ডিএসসিসি মেয়র : হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে

আগের সংবাদ

নির্বাচনী বছরে কর্মসংস্থানে জোর : বেকার ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮৭ হাজার, সরকারি পদ খালি সাড়ে ৩ লাখের বেশি

পরের সংবাদ

আজ সকালটা শিশুদের

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীফা বুলবুল : শীতের হিমেল হাওয়াকে ছাপিয়ে প্রকৃতিতে যেন বসন্ত দোলা দিচ্ছে। চমৎকার একটা শীতোষ্ণ আবহাওয়ায় বেশ চনমনে মেলার পরিবেশ। অনেকেই এসেছে বাসন্তী সাজে। তাদের মনেও দোলা দিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির রঙ। অনেকেই বলছেন, প্রকৃতির এই রূপ মেলার ওপরেও প্রভাব ফেলবে। প্রায় তিন বছরের বিরূপতার পর এই মেলা হবে অনেক আকর্ষণীয়। ঢল নামবে বইপ্রেমীদের। একইরকম প্রত্যাশা স্টল মালিকদেরও। তারা বলছেন, উদ্বোধনের পরপরই টানা দুদিন ছুটি মেলাকে ভিন্ন মাত্রা দেবে। শুরুতেই মেলায় আসার সুযোগ পাবেন নগরবাসী। সকাল থেকে রাত অবধি খোলা থাকবে মেলার দ্বার। এতে শুরুতেই মেলা জমে ওঠার সুযোগ থাকবে।
কয়েকজন প্রকাশক বলেন, গত প্রায় ৩ বছর ধরে বইমেলার আয়োজনের শিডিউল বিপর্যস্ত ছিল। মেলায় আসা আর অবস্থানের ক্ষেত্রেও ছিল বিধিনিষেধ। তাতে মেলার ছন্দপতন ঘটে। সেই প্রতিবন্ধকতা এবার আর থাকছে না।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার মেলার দ্বিতীয় দিনেও মেলা চত্বর ঘুরে দেখা গেছে অনেকটাই অগোছালো। এদিক সেদিক পরিচ্ছন্নতারও বড় অভাব। অনেক স্টল এখনো সাজানো হয়নি, সেজে ওঠেনি লিটলম্যাগ চত্বরও। সেখানে খাঁখাঁ করছে। তবে এর মধ্যেই দেখা গেছে বইপ্রেমীদের আনাগোনা। স্টলে স্টলে বেশ ভিড় দেখা গেছে। বইপ্রেমী আর পাঠকরা বই নাড়াচাড়া করছেন কেউ তালিকা সংগ্রহ করছেন কেউ আবার ঘুরে ঘুরে দেখছেন।
উদ্বোধনের একদিন পরই আজ শুক্রবার ছুটির দিনে বেলা ১১টায় শিশুপ্রহর দিয়ে মেলা শুরু হবে। চলবে একটানা রাত ৯টা পর্যন্ত। বিক্রেতারা বললেন, শুরুর দিন থেকে বইপ্রেমীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, যেমন সকাল দেখে পুরো দিনটা কেমন যাবে আঁচ করা যায়, ঠিক তেমনিই এবারের মেলাও জমবে আশা করছি।
জানতে চাইলে সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ আহমেদ সংস্কৃতিবান অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়ে ভোরের কাগজকে বলেন, গত দুই বছর শিশুরা মেলায় আসতে পারেনি। তারা ঘরবন্দি থাকায় তাদের মানসিক উৎকর্ষতার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছিল। মেলায় আসার সুযোগ পেলে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটবে। আমাদের কাজ তো শুধু বই বিক্রি নয়, একটি মননশীল প্রজন্ম গড়ে

তোলাও লক্ষ্য। মেলায় আসা এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও লেখক অধ্যাপক কবির মজুমদার বলেন, আশঙ্কা ছিল পর পর দুবছর করোনা মহামারির অভিঘাত আর টেকনোলজির যুগে বইমেলায় আসতে পাঠকের আগ্রহ কমে যাবে। কিন্তু সেই অশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বই না কিনলেও কিংবা বিক্রির পরিমাণ কিছুটা কমে গেলেও, নিউমার্কেটে না গিয়ে মেলায় এসে বই দেখার আগ্রহ তো বাড়ছে। তবে হুমায়ুন আজাদ, হাসান আজিজুল হকদের মতো ভালো লেখকের অভাববোধ করছি। আমার বন্ধু কবি নির্মলেন্দু গুণ সেদিন বলল, বন্ধু কথা বলারও লোক নেই এখন। তাই লেখালেখিতে আমার আগ্রহও কমে গেছে।
মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা লোকসাহিত্যে হাটুরে কবিতা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিলু কবীর। আলোচনায় অংশ নেন বেলাল হায়দার পারভেজ, আহমেদ মাওলা এবং তানভীর আহমদ সিডনী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।
অনুষ্ঠানে প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলা লোকসাহিত্য অনেক বৈশিষ্ট্যের কবিতা এবং গান আছে। ‘হাটুরে কবিতা’ এর মধ্যে অন্যতম। হাটুরে কবিতা যে কোনো বিবেচনায় উত্তীর্ণমানের এক ধরনের লোককবিতা। হাটুরে কবিতার প্রচলন এখন নেই তবে তাকে নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ এর ভেতর আমাদের অতীত মূল্যবোধ এবং সমাজচিত্র অবলোকন করা সম্ভব। তাই লোকমানুষ, সমাজ এবং রাষ্ট্রকল্যাণের স্বার্থে হাটুরে কবিতার দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
আলোচকরা বলেন, হাটুরে কবিতা মূলধারার সাহিত্য কিংবা সংস্কৃতিতে মূল্য না পেলেও এর ঐতিহাসিক ও সামাজিক মূল্য অনেক। সমষ্টি-মানুষের চিন্তাধারার প্রকাশ যে সমস্ত বঙ্গীয় লোক-উপাদানে ঘটেছে, হাটুরে কবিতা তাদের অন্যতম। তাই বাংলার সামগ্রিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে গেলে হাটুরে কবিতাকে অবশ্যই আলোচনায় রাখতে হবে।
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, লোক-উপাদান নিয়ে আলোচনায় হাটুরে কবিতার প্রসঙ্গ এলেও আমাদের মূল ধারার সাহিত্যালোচনায় এ বিষয়ক আলোচনা-সমালোচনার পরিসর তেমন একটা নেই। তবে হাটুরে কবিতা যেহেতু তৃণমূলের লোকমানসের কাব্যিক প্রকাশ, তাই অতীতের লোক-মনস্তত্ত্ব অনুধাবনে হাটুরে কবিতা নিয়ে গবেষণার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন আখতার হোসেন, মুহাম্মদ শামসুল হক, ফারুক মাহমুদ এবং পারভেজ হোসেন।
কবিতা পাঠ করেন কবি আসাদ মান্নান, নাসির আহমেদ, মাহবুব আজিজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, লায়লা আফরোজ এবং ফয়জুল্লাহ সাঈদ। পুথিপাঠ (হাটুরে কবিতা) করেন পাবনার শিল্পী ফকির আবুল হোসেন। সংগীত পরিবেশন করেন মহিউজ্জামান চৌধুরী, তিমির নন্দী, রুমানা ইসলাম, তানজিনা করিম স্বরলিপি এবং আজমা সুরাইয়া শিল্পী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়