জাতীয় প্রেস ক্লাবের কর্মশালা : শিশুদের আবৃত্তি শিক্ষায় মাতৃভাষাকে ভালোবাসার আহ্বান

আগের সংবাদ

সরেনি একটি কেমিক্যাল কারখানাও : অন্য ব্যবসার আড়ালে চলছে রমরমা বাণিজ্য > বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ৫০৮টি কেমিক্যাল কারখানা

পরের সংবাদ

বের হচ্ছে প্রাচীন জনপদের অপূর্ব নিদর্শন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল গ্রামে অবস্থিত জগদ্দল বিহার । একাদশ শতকে বিদ্রোহী বঙ্গাল সৈন্য কর্তৃক পাহাড়পুর (সোমপুর) বিহার আক্রান্ত ও অগ্নিদগ্ধ হয়। এই বিশৃঙ্খলা এবং বাইরের আক্রমণের ফলে পাল সাম্রাজের সার্বভৌমত্ব লুণ্ঠন হয়ে যায়। বরেন্দ্র অঞ্চল কিছু কালের জন্য স্থানীয় কৈবত নায়েব দিব্যোক এবং তার ভ্রাতুষ্পুত্র ভীমের শাসনাধীনে চলে যায়। একাদশ শতকের শেষার্ধে ভীমকে পরাজিত করে রামপাল প্রিয় পিতৃভূমি বরেন্দ্র উদ্ধার করেন। তিনি প্রজা সাধারণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা অর্জনের জন্য মালদহের সন্নিকটে রামাবতী নামক রাজধানী এবং এর নিকটবর্তী স্থানে জগদ্দল বিহার (বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেন। ইউনেস্কো ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সম্ভাব্য তালিকায় জগদ্দল বিহারের নাম রয়েছে।

