সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্বেগ

আগের সংবাদ

কেন এত ভবন বিস্ফোরণ? : সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব, সামর্থ্যরে ঘাটতি আছে রাজউকের

পরের সংবাদ

কাতারের উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান

প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১১:২৩ অপরাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কাতারের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে জ্বালানি, অবকাঠামো, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের বিশ্বাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাতে কাতারের বিনিয়োগের সুযোগ আছে। আমরা সমুদ্র গ্যাস অনুসন্ধান ও জ্বালানি বিতরণে কাতারের দক্ষতা থেকে লাভবান হতে পারি। গতকাল সোমবার দোহার সেন্ট রেজিস হোটেলে কাতারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়ালস অব ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের অবকাঠামো ও লজিস্টিক খাত বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রেখেছি।
বাংলাদেশে এগ্রো-প্রসেসিং শিল্পের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি প্রবৃদ্ধি ‘বাই-ব্যাক’ ব্যবস্থাসহ এগ্রো-প্রসেসিং শিল্পে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করেছে। আমরা তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি, যেখানে কাতার রিয়েল এস্টেট ও সেবা সেক্টরে সম্পৃক্ত হতে পারে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ আমরা অন্তত দশটি ‘ইউনিকর্ন’ পেতে চাই। আমাদের প্রাণবন্ত ‘স্টার্টআপ’ কাতারের বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। কাতারের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের পোর্টফোলিও হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারকে আরো উন্নত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কঠোর পরিশ্রম করছে। আমাদের বন্ড মার্কেটকে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা শিগগিরই আমাদের পুঁজিবাজারে ‘ডেরিভেটিভ’ পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের অঞ্চলে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ব্যবস্থা সবচেয়ে উদার।

ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেয়াতি শুল্ক, রয়্যালটি রেমিট্যান্স, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও ফি, শতভাগ বিদেশি ইক্যুইটি, অবাধ বহির্গমন নীতি, লভ্যাংশের সম্পূর্ণ প্রত্যাবাসন সুবিধা এবং মূলধন ফেরতসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ঝামেলাহীন বিদেশি বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এক ছাদের নিচে সব সেবা দিচ্ছে। আমাদের সরকার সমন্বিত সুবিধাসহ সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। এখন পর্যন্ত পাঁচটি দেশের জন্য নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আঞ্চলিক কানেকটিভিটি ও লজিস্টিক হাবের জন্য উপযুক্ত অবকাঠামোতে আমরা প্রচুর বিনিয়োগ করছি। পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদীর টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স¤প্রসারিত তৃতীয় টার্মিনাল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকায় মেট্রোরেল ব্যবস্থার মতো মেগা-প্রকল্পগুলো আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণ। আমরা এরই মধ্যে সমস্ত জাতিকে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট কভারেজের আওতায় নিয়ে এসেছি। আমাদের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
সহজলভ্য শ্রমিকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বস্তা মজুরিতে সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য আমাদের আছে বিশাল কর্মী বাহিনী। বাংলাদেশের আছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নিবন্ধিত আইটি ফ্রিল্যান্সার সম্প্রদায়। আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত আমাদের ডিজিটাল ব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়েছি। আমাদের ছেলে মেয়েরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যোগ দিতে নিজেদের প্রস্তুত করছে। আমরা সারাদেশে পর্যায়ক্রমে ৩৮টি হাই-টেক পার্ক তৈরি করছি। এগুলো বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত। একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার মাধ্যমে আমাদের ভিশন ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা। এসময় কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেইসঙ্গে কাতারে বসবাসরত বাংলাদেশিদেরও বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমি আহ্বান জানাই। আমাদের জাতি গড়ার প্রচেষ্টায় আপনাদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
কাতার থেকে আরো জ্বালানিতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারের সংকট বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে কঠিন জায়গায় ঠেলে দিয়েছে। আমাদের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আমরা কাতার থেকে এলএনজি আমদানি বাড়াতে আগ্রহী। বাংলাদেশে আরো রপ্তানির সুযোগ অন্বেষণ করতে আমরা কাতারকে অনুরোধ করছি। কাতারের ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নে অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ। জ্ঞান ও দক্ষতার সঙ্গে আমাদের কর্মীবাহিনী দিয়ে আমরা কাতারের উন্নত কর্মসংস্থান বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারি। আমাদের জনগণের ভালো যতœ নেয়ায় আমরা কাতার সরকার ও কাতারের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও কাতার ভ্রাতৃত্ব এবং বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায় দুই দেশের জনগণের মধ্যকার চমৎকার এক সেতু। কাতারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বহু বাংলাদেশিকে দেখে আমি আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদনসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের বাণিজ্য বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া দুটি আলাদা প্রেজেন্টশন উপস্থাপন করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
প্রসঙ্গত, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে (এলডিসি-৫) যোগ দিতে গত শনিবার কাতার সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৮ মার্চ তিনি দেশে ফিরবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়