উপাচার্য ড. মশিউর রহমান : সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতি রুখতে হবে

আগের সংবাদ

সংস্কারের বিরূপ প্রভাব বাজারে : আইএমএফের শর্ত মেনে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে

পরের সংবাদ

জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে প্রাধান্য

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : বিশ্বের ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের জোট জি২০-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত এটি অর্থনীতিবিষয়ক জোট হলেও এবারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টিই হয়ে ওঠে আলোচনার মুখ্য বিষয়। বৈঠকে প্রায় ৪০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন, যাদের মধ্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউইন গ্যাংও রয়েছেন। সম্মেলনে জি২০ জোটভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও রয়েছেন বাংলাদেশসহ ৯টি আমন্ত্রিত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। রয়েছেন ১৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও।
বর্তমানে জি২০ জোটের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছে ভারত। এই সম্মেলনকে ভারতের কূটনীতির জন্য একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, দেশটি নিজেদের বৈশ্বিক উচ্চাকাক্সক্ষার সঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের বিষয়ে তাদের অবস্থানে ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণে দিল্লির উপর চাপ বাড়ছে। দিল্লি এখনো পর্যন্ত ওই চাপ সামলে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে সরাসরি রাশিয়ার নিন্দা না করার কৌশলে অটল আছে। যুদ্ধ শুরু পর এখন পর্যন্ত জাতিসংঘে রাশিয়াকে নিন্দা জানিয়ে যে কয়টি রেজ্যুলেশন হয়েছে তার সবগুলোতেই ভোট দানে বিরত থেকেছে ভারত। এমনকী, গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে হওয়া ভোটেও দেশটি ভোটদান থেকে বিরত থাকে।
ল্যাভরভ ও ব্লিংকেন বৈঠক : ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে মিলিত হলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও মার্কিন পররাষ্ট্র অ্যান্টনি ব্লিংকেন। গতকাল নয়া দিল্লিতে জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের পার্র্শ্ববৈঠকে দুই কূটনীতিক মিলিত হন। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উত্তেজনা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিউ স্টার্ট পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি রাশিয়া বাতিল করার মধ্যে এ বৈঠক করলেন ল্যাভরভ ও ব্লিংকেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও ব্লিংকেনের সফরসঙ্গী সিএনএনকে বলেছেন, ব্লিংকেন ও ল্যাভরভ প্রায় ১০ মিনিট কথা বলেছেন। এ সময় পল ওয়েলানকে মুক্তি দিতে এবং নিউ স্টার্ট চুক্তিতে ফিরে আসতে আহ্বান জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থনের কথাও তিনি তুলে ধরেন। জানা গেছে, বৈঠকটি ছিল অনির্ধারিত এবং মার্কিন
পররাষ্ট্রমন্ত্রীই ল্যাভরভের সঙ্গে আলোচনায় এগিয়ে যান।
সর্বশেষ ব্লিংকেন ও ল্যাভরভ বৈঠক করেছিলেন ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ শুরু হওয়ার আগে। গত সপ্তাহে জি-২০ অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে ব্লিংকেন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এই বৈঠককে অচল করে দিয়েছে।
মোদি বললেন, বিশ্ব শাসন ব্যর্থ হয়েছে : যুদ্ধ-বিগ্রহ, সামাজিক ব্যাধি, মহামারিসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত বর্তমান বিশ্ব। যেখানে সব দেশের সব প্রতিষ্ঠানের একত্রিত হয়ে এসব সমস্যার সমাধান করার কথা- সেখানে চলছে বিরোধ আর বিভাজন। সমস্যা সমাধানে বিশ্ব এক হতে না পারার বিষয়টির তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব শাসন ব্যর্থ হয়েছে’ এবং বহুপক্ষীয় ঐক্য যে হুমকির মুখে আছে সেটি যেন তারা স্বীকার করে নেন।
গতকাল নয়া দিল্লিতে সম্মেলন শুরুর আগে নরেন্দ্র মোদি এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা- অর্থনৈতিক সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি, সন্ত্রাসবাদ এবং যুদ্ধ- পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে বিশ্ব শাসন ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যেসব ইস্যু আমরা একসঙ্গে সমাধান করতে পারব না, সেসব ইস্যু তৈরি হতে দেয়া যাবে না।
রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচিত হলেই বাড়বে শস্য চুক্তির মেয়াদ : রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, রাশিয়ার কৃষিপণ্য ও সার উৎপাদকদের স্বার্থ বিবেচনায় নেয়া হলেই কেবল কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি চুক্তির মেয়াদ বাড়তে পারে। জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে সাইডলাইনে গত বুধবার তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা তাস।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানির উদ্যোগ বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় বিশ্ববাজারে রাশিয়ার কৃষিপণ্য ও সার উৎপাদকদের বাধাহীন প্রবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হলেই কেবল শস্য চুক্তি ফের নবায়ন করা হতে পারে বলে রুশ পক্ষ জোর দিয়ে বলেছে।
বৈঠকে দুই পক্ষ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের পর আঙ্কারাকে সহায়তা করাসহ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। বৈঠকে নিজ নিজ দেশের দুই শীর্ষ কূটনীতিক তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ওপরও জোর দেন।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সিরিয়ার পরিস্থিতিসহ আন্তর্জাতিক অনেক সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিরীয় আরব প্রজাতন্ত্রের সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার, তুর্কি-সিরিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে ওই অঞ্চলের আগ্রহী দেশগুলোর কাজের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়েছে।
নৈশভোজে অনুপস্থিত যুক্তরাষ্ট্রসহ জি-৭ এর ৬ সদস্য দেশ : সম্মেলনের আগের দিন বুধবার এক নৈশভোজের আয়োজক ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেই আসরে জি-৭ জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন না। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল অবশ্য নৈশভোজে যোগ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউইন গ্যাং এদিন গভীর রাতে দিল্লি পৌঁছান। ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পৌঁছান গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে। স্বাভাবিকভাবেই তাই কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নৈশভোজের আসর এড়িয়ে গেলেন কি না। ল্যাভরভ অবশ্য সামান্য সময়ের জন্য নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে রাশিয়ার বিপরীতে পশ্চিমা দুনিয়ার অবস্থান যেমন জোরাল, রাশিয়া তেমনই তাদের বিরুদ্ধাচরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল এদিন রাতেই স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যুদ্ধকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করতে হবে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবকও দিল্লির উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে জানিয়ে দেন, ‘রাশিয়ার অপপ্রচারের’ যোগ্য জবাব দিতে হবে।
গত সপ্তাহে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত হয় জি২০ জোটের অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলন। বৈঠক শেষে সমাপনী বিবৃতিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ভাষায়’ দুঃখ প্রকাশ করা হলে ওই বিবৃতি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় মস্কো এবং বেইজিং। এ কারণে, যৌথ সমাপনী বিবৃতি ছাড়াই অর্থমন্ত্রীদের ওই সম্মেলন শেষ হয়। পরে জোট প্রধান হিসেবে ভারত একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেয়। যেখানে ইউক্রেনের পরিস্থিতিকে ‘ভিন্নভাবে’ উল্লেখ করা হয়।
গত বছর নভেম্বরে জি-২০ জোটের প্রেসিডেন্টরা ইন্দোনেশিয়ার বালিতে মিলিত হয়েছিলেন। সেখানেও জোটের মধ্যে থাকা বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছিল।
সা¤প্রতিক বছরগুলোতে ভারত নিজেকে উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে নেতৃস্থানীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে- যা গেøাবাল সাউথ হিসেবে পরিচিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য আরো জরুরি নানা বিষয়ের প্রতি বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে তাদের জি২০ সভাপতিত্বকে ব্যবহার করতে চায়।
রাশিয়ার অস্ত্র ও জ্বালানির অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা ভারত এখন পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার সরাসরি কোনো সমালোচনা করেনি। তবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক বৈঠকে মোদি বলেছিলেন, ‘আমি জানি এখন যুদ্ধ করার সময় নয়।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়