চীন-বাংলাদেশ কালচার এন্ড আর্ট নাইট

আগের সংবাদ

কাতারের উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

বুলিং প্রতিরোধে জনসচেতনতা

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বায়নের ছোঁয়ায় আমাদের জীবনে যুক্ত হয়েছে কিছু বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও হাতের মুঠোয় স্মার্টফোনের ছড়াছড়িতে যখন তথ্যপ্রযুক্তির জয়জয়কার ঠিক তখনই তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রকমের বিড়ম্বনা ও সাইবার বুলিংয়ের মতো বেদনাদায়ক আতঙ্ক ও অস্থিরতা। বর্তমানে অপরাধ জগতে এক নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এই সাইবার বুলিং। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজ করেছে এই ভয়ংকর অপরাধ তথা সাইবার বুলিং। সম্প্রতি যেসব অপরাধ ভয়ংকর রূপে দেখা দিয়েছে তার মধ্যে সাইবার বুলিং অন্যতম। সমাজে বুলিংয়ের প্রবণতা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বুলিং একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। সাধারণত ‘বুলিং’ বলতে বোঝায়, কাউকে শারীরিক বা মানসিকভাবে হেনস্তা করা, হেয় অপদস্ত করে মজা করা, তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা এবং সেগুলো নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি করা।
বুলিং মূলত সচেতন বা অবচেতনভাবে এক ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণ, কাউকে অপমান, অপদস্থ বা হেয় করা। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে, বুলিং হলো অপ্রত্যাশিত ও আক্রমণাত্মক আচরণ, যা সাধারণত স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। আচরণের মাধ্যমে দুপক্ষের বাচ্চাদের মধ্যে ক্ষমতার অসামঞ্জস্যতা প্রকাশ পায়। মানুষ সাধারণত চার ধরনের বুলিংয়ের শিকার হয়ে থাকে। যেমন- শারীরিক, মৌখিক, সামাজিক এবং সাইবার। এদের মধ্যে সাইবার বুলিং খুবই ভয়ংকর। ‘সাইবার বুলিং’ বলতে মূলত অনলাইন ব্যবহার করে বা অনলাইনের মাধ্যমে কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে হেয় অপদস্ত করা বা হেয় করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত বা জনসম্মুখে কটাক্ষ করা, কারো গোপন তথ্য, ব্যক্তিগত ফটো বা ভিডিও ধারণ করে তা প্রকাশ করা, আক্রমণাত্মক ব্যবহার, অযথা ভয় দেখানো বা প্রাণনাশের হুমকি প্রদান ইত্যাদি। বতর্মান সময়ের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর-কিশোরী ও নারীরাই সবচেয়ে বেশি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সাইবার বুলিংয়ের সর্বোচ্চ আক্রমণের শিকার হচ্ছেন নারীরা। এর প্রভাব মাদকের মতোই ভয়াবহ। স্ট্যাটিস্টা তথ্যমতে, বাংলাদেশের ৭৬ শতাংশ নারী বিভিন্ন সময়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছে। বুলিংয়ের ফলে ভিকটিম হীনম্মন্যতায় ভোগে, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে পারে না, নিজেকে অযোগ্য ভাবতে শুরু করে, এমনকি বুলিং একটা তাজা প্রাণকে তিলে তিলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।
সাইবার বুলিং রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে ২০১২ সালের ১৭ জুন প্রথমবারের মতো ‘Stop cyber bullying day’ উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে এটা জুন মাসের তৃতীয় শুক্রবারে প্রতি বছর দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। সভ্য ও উন্নত দেশগুলো বুলিংয়ের ব্যাপারে বেশ সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ সরকার সাইবার বুলিং প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(১)ক ধারায় প্রথমবার সাইবার বুলিংয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে সহিংসতা, হুমকি, হয়রানি, সর্বোপরি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে আইনি সহায়তা পেতে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, সাইবার পুলিশ সেন্টার, হ্যালো সিটিআ্যপ, রিপোর্ট টু র‌্যাব অ্যাপ এবং ৯৯৯-এ অভিযোগ করে জরুরি সহযোগিতা করা হচ্ছে। বুলিং প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি বুলিং সম্বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বাবা-মা, শিক্ষকসহ গণমাধ্যমকেও এগিয়ে আসতে হবে। সর্বোপরি সমাজের সর্বস্তরে বুলিং প্রতিরোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।

মাহমুদুল হক হাসান : লেখক ও সংগঠক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়