জি এম কাদের : ইভিএম ভোট চুরির আধুনিক মেশিন

আগের সংবাদ

বিকৃতির ঝুঁকিতে বাংলা ভাষা

পরের সংবাদ

বায়ান্নর আদর্শের আমরা কত কাছে, কত দূরে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য ১৯৪৭ থেকে সূচিত আন্দোলন ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এক রক্তঝরা ইতিহাসের অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল। ১৯৫২ সালের এদিনে ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে অগ্রসর হতে গেলে তাদের ওপর পাকিস্তানি সরকারের নির্দেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় ও গ্রেপ্তার করে। নিহতদের মধ্যে সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকের নাম ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছে। ’৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব বাংলার মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি, স্বপ্নের পাকিস্তানে তাদের মাতৃভাষার ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী চরম বিদ্বেষী আচরণ শুরু করবে, মাতৃভাষা বাংলার স্থলে উর্দুকে চাপিয়ে দেবে, প্রতিবাদ হওয়ার পরও জোর করে উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। ১৯৪৮ সালে জিন্নাহর ঘোষণা, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’, এর বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলায় তীব্র প্রতিবাদ উঠার পর কিছু সময় বিরতি দিয়ে ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঢাকার নবাববংশীয় পাকিস্তানি ধারক খাজা নাজিমুদ্দীন জিন্নাহর বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে যখন বাংলার স্থলেই উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলেন, তখনই এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন সূচিত হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ৩০ জানুয়ারি সভা ডাকে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বাত্মক ধর্মঘট আহ্বান করে। পুরো ফেব্রুয়ারি মাসের দিনগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি- বেসরকারি অফিস এবং দেশের আনাচে-কানাচে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে থাকে। পাকিস্তান সরকার অবস্থা বেগতিক দেখে ২০ ফেব্রুয়ারি এক ঘোষণাবলে ২১ ফেব্রুয়ারি মিছিল সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্রসমাজ ওই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ শেষে ঢাকা মেডিকেল চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের অতর্কিত গুলি। সেদিন ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে রফিক, বরকত ও জব্বার মারা যান, সালাম গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৭ এপ্রিল হাসপাতালে মারা যান। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন। এই হত্যাকাণ্ড এবং গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধান্ত হয় শহীদ মিনার তৈরির, ২৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয় এবং পুলিশ ২৪ তারিখ উক্ত শহীদ মিনার ভেঙে দেয়। ঢাকার গুলির সংবাদ দেশের বিভিন্ন শহরে ও গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয় দেশব্যাপী। রচিত হয় মাহবুব-উল-আলমের ‘কাঁদতে আসিনি’, আলাউদ্দিন আল-আজাদের ‘স্মৃতির মিনার’ কবিতা, ‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো চার কোটি পরিবার খাড়া রয়েছি তো’। ২২ ফেব্রুয়ারি আহত অবস্থায় আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী লেখেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’, গণসংগীত শিল্পী আবদুল লতিফ রচনা করেন, ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার প্রাক্কালেই নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. এনামুল হক বাংলা ভাষার পক্ষে লেখেন। যুবলীগ, তমুদ্দিন মজলিশ, নবগঠিত ছাত্রলীগ, পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবসহ অনেকেই ’৪৮ সালেই এর প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তাদের অবস্থানে অনড় ছিল। ’৫২ সালে তা ছাত্র-জনতার রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়। এমনকি জেলখানা থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিব, মহিউদ্দিন আহমেদ হরতাল সফল করার পক্ষে অনশন, ধর্মঘট চালিয়ে যান। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের এই প্রতিবাদের গভীর তাৎপর্য বুঝতে পারেনি। এটি একটি জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার মধ্য দিয়ে তার অস্তিত্বকেও টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম, যা পরবর্তী সময়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলার মতো শক্তি রাখে। ১৯৫৩ সালে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম বছরপূর্তিতে ঢাকা শহরে প্রথম ‘খালিপায়ে মিছিল’ ও প্রভাতফেরি অনুষ্ঠিত হয়। আজিমপুর কবরস্থান থেকে মিছিলটি পুরান ঢাকার মূল সড়ক অতিক্রম করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে সমবেত হয়। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান, গণতন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আলী, নারী নেত্রী হালিমা খাতুন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিশাল সেই সমাবেশে শেখ মুজিব ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘কারবালা দিবস’ বলে অভিহিত করেন। ২১ ফেব্রুয়ারির প্রভাব কতখানি শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হতে পারে, তা ’৫৩ এর ২১ ফেব্রুয়ারিতে অনেকটা ধারণা করার অবস্থা সৃষ্টি হয়। ২১ কে কেন্দ্র করে তখন রচিত হয় কবিতার সংকলন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষার প্রতি আবেদন জোরদার হতে থাকে। রাজনীতিতেও এর পক্ষে দৃঢ়তা তৈরি হয়। ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্টের ২১ দফায় অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবি গৃহীত হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। কিন্তু সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ১৯৫৫ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে শেখ মুজিব দাবি উত্থাপন করেন। তার এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়। বাংলা ভাষার জন্য পূর্ব বাংলার প্রগতিশীল বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী শক্তিসমূহ নিরবচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন ও আত্মত্যাগ অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু মুসলিম লীগ, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে ভাষা ও জাতীয়তার প্রশ্নের এই বিভাজন পাকিস্তান সৃষ্টির আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। গোটা পাকিস্তানকালে এই বিভাজনের রাজনীতি আমাদের একটি অংশকে কাছে টেনে নিয়েছে, অন্য অংশকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সরকার বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির পাশাপাশি সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমানাধিকারের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ একটি জাতিরাষ্ট্ররূপে গড়ে ওঠার সূচনা করেছিল মাত্র। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা, রাষ্ট্রের সব কাজকর্মেই ব্যবহার করার ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের যে সুপারিশ করেছিল, সেটি ছিল বিজ্ঞানসম্মত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা-উত্তরকালে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শক্তির নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ লাভের ওপর ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের আত্মত্যাগ, মাতৃভাষা বাংলার চর্চার সুযোগ অবারিত হতে পারত। ‘৭২ এর পর থেকে বঙ্গবন্ধুর সরকার সেই প্রতিশ্রæতি বারবার ব্যক্ত করে যাচ্ছিলেন। ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তখন শিক্ষাঙ্গনে ফিরে আসে, বই পুস্তক সাহিত্য রচিত হতে থাকে, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি উদযাপিত হতে থাকে। ১৯৭৫ এর রক্তাক্ত বিয়োগান্ত ঘটনার পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদর্শে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান, ভাষা-সংস্কৃতি ও জাতীয়তার উন্মেষ ঘটানো রাজনীতি দূরে সরে যায়, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, সমাজ, রাষ্ট্র, শিক্ষায়তন এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়, ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলনের ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করে দেয়া হয়। দীর্ঘদিন দেশে সামরিক শাসনের আড়ালে পাকিস্তানি দ্বিজাতি তত্ত্বের রাজনীতি ও সংস্কৃতি আবার অবারিত হতে থাকে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কূটতর্ক স্থান করে নিতে থাকে। মানুষের মনন ও বিশ্বাসে জাতীয়তাবাদ খণ্ডিতভাবে জায়গা করে নিতে থাকে। সাম্প্রদায়িকতা শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যে প্রাধান্য পেতে থাকে। এই রাজনীতি মূলত ’৫২ এর ২১ এর চেতনাকে ঢেকে দেয়ার সুচতুর এক পরিকল্পনা, যা অনেকে উপলব্ধি করতে পারেননি। বাঙালিত্বের বিরুদ্ধে নানা অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক কূটতর্ক শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতিতে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে ২১ এর চেতনা দূরে সরে যেতে থাকে। পাকিস্তানের ভাবাদর্শ অনেকের খুব কাছাকাছি জায়গা করে নিতে থাকে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয়তাবাদ, বাঙালিত্ব এবং এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির বিষয়টি কাছে আসার সুযোগ পায়। তখন পাঠ্যপুস্তকগুলোতে ভাষা আন্দোলন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, শহীদ, বরকত, সালাম, জব্বারের অবদানের কথা লিখিত হয় এবং শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ ঘটে। ১৯৯৮ সালে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে আবেদন করেন। জাতিসংঘ তাদের নিয়ম অনুযায়ী ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্রকে ইউনেস্কো বরাবর আবেদন করার কথা জানায়। কানাডায় বসবাসকারী অপর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামসহ রফিক সাতটি ভিন্ন ভাষার ১০ জন সদস্য মিলে ঞযব গড়ঃযবৎ খধহমঁধমব খড়াবৎং ড়ভ ঃযব ডড়ৎষফ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশসহ ৫টি দেশ সরকারিভাবে আবেদন করলে ইউনেস্কোর নির্বাহী পরিষদ সেটি অনুমোদন করে এবং ১৭ নভেম্বর দ্বিবার্ষিক সভায় সেটি উত্থাপিত ও সব সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করে। পৃথিবীর প্রতিটি ক্ষুদ্র ও বড় জাতি নিজস্ব মাতৃভাষায় কথা বলা, লেখাপড়া শেখা এবং ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার আন্তর্জাতিক অধিকার লাভ করে। ১৯৫২ সালে আমরা যে অধিকারের জন্য জীবন দিয়েছি। ১৯৯৯ সালে সেটি আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। পৃথিবীতে এখন প্রায় ৬ হাজার মাতৃভাষা রয়েছে। অনেক ছোট ছোট জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে এমন স্বীকৃতি ওইসব ভাষা ও জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার সে বছরই আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন করার উদ্যোগ নেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্য দেশ, জাতি, ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া, গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশুরাও মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের ব্যবস্থা করে দেন। বেশ কিছু জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় এখন পাঠ্যবই রচিত হচ্ছে এবং তাদের পাঠদানেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকার অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে রক্ষার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা ২১ এর আদর্শের সঙ্গেই সঙ্গতিপূর্ণ।
দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশে মধ্য ও উচ্চবিত্তের একটি বড় অংশ মাতৃভাষা বাংলার চাইতে সন্তানদের ইংরেজি ভাষায় শিক্ষিত করার ক্ষেত্রে অধিক আগ্রহী। কিন্তু উন্নত দেশেও শিক্ষার প্রধান বাহন মাতৃভাষায় হচ্ছে, সহকারী এক বা একাধিক বিদেশি ভাষা অবশ্যই শেখার নিয়ম সেসব দেশে রয়েছে। কিন্তু আমরা ভুলভাবে মাতৃভাষাকে শিক্ষাব্যবস্থায় দ্বিতীয় স্থানে নামিয়ে ফেলার যে প্রবণতা দেখাচ্ছি, তা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। সেটি আমাদের নতুন প্রজন্মকে ’৫২ এর ভাষা এবং ’৭১ এর জাতিরাষ্ট্রের অবস্থান থেকে দূরে ঠেলে দিতেই কেবল সহায়তা করবে। এই সত্যটি কবে আমরা উপলব্ধি করব?

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়