মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৭০

আগের সংবাদ

রাজশাহীর জনসভায় শেখ হাসিনা : আ.লীগ কখনো পালায় না

পরের সংবাদ

সৈয়দপুরে তিস্তা সেচ ক্যানেলের উভয় তীরে শতাধিক দোকান : উচ্ছেদের দাবি এলাকাবাসীর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : নীলফামারীর সৈয়দপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তিস্তা সেচ ক্যানেলের বাঁধের জায়গা দখল করে অবৈধ বাজার গড়ে তোলা হয়েছে। পাউবোর সৈয়দপুর সেচ কমান্ড এলাকার আওতায় পূর্ব চাপড়া সরমজানি এলাকায় ক্যানেলের উভয় তীরে বসানো হয়েছে ওই বাজার। এতে বোরো মৌসুমে ক্যানেল এলাকায় সেচ সুবিধাভোগীদের ক্ষেতে পানি সরবরাহ বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে সেচ সুবিধাভোগী এলাকাবাসী অবৈধ বাজার উচ্ছেদ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। গতকাল শনিবার সরজমিনে পাউবোর এস সেভেন-টি সেচ ক্যানেলে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের দুই তীরের জায়গা দখল করে শতাধিক কাঁচাপাকা দোকানঘর করা হয়েছে। ক্যানেলের সাড়ে ১২ কিলোমিটারজুড়ে কমপক্ষে ছোটবড় মিলে ১০টি অবৈধ বাজার গড়ে তুলছে এলাকার প্রভাবশালীরা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, অবৈধভাবে ক্যানেলের উভয় তীরে বাঁধের ওপর দোকানপাট গড়ে তোলায় হালকা যান চলাচলেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি দোকানিদের পসরার কারণে পথচারীরাও নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারছে না। সেখানে কথা হয় এলাকার বাসিন্দা রোমান, সাবুল, শওকত, মরিয়ম, জসিমের সঙ্গে। তারা জানান, ক্যানেলের পাড়ের বাজারের দোকানগুলো ভোর থেকে দুপুর ১২টা, আর বিকাল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই সময়ে ক্রেতাসাধারণ কেনাকাটা করতে বাজারে আসেন। দোকানিরা তাদের বেচাকেনার সময় পণ্যের পসরা এমন করে সাজিয়ে রাখে যে, পথ চলাই দুষ্কর হয়ে যায়। বাজার চালু থাকা অবস্থায় রিকশা, ভ্যানযোগে কোনো মানুষ চলাচল করতে পারে না। তাদের মতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ক্যানেলের জায়গা দখল করে দোকানঘর তুলে ভাড়া দিয়ে হাজার হাজার টাকা পকেটস্থ করছে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দটি করার সাহস পায় না। কেউ দখলবাজির বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে হেনস্থা করা হয়। এমন অবস্থায় কেউ মুখ খুলতে চান না।
কথা হয় ওই সেচ ক্যানেলের উভয় তীরের সেচ সুবিধাভোগী কৃষক কলেজ শিক্ষক আমিরুল ইসলাম, মনু মিয়া, সাইদুর রহমান, আশীষ শাহ, মোত্তালেব হোসেনের সঙ্গে। তারা অভিযোগ করে বলেন, চলতি মাসের শেষে তিস্তা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ সেচ ক্যানেলে পানি ছাড়বে। আর এই পানি দিয়ে ক্যানেলের উভয় তীরের কৃষকরা বোরো আবাদ শুরু করবে। কিন্তু যত্রতত্র ক্যানেলের উভয় পাশে অবৈধ বাজার গড়ে ওঠায় বোরোর জমিতে সেচ ক্যানেলের পানি সরবরাহ করা কঠিন হয়ে উঠেছে। অবৈধ দোকানিরা বাঁধের নিচের পানির সংযোগ স্থান বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে বোরো চাষে সৃষ্টি হয় ব্যাঘাত। এমতাবস্থায় সেচ সুবিধাভোগী জমির মালিকরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈয়দপুর সেচ ক্যানেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে ইতোমধ্যে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগকারী কলেজ শিক্ষক আমিরুল ইসলাম বলেন, এস সেভেন-টি ক্যানেলের উভয় পাশে আমার ৩০ বিঘা (৩০ শতকে বিঘা) জমি রয়েছে। কিন্তু ক্যানেলের যে দিক থেকে বোরো মৌসুমে জমিতে পানি সরবরাহ করা হবে, সেই জায়গাতেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ দোকানপাট। ঠিক সময়ে ঠিকভাবে জমিতে সেচের পানি দিতে না পারায় প্রতি বছর বোরো ফসল আবাদে আমরা মার খাচ্ছি। আশানুরূপ ফসল ফলাতে পারছি না। তাছাড়াও এ বছর দুর্যোগের বছর। এ বছর যদি বোরো আবাদে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে কৃষক যেমন ক্ষতির শিকার হবে, তেমনি এ অঞ্চলে খাদ্য চাহিদা পূরণে সৃষ্টি হবে সংকট। অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈয়দপুর সেচ ক্যানেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ আমিনুর রশীদ বলেন, স্থানীয়রা বাঁধে অবৈধ বাজার চালু করায় সেচ কাজসহ বাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পরিচালনা করা বিঘিœত হচ্ছে। তবে কৃষকদের বাঁচাতে সেচের পানি সরবরাহে যা যা করণীয় আমরা পাউবোর পক্ষ থেকে সবকিছুই করব। আর যারা ক্যানেলের জায়গা দখল করে বাজার গড়ে তুলেছেন সেসব দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে। কেউ ছাড় পাবে না।
এ ব্যাপারে পাউবো সৈয়দপুর পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কোনো অবস্থাতেই অবৈধ দখলদাররা রক্ষা পাবে না। যে কোনো মূল্যে সরকারি সম্পদ রক্ষা ও জনগণের সুবিধার্থে শিগগির ক্যানেলের পাড়ের অবৈধ বাজার উচ্ছেদ করা হবে। এ জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়