মো: আব্দুল আজিজ মন্ডল

নওগাঁর ধামইরহাট সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের অধীন প্রত্ত্বতাত্বিক নিদর্শন ও প্রাচীন জনপদের প্রসিদ্ধ স্থান গুলোর মধ্যে নওগাঁর ধামইরহাটের বৌদ্ধ বিহারটি ৪র্থ বার খনন শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এর আগে ২০০০, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে খনন করে বেশ কিছু মূল্যবান নির্দশন পাওয়া গেলেও এই বিহার উৎখননে আর বড়ো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বিহারটি উপজেলা সদর থেকে ৭ কি: মি: উত্তর পূর্বে জগদল গ্রামে অবস্থিত। জেলা সদর থেকে ৬৫ কি: মি: উত্তরে ঐতিহাসিক দিক থেকে কোতরা নদীর উত্তর পূর্ব পাড়ে অবস্থান। রামচরিতম এর উদ্ধৃতি অনুযায়ী জগদ্দল বিহার বরেন্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত। পাল বংশীয় স¤্রাটদের ও মন্ত্রীদের জয়গাঁথা পাল স্থাপিত্য শিল্পীদের প্রশস্তি সম্বলিত সুবিখ্যাত ৫ কি:মি: পূর্বে মঙ্গলবাড়ী গরুড় স্তম্ভ ও বাদল পিলার অবস্থিত। ৩০ কি:মি: দক্ষিনে সোমপুর বিহার বা পাহাড়পুর বিহার। ৪৫ কি:মি: দক্ষিনে হলুদ বিহার। ১৫ কি:মি: পশ্চিমে ঐতিহাসিক মাহিসন্তোষ অবস্থান। ২০ কি:মি: পশ্চিমে অগ্রপুরী বিহার বা আগ্রাদ্বিগুন ঢিবি। ২৭ কি: মি: পশ্চিমে দিব্যবক রাজার দিবরের দিঘীতে বিজয় স্তম্ভ যার গ্রানাইড পাথর দিয়ে তৈরি দিঘীর মাঝখানে শোভা পাচ্ছে এর ২০ কি:মি: দক্ষিণে আমাইড় রামাবতী যাহা বৌদ্ধ সাংস্কৃতির স্মৃতি বিজড়িত এবং জগদ্দল বিহারের দক্ষিণে ৫ কি: মি: চান্দিরাই বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন রাজার ৩৬৫ টি দিঘী, জৈন্নাত পন্থী দিকম্বরদেও যোগীর ভোপা ইতিহাস ঐতিহ্য এর সাক্ষী বহন করে। জেলার প্রতœতান্ত্রিক নিদর্শনের সমৃদ্ধ সুস্মন্ডিত পুরাকীর্তি গুলো হলো কুসুম্বা মসজিদ যা ৫ টাকার নোটে শোভা পাচ্ছে। বলিহার রাজবাড়ী, দুবলহাটি রাজবাড়ি ও কবি গুরুর প্রতি শহর বিশ্রামার পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। ১৯৯৭ সালে সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আ:লীগ সেক্রেটারি মরহুম আব্দুল জলিল উদ্যোগে ১ম খনন শুরু হয়েছিল। খননে বের আসে ৩০ টি কক্ষ, কক্ষগুলো চৌকোনা, পাতলা ইট, শুড়কির দেওয়াল, পিলার ছাদগুলো , কালো পাথরের খোঁদাই করা কারুকায্য, যা সকলকেই মুগ্ধ করে। বারান্দার পিলার গুলো শৈলপিক কারুকায্য পূর্ণ দর্শকের দৃষ্টি কারে। ২য় খননে ১৩৪ টি প্রতœ বস্তু উদ্ধার সহ ১৬ টি কক্ষে আংশিক স্তম্ভ আবিস্কার হয়েছে। পাশে জগৎনগর অর্থাৎ জগতের বিখ্যাত নগর। পূর্বে নিকেশ্বর বা নিকাই শহর পাশে বিশাল টুক্কামারী দিঘী । অসংখ্য ছোট, বড় পুকুর ও দিঘী নালা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ইট পাথরের ধ্বাংসাব শেষ চিহ্ন। উৎখননে প্রচুর প্রতœ বস্তু আবিস্কৃত হয়েছে। এগুলো ছোট, বড় ও ব্রোঞ্জের মুর্তি। কালো পাথরের স্মৃতি ও অপরিচিত মুর্তি পোড়া মাটির গুটিকা, পোড়া মাটির বল, পোড়া মাটির প্রদীপ, পোড়া মাটির অলংকার , পোড়া মাটির ইট, পাথরের গুটিকা, লোহার পেরেক, মৃৎ পত্রের টুকরা ইত্যাদি। প্রাচীন জনপদের পাশে জলাশয়গুলো প্রবাহিত ছিল। কোতরা নদী এখন বিলাভূমি। ঘুখশী নদী, আত্রাই নদী, মহানন্দা নদী, পুর্নভবা নদী অগ্রপুরী বিহারের পাশ দিয়ে গঙ্গা, যমুনা নদী প্রবাহিত এখন বিলাভূমিতে পরিণত। উল্লেখ্য, একাধিক খননকালে বের হয়ে আসে বৌদ্ধ বিহারের বিভিন্ন বৌদ্দ নির্দশন। বহু প্রাচীন নিদর্শনের অংশবিশেষ যা মাটির নিচে আছে। এসব পুরাকীর্তি রাজ রাজাদের স্থাপিত্য জগদ্দল বিহারের ৪ বর্গ কি:মি: এলাকা জুড়ে ধ্বংস স্তুপ। নিকটেই ঐতিহাসিক আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান দর্শনার্থীদের কাড়ে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি খনন কাজ উদ্বোধন করেন স্থানীয় এমপি শহীদুজ্জামান সরকার, এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী রংপুর বিভাগের প্রত্ত্বতত্ব দপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা মালা, মহাপরিচালক রঞ্জন কুমার দে, গবেষক রংপুর জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মোঃ হাবিবুর রহমান, জ্যৈষ্ঠ গবেষক মোঃ হাসনাৎ বিন, জ্যৈষ্ঠ নকশা গবেষক জিয়াউল হাইদার, পাহাড়পুরের কাস্টডিয়ান ফজলুল করিম, উপজেলা চেয়ারম্যান আজাহার আলী, ওসি মোজাম্মেল হক কাজী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম, প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ আব্দুল আজিজসহ প্রমুখ। প্রতœতাত্ত্বিকদের ধারণা, ব্যাপক অনুসন্ধান, উৎখনন ও গবেষণার মাধ্যমে পাল সম্রাট রামপালের রাজধানী রামাবতীর সন্ধান মিলে যেতে পারে এ জগদ্দল বৌদ্ধ বিহারে। তাদের ধারণা, সেই রামাবতী নগর এখানেই ছিল। কেননা কাছেই রয়েছে চকআমাইর নামে একটি জনপদ। ভৌগলিক অবস্থান, ভবন-অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ ও নামের সঙ্গে কিছুটা মিল থাকায় আড়ানগর ও লক্ষণ পাড়ার কাছে চকআমাইর গ্রামটিই ‘রামাবতী’ বলে অনুমিত হয়।
ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়