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে আরসা ও আল ইয়াকিনের মতো মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠনের চক্ষুশূল হয়ে পড়েছে নিরীহ অনেক রোহিঙ্গা। এ কারণে ক্যাম্পে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে প্রতিনিয়ত।
গত বুধবার সকালে মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে লম্বাশিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা ছৈয়দ হোসেন নিহত হন। এ নিয়ে চলতি বছরের গত ২ মাসে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে খুন হয়েছেন ৮ জন রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, ক্যাম্পে অপরাধ কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা না করায় টার্গেট করে কমিউনিটি নেতাদের খুন করা হচ্ছে।
প্রশাসন বলছে, ক্যাম্পে সংগঠিত ঘটনাগুলো নিয়ে তারা চিন্তিত। তবে যৌথ অভিযানের পাশাপাশি সমন্বিত প্রচেষ্টায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর জানান, রোহিঙ্গা শিবিরে কয়েকটি দুষ্কৃতকারী দল সক্রিয় রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
এদিকে গত রবিবার উখিয়ার বালুখালী ৯, ১০ ও ১১নং ৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন, দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। স্থানীয়দের দাবি, কোনো বিশেষ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছে রোহিঙ্গারাই। তবে তদন্ত কমিটির মাধ্যমেই আগুনের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আমর্ড পুলিশ ও পুলিশ। আটক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান পুলিশের এক কর্মকর্তা।
উখিয়ার বালুখালীতে আগুনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বড় একটি অংশ পুড়ে গেছে। চারপাশে শুধু আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপ। জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই হাজারের বেশি ঘর (শেল্টার) পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। ক্যাম্প-১১ আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গা থাকেন ৩২ হাজার ২০০। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯০টির বেশি বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, লার্নিং সেন্টার, ত্রাণকেন্দ্রসহ বিভিন্ন
অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ নিয়ে প্রশ্ন সবার। স্থানীয়রা জানান, ক্যাম্প ঘিরে রয়েছে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। তারা হয়তোবা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে ঘরবাড়ি হারানোদের দাবি, এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়। একটি পরিকল্পিত ঘটনা।
এদিকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, আরসা সদস্যরা তাদের রাজত্ব করতে না পারে রোহিঙ্গা নেতাদের টার্গেট করে হত্যা করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কমিউনিটি নেতারা সবসময় আরসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিল। তাই তাদের খুন করা হচ্ছে। গত দুই দিনে ২ কমিউনিটি নেতাকে হত্যা করে আরসার সদস্যরা। গত ২ মাসে আটজনকে হত্যা করা হয়েছে। এখন ক্যাম্পে কেউ ক্যাম্পভিত্তিক নেতা হতে চায় না। কেন নেতা হতে চায় না প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বলেন, ক্যাম্পে কী হচ্ছে না হচ্ছে সবকিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে থাকেন ক্যাম্প মাঝিরা। তাই তাদের হত্যা করে আরসার সদস্যরা।
১১নং ক্যাম্পের নেতা সৈয়দুল আমিন বলেন, ক্যাম্পের সব বাসিন্দা আতঙ্কে আছেন। কখন কী হয় সেটা আমাদের জানা নেই। অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা নিয়ে যারা মুখ খুলেছিল তাদের হত্যা করেছে আরসার সদস্যরা। গত দুই দিনে দুইজন ক্যাম্প মাঝিকে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু এখনো কেউ আটক হয়নি। তাদের প্রত্যেকটি মিশন বাস্তবায়ন হচ্ছে। ক্যাম্পে কখন কী হয় তার ঠিক-ঠিকানা নেই বলে জানান এই রোহিঙ্গা নেতা।
১০নং ক্যাম্পের বাসিন্দা মিয়া বিবি বলেন, এখনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ভুলতে পারছি না। ছেলে-মেয়েরা চুলার আগুন দেখলেও ভয় পেয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে ক্যাম্পে খুনাখুনি। এত চাপ আমরা কীভাবে নেব? আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, গত ৬ মাসে ক্যাম্পে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে নিহত হন ১৩ জন রোহিঙ্গা। এসব ঘটনায় ১৩টি মামলা দায়েরের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৮ জনকে। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি এবং এই সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের চিহ্নিতের কাজ করছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজার ঘর ভস্মীভূত হয়। এতে ১২ হাজার রোহিঙ্গা ঘর হারায়। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরও চিহ্নিত করে আটকের চেষ্টা চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়