২৫ ফেব্রুয়ারি সব জেলায় পদযাত্রা করবে বিএনপি

আগের সংবাদ

একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : ভাষার জন্য কারাবরণ করতে হয় বঙ্গবন্ধুকে

পরের সংবাদ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাঙালির প্রাণের উৎসব

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বাঙালির প্রাণের ভাষার মাস। এ মাসেই আমরা অর্জন করেছিলাম প্রিয় বাংলা ভাষা। বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা। পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের এক মহামিলনমেলায় রূপ নেয় সবার প্রিয় এ গ্রন্থমেলা। আত্মার সঙ্গে আত্মার যেমন সম্পর্ক, তেমনি বইয়ের সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক। জ্ঞানের বিনিময় ঘটে বইয়ের মাধ্যমে। বই পড়া ছাড়া জ্ঞানার্জনের সঠিক পথ নেই। বই হলো মানুষের জাগতিক, মনস্তাত্ত্বিক, নৈতিক, দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক উচ্চমার্গে উপনীত হওয়ার প্রধান সোপান। যে জাতি যত শিক্ষিত, সেই জাতি তত উন্নত। আর শিক্ষার জন্য বই-ই আলোকিত জগতের দিশারি। আমাদের দেশে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলে বইমেলা। ‘বইমেলা’ কিংবা ‘গ্রন্থমেলা’ শব্দ দুটি যেন বাঙালির প্রাণের স্পন্দনে মিশে রয়েছে। বাংলা একাডেমির আয়োজনে এ গ্রন্থমেলা দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে অনন্য অবদান রেখে চলেছে। আর এমন একটি নক্ষত্রময় প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি চেয়েছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগার হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে।
‘বইমেলা’ শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানি না এই বইমেলার ইতিহাস। কীভাবে শুরু হলো এই বইমেলা? কে বাঙালির এই প্রাণের মেলা সূচনা করেন? অমর একুশে গ্রন্থমেলার শুরুটা হয়েছিল অনেক আগে। বাংলা একাডেমি চত্বরে বইমেলা শুরু হয়েছিল চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে। দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ। বর্তমান বাংলা একাডেমি তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণের বটতলায় বই নিয়ে এসেছিলেন প্রকাশনা জগতের এক চিরস্মরণীয় ব্যক্তি, চিত্তরঞ্জন সাহা। এখনকার মতো এমন স্টল আর সাজানো-গোছানো পরিবেশ তখন ছিল না। টেবিল-চেয়ারের আয়োজনও ছিল না। চিত্তরঞ্জন সাহা বই সাজিয়েছিলেন চটের ওপর। ১৯৭১ সালের মে মাসে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতের কলকাতায়। কলকাতায় তখন বাংলাদেশের বহু লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি বই প্রকাশের উদ্যোগ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর ৩২টি বই প্রকাশ করেন। সেসব বই নিয়েই আয়োজন করা হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম বইমেলার। তবে চিত্তরঞ্জন সাহার স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (পরে মুক্তধারা প্রকাশনী) ছিল একমাত্র বেসরকারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন সাহা নিজে চালিয়ে যান এ বইমেলা। চিত্তরঞ্জন সাহার আগ্রহ এবং মানুষের ভালোবাসার কারণে ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি এই উদ্যোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এ সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৮৪ সালে এসে গ্রন্থমেলার জন্য বিধিবদ্ধ নীতিমালা প্রণীত হয় এবং গ্রন্থমেলার নাম হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। সেই থেকে এ গ্রন্থমেলা প্রতি বছর প্রায় একই আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
বইমেলা চলাকালীন প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠের আসর, লেখক আড্ডাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে বাংলা একাডেমি। এছাড়া লেখককুঞ্জে লেখকদের সঙ্গে পাঠকদের মন বিনিময়ের আয়োজনও করে থাকে বাংলা একাডেমি। পাঠকেরা বইয়ের ব্যাপারে আলোচনা-সমালোচনা করে। বইমেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের খবর, প্রতিদিন প্রকাশিত বই, লেখক ও প্রকাশকের নাম প্রকাশ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল মেলার মিডিয়া স্পন্সর হয়ে মেলার তাৎক্ষণিক খবরাখবর দর্শক-শ্রোতাদের অবহিত করে। প্রতি বছরের মতো এবারের বইমেলায়ও পাঠক ও দর্শক সমাগম আশাতীত। এবারের বইমেলায় আরেকটি বিষয় বেশ আলোচিত হচ্ছে, তা হলো অন্যান্য বছরের তুলনায় বইয়ের দাম অনেক বেশি। তবুও সবাই বইমেলায় আসছেন, আসবেন, বই কিনবেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন- এই প্রত্যাশা সবার।

অভিরাজ নাথ : শিশু সাহিত্যিক ও কলাম লেখক, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়