সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্বেগ

আগের সংবাদ

কেন এত ভবন বিস্ফোরণ? : সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব, সামর্থ্যরে ঘাটতি আছে রাজউকের

পরের সংবাদ

সাগরিকায় ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত সাকিব আল হাসান

প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানেড সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে টাইগাররা। ম্যাচে ব্যাট হাতে ৭১ বলে ৭৫ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ৪ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। তাতেই বল হাতে ওডিআইতে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই অলরাউন্ডর। এছাড়া ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করার সুবাদে তামিমকে টপকে দেশের জার্সিতে সর্বোচ্চ ফিফটির রেকর্ডটি নিজের করে নেন তিনি।
ইংলিশদের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারলেও সামনে রয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই সিরিজ শেষ হওয়ার পরপরেই বাংলাদেশ সফরে আসবে আয়ারল্যান্ড। এরপর জুনে আসবে আফগানিস্তান। ব্যাটে বলে সাকিবের এমন ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে পরবর্তী সিরিজগুলোতে ভালো কিছু করবে বাংলাদেশ। পুরো সিরিজে ১৪১ রানের পাশাপাশি ৭ উইকেট দখল করেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে বেশ কয়েকটি মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। ১৪তম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ৩০০ উইকেটের মালিক হন তিনি। ৬ হাজার রান ও ৩০০ উইকেটের ডাবলে তৃতীয় অলরাউন্ডার সাকিব। ২২৭ ম্যাচেই ৩০০ উইকেটের দেখা পান তিনি। এছাড়া গতকাল ৭৫ রান করার সুবাদে দেশের জার্সি গায়ে সর্বোচ্চ হাফসেঞ্চুরির মালিকও বনে যান তিনি। জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল এতদিন দেশের জার্সি গায়ে সর্বোচ্চ হাফসেঞ্চুরির মালিক ছিলেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ইংলিশদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নামে টাইগাররা। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ২৪৬ রানে অলআউট হয় সাকিব বাহিনী। ম্যাচে সাকিবের ব্যাট থেকে আসে দলীয় সর্বোচ্চ ৭৫ রান। এসেছে সাকিবের ব্যাট থেকে। ৫৫ বলে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪২তম ফিফটি। তাতেই তামিমকে টপকে যান তিনি। সব ফরম্যাট মিলিয়ে তামিমের ফিফটি ছিল ৯৩টি। সাকিবের ফিফটির সংখ্যা ৯৪টি। এই রেকর্ড গড়তে সাকিব ৪০১ ম্যাচ খেললেও তামিম ৯৩ ফিফটি তুলে নিতে খেলেছেন ৩৭৭ ম্যাচ। এরপরেই আছেন টাইগারদের উইকেটরক্ষক ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। গতকাল তিনিও হাফসেঞ্চুরি করার সুবাদে ৯১তম ফিফটির দেখা পেয়েছেন। তবে শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটে হাফসেঞ্চুরির হিসেবে এখনও শীর্ষে আছেন তামিম। ২৩৪ ম্যাচে তিনি করেছেন ৫৫টি হাফসেঞ্চুরি। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাকিবের দখলে আছে ৫২টি ফিফটি। তিনে থাকা মুশফিকের নামের পাশে আছে ৪৩ ফিফটি।
এতদিন এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা নিজের দখলে রেখেছিলেন মুশফিক। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫৮ রান করার পর এই রেকর্ড নিজের করে নেন সাকিব। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে মিরপুরে সাকিবের রান এখন ৪৬৭৩। এই মাইলফলক ছুঁতে বাঁহাতি অলরাউন্ডার ম্যাচ খেলেছেন ১৩৯টি। এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুশফিক করেছেন ৪৬৬২ রান। তৃতীয় স্থানেও রয়েছে টাইগার ওপেনার তামিম। তিনি ১৩৬ ম্যাচ খেলে মিরপুরে করেছেন ৪৪৩৩ রান। এছাড়া এই সিরিজেই ৪০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তি গড়েন তিনি। এর আগে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরম্যাটে ৪০০ ম্যাচ খেলার নজির গড়েন উইকেটরক্ষক ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। সব মিলিয়ে সাকিব খেলেছেন ৪০১টি ম্যাচ। যেখানে টেস্ট খেলেছেন ৬৫টি। পাশাপাশি ২২৭ ওয়ানডে ও ১০৯টি টি-টোয়েন্টি।
ষষ্ঠ স্পিনার হিসেবে গতকাল ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনশ উইকেট নেয়ার অনন্য মাইলফলক ছুঁয়েছেন সাকিব আল হাসান। স্পিনারদের মধ্যে দ্রুততম হিসেবে বাংলাদেশের সুপারস্টার রয়েছেন দুই নম্বরে।
চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেট নিয়ে সাকিব তিনশ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। ক্যারিয়ারের ২২৭তম ওয়ানডে খেলতে নেমে এ অর্জনের তালিকায় নাম লিখালেন সাকিব। শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন ২০২ ম্যাচে পেয়েছিলেন তিনশ উইকেট। এছাড়া ভারতের অনিল কুম্বলে ২৩৪ ম্যাচে, নিউ জিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টরি ২৯১ ম্যাচে, পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি ৩১৪ ম্যাচে এবং শ্রীলঙ্কান সনাৎ জয়াসুরিয়া ৩৯৭ ম্যাচে তিনশ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন।
ওয়ানডে ক্রিকেটে সাকিবের পথচলা শুরু ২০০৬ সালে হারারেতে। নিজের অভিষেক ম্যাচে ১০ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে পেয়েছিলেন এলটন চিগম্বুরার উইকেট। চার বছর পর ২০১০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ডাম্বুলায় নিজের ৮৮তম ম্যাচে পান শততম উইকেট। ব্যাটসম্যান ছিলেন আসাদ শফিক। পরের ৬৮ ম্যাচে সাকিবের উইকেট ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আলমার উইকেট নিয়ে দুইশ উইকেট পান বাঁহাতি অর্থডক্স বোলার। দুইশ থেকে তিনশ উইকেটে পৌঁছতে সাকিবের লাগল ৭১ ম্যাচ। এবার ইংল্যান্ডের অভিষিক্ত ক্রিকেটার রেহান আহমেদের উইকেট নিয়ে তিনশ উইকেটের চূড়ায় পৌঁছেছেন।
২৯৬ উইকেট নিয়ে চট্টগ্রামে মাঠে নেমেছিলেন সাকিব। নিজের দ্বিতীয় ওভারে পিটার সল্টকে কভারে তালুবন্দি করান এ স্পিনার। পরের ওভারের প্রথম বলে জেসন রয়কে আর্ম বলে করেন বোল্ড। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তৃতীয় ওভারে পেয়ে যান জেমস ভিঞ্চের উইকেট। দারুণ এক ঘূর্ণিতে উইকেট থেকে ব্যাট সরাতে পারেননি ভিঞ্চ। এরপর নিজের নবম ওভারে ফিরে দ্বিতীয় বলে নেন রেহানের উইকেট। ব্যাট হাতে ৭৫ রানের পর বল হাতে তার ৫ উইকেট পাওয়ার সুযোগও প্রায় তৈরি হয়েছিল।
নিজের বোলিংয়ের শেষ বলে আর্চারের এলবিডব্লিউর আবেদন করেছিলেন। অবশ্য পরবর্তীতে রিভিউও নেন। কিন্তু বল সামান্য দূরত্ব দিয়ে স্টাম্প ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তাতে ৫ উইকেট পাওয়া হয়নি।
৩৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এদিকে রান ও উইকেট মিলিয়ে এলিট অলরাউন্ড ক্লাবে প্রবেশ করেছেন সাকিব। ওয়ানডেতে সাকিবের রান ৬৯৭৬। আজ ৩০০ উইকেটের চূড়ায় উঠলেন। তার চেয়ে কেবল এগিয়ে সনাৎ জয়াসুরিয়া ও শহীদ আফ্রিদি। জয়াসুরিয়ার ৪৪৫ ম্যাচে রান ১৩৪৩০, উইকেট ৩২৩টি। আফ্রিদির ৩৯৮ ম্যাচে রান ৮০৬৪, উইকেট ৩৯৫টি। এরপর সাকিবের স্থান। সাকিবের পর আছেন ওয়াসিম আকরাম (৩৭১৭ রান, ৫০২ উইকেট), শন পোলক (৩৫১৯ রান, ৩৯৩ উইকেট), ড্যানিয়েল ভেট্টরি (২২৫৩ রান, ৩০৫ উইকেট) ও চামিন্দা ভাস (২০২৫ রান ও ৪০০ উইকেট)।এর আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ব্যাট ও বল হাতে দারুণ ছন্দে ছিলেন সাকিব। বিপিএলের সর্বশেষ আসরে সাকিবের ব্যাটিং চমকে দিয়েছে অনেককেই। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক প্রথম অর্জন এসেছে সাকিবের হাত ধরেই। এমনকি বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছে তার অলরাউন্ডিং পারফরমেন্সে।
বিপিএলে ১৩ ম্যাচে তিনি করেন ৩৭৫ রান আর বল হাতে নিয়েছেন ১০ উইকেট। এই মাসেই প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসবে আয়ারল্যান্ড। তিন ওয়ানডে, তিন টি-টোয়েন্টি ও এক টেস্ট খেলতে ১২ মার্চ ঢাকায় পা রাখবে আইরিশরা। এই সফর শুরু হবে ১৮ মার্চ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডের মধ্যে দিয়ে। এই ফরম্যাটের বাকি দুই ম্যাচ একই স্টেডিয়ামে হবে ২০ ও ২৩ মার্চ। এরপর ২৭ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে শুরু হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই ফরম্যাটের বাকি দুই ম্যাচ হবে ২৯ ও ৩১ মার্চ। ঢাকায় একমাত্র টেস্ট শুরু হবে ৪ এপ্রিল। এরপর আয়ারল্যান্ড সফরে যাবে টাইগাররা। এই সিরিজের সম্ভাব্য সময়সূচি মে মাসে। এই সফরে তিনটি ওয়ানডে ও চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দল দুটি। আয়ারল্যান্ড থেকে ফিরেই বছরের মাঝামাঝি সময়ে জুন-জুলাইয়ে দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে টাইগাররা। এই সফরে দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে সফরকারীরা। এই সিরিজগুলোতে সাকিবের ধারাবাহিকতা দেখতে চান ক্রিকেটপ্রেমিরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়