মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৭০

আগের সংবাদ

রাজশাহীর জনসভায় শেখ হাসিনা : আ.লীগ কখনো পালায় না

পরের সংবাদ

ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে করণীয়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যম বায়ু। আর সেই বায়ু যদি দূষিত হয় তাহলে বাঁচার উপায় কী? বায়ুদূষণের কারণে মানুষের মৃত্যুঝুঁকি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ‘বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর আনুমানিক ৭ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।’ মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ অর্থাৎ শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়’। এমতাবস্থায় গত এক সপ্তাহ ধরে বিশ্বের দূষিত শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকা শীর্ষে অবস্থান করছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে যেখানে মাত্র ৬১ (একিউআই) স্কোর নিয়ে ৩১ নম্বরে ছিল সেখানে ২০২৩ সালে ১ নম্বরে উঠে এসেছে ঢাকা। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলেই বাতাসে দূষণের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বায়ুদূষণ একেবারে বন্ধ করা কখনোই সম্ভব নয়, কিন্তু দূষণ কমানোর জন্য করার অনেক কিছুই আছে। দূষণ কমানোর জন্য সবার আগে দূষণের কারণ চিহ্নিত করতে হবে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ‘ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো’। তাহলে কি আমরা এই তিনটিকে (ইটভাটা, নির্মাণকাজ, যানবাহন) বন্ধ করে দেব? তা তো আর করা যাবে না, যা করতে হবে তা হলো এই ৩টি নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক পরিকল্পনা।
প্রথমেই ইটের ভাটার কথা বলা যাক, ঢাকা শহরে যেসব ইটের ভাটাগুলো রয়েছে তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, কিছু ঢাকার উত্তর প্রান্তে কিছু দক্ষিণ প্রান্তে। যদি ঢাকা শহরের ইটের ভাটার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হতো যেখান থেকে শহরে দূষিত বাতাস ঢুকতে না পারে তাহলে শহরের দূষণ অনেকটা কমানো যেত। ইটের ভাটায় চাইলে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে দূষণ কমানো যায়। বিশ্বের অনেক দেশেই ইটের ভাটা নেই তারা সিমেন্টের ব্লক তৈরি করে ইটের বিকল্প ব্যবহার করে। আমাদের দেশেও চাইলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় এতে দূষণ অনেকটাই কমে যাবে। ঢাকা শহরে যেসব যানবাহন চলাচল করে তার বেশির ভাগের ফিটনেস ঠিক নেই। যার কারণে সেসব ইঞ্জিন থেকে কালো ধোঁয়ার পরিমাণও বেশি হয়। তাই প্রথমেই ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির জ্বালানি ব্যবহার করেও দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব। বিদ্যুৎচালিত যানবাহন বাড়িয়ে জ্বালানি চালিত যানবাহন কমানো গেলে দূষণও কমবে। যেমন- ইলেকট্রনিক গাড়ি কিংবা মেট্রোরেলের মতো যানবাহন। নির্মাণ সাইটের ধূলিকণা বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। সরকারি নির্মাণকাজের মধ্যে সাধারণত রাস্তার কাজগুলো থেকে বেশি দূষণ ছড়ায়। একটি ড্রেনের কাজ বা রাস্তার কাজ বছরের পর বছর চলতে থাকলে দূষণও বাড়ে। বেশি সমস্যা হয় রাস্তার কাজ একপাশে চলে অন্যপাশ দিয়ে যানবাহন চলে, যেখান থেকে ধূলিকণা চারদিকে সহজেই বাতাসের সঙ্গে মিশে যেতে থাকে। এই অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে কাজ করা উচিত। ব্যক্তিগত নির্মাণকাজ থেকেও বেশি দূষণ হচ্ছে বর্তমানে। একটি নির্দিষ্ট সাইটের কাজ শুরু করার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঢাকনার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে নির্দিষ্ট এরিয়ার বাইরে একটি বালিকণাও বাইরে না যায়।
সিটি করপোরেশনকে আরো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা হতে হবে পরিবেশবান্ধব। জনজীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে উন্নয়ন কাজের কোনো মানেই হয় না। কোনো নির্মাণকাজ পরিবেশের ক্ষতি করছে কিনা নিয়মিত নজরদারিতে রাখতে হবে। কেউ আইন অমান্য করলে ব্যবস্থা নিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাস্টবিন রাখতে হবে সব জায়গায় যাতে ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা যায়। কলকারখানার বর্জ্য অপসারণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে দিনে রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এতে ধূলিকণা বাতাসে মিশতে পারবে না, বায়ুদূষণ কমবে। বায়ুদূষণ রোধে জনসাধারণের সচেতনতার বিকল্প নেই। ঢাকার দূষণ কমাতে সমন্বিত পরিকল্পনার পাশাপাশি জনসচেতনতার বিকল্প নেই।

মাজহারুল ইসলাম সৈকত : শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়