তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী : কয়লা বিদ্যুৎ চালু হলে থাকবে না ঘাটতি

আগের সংবাদ

মিঠামইনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তৃতা : নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতেই নিত্যপণ্যের বাড়তি মূল্যে দিশাহারা সাধারণ মানুষ। তার ওপর গত কয়েক মাসে শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মেটানো নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। আয় না বাড়লেও বেড়েছে ব্যয়। সন্তানের পড়াশোনার বাড়তি ব্যয় মেটানো সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে কষ্টসাধ্য। গত ছয় মাসে কয়েক দফায় শিক্ষা উপকরণের দাম দেড় থেকে দুই গুণ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাগজের দাম। শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়তে থাকলে আর্থিক টানাপড়েনে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়বে। নিম্নবিত্ত অভিভাবকরা সন্তানের পড়াশোনা চালাতে নিরুৎসাহিত হবেন। এমনকি শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের সংখ্যাও বেড়ে যাবে। এমন বাস্তবতায় শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোর বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে অভিহিত করেছেন। এটি যে দারিদ্র্যমুক্তির পথ তা প্রমাণিত হয়েছে শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দারিদ্র্যমুক্তির ঘটনায়। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণসহ শিক্ষা খাতে বাজেটের এক উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ যে জাতির জন্য সত্যিকার অর্থেই লাভজনক তা বাস্তবতার নিরিখেই প্রমাণিত হয়েছে। সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনামূল্যে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই বিতরণ ও নারীদের অবৈতনিক শিক্ষার যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে তা বিশ্ব সমাজেরও প্রশংসা অর্জন করেছে। এই অর্জন ধরে রাখতে হবে। করোনার আঘাতে আয় কমেছে শ্রমজীবী মানুষের। স্বাভাবিকভাবেই তার ছাপ পড়েছে শিক্ষা খাতে। অনেক ক্ষেত্রে পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ের। অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও যারা এখনো ঝরে পড়েনি তাদের জন্য নিঃসন্দেহে দুঃসংবাদ এই শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি। শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে যে শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভের স্বপ্ন দেখছে, তাদের স্বপ্নযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকারসহ উচ্চবিত্তদের এগিয়ে আসতে হবে। সামর্থ্যবানরা অন্তত একটি দরিদ্র শিশুর শিক্ষার ব্যয়ভার নিলেও তা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। ছয় মাসে কাগজের বাড়তি দামের কারণে ছোট-বড় সব ধরনের খাতার দাম বেড়েছে। ছোট রুল টানা খাতার দাম আগে ছিল ১৫ টাকা, এখন ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৫ টাকার খাতা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। ৮০ টাকার বড় খাতার দাম এখন ১২০-১৩০ টাকা। ৫০ টাকার পেন্সিল বক্স বিক্রি হয় ৮০ টাকায়। ৮০ টাকার জ্যামিতি বক্সের দাম হয়েছে ১২০ টাকা। অন্যদিকে কলমের দাম ডজনপ্রতি বেড়েছে ১০-২০ টাকা। সাধারণ ক্যালকুলেটর ৮০ টাকারটা ১২০ টাকা। যে সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরের দাম ছিল ১ হাজার টাকা, সেটার দাম বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া স্ট্যাপলার, স্কুলের পোশাক, স্কুলব্যাগসহ অন্য উপকরণের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বেড়েছে ফটোকপির খরচও। মোটকথা কোনটির দামই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালে নেই। শিক্ষা খাতের এই সংকটকে সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। বৈশ্বিক সংকট, যুদ্ধসহ যাবতীয় সমস্যা থেকে শিক্ষার উপকরণগুলোকে বাইরে রাখতে হবে। শিক্ষা উপকরণের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স বাদ দেয়া যেতে পারে, এতে দাম কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে মনে করি। শিক্ষার প্রধান উপকরণ বই-খাতা-কলমের মতো পণ্যের দাম যাতে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেদিকে নজর দেয়া জরুরি। পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষা উপকরণের দাম কমানো, শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ বরাদ্দসহ শিক্ষা উপকরণের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমরা আশাবাদী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়