মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৭০

আগের সংবাদ

রাজশাহীর জনসভায় শেখ হাসিনা : আ.লীগ কখনো পালায় না

পরের সংবাদ

ক্ষতিপূরণ পাননি মালিক : ঝিকরগাছায় সওজের অর্ধভাঙা ভবন এখন মরণফাঁদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আতাউর রহমান জসি, ঝিকরগাছা (যশোর) থেকে : ঝিকরগাছায় সরকার কর্তৃক ব্রিজের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের পর ওই সম্পত্তিতে থাকা ভবনের অর্ধভাঙা অংশ এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ধসে পড়তে শুরু করা ওই অর্ধভাঙা ভবনের মালিক ২০১৯ সালের ১১ জুলাই সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের চিঠি পেলেও তিন বছরেও টাকা বুঝে পাননি। চিঠিতে স্বাক্ষর দেখা যাচ্ছে যশোর জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা রোসলিনা পারভীন, কানুনগো আসলাম আলী এবং সার্ভেয়ার জাহিদুল ইসলামের, যার এল এ কেস নম্বর ০৭/২০১৭-১৮। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭ (২০১৭ সনের ২১ নম্বর আইন) এর ৮ ধারার (৩)(ক) উপধারা মোতাবেক ওই ভবনের মালিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। চিঠিতে ভবন মালিক আব্দুল্যা হীল কাফির নাম উল্লেখ করে তাকে এক কোটি সাত লাখ আটাশি হাজার ছয়শত চুয়াত্তর টাকা দেয়া হবে মর্মেও স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিপ্রাপ্তির এক বছর পার হলেও ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে গত ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চিঠিতে উল্লিখিত এল এ কেস ০৭/২০১৭-১৮ এর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আবেদন করেন জেল প্রশাসক বরাবর। জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৯ নভেম্বর, ২০২০ সালে তৎকালীন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমানকে লিখিতভাবে নির্দেশ দেন, যার স্মারক নং ৩৪৭(৭)। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৪ সদস্যের একটি টিম বিষয়টি সরজমিন তদন্ত করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, যশোর জেলা গণপূর্ত উপবিভাগ-১ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এবং ঝিকরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ঝিকরগাছা উপজেলার ৬৮ নং কৃষ্ণনগর মৌজার ৩৮ ও ৪৭ নং খতিয়ানের ৯১১ দাগের ০.০৬ একর জমির মধ্যে ০.০০৮ একর অধিগ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত দাগের ওপর অবস্থিত ভবনের দুজন মালিক যথাক্রমে ইমদাদুল হক ও আব্দুল্যা হীল কাফি। এর মধ্যে ইমদাদুল হকের জমি অধিগ্রহণ হলেও আব্দুল্যা হীল কাফির অংশ অধিগ্রহণ হয়নি। ফলে দুজন মালিকের ভবনটি একই রুফ স্লাববেষ্টিত থাকায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া আরো উল্লেখ থাকে যে, ভবনটি যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশে হওয়ায় অর্ধেক ভাঙলে অপর ভবন মালিক আব্দুল্যাহ হীল কাফি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ও অর্ধভাঙ্গা হলে ভনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে জানমালের ক্ষতিসাধন হবে। এ প্রতিবেদনটি ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের সদয় অবগতির জন্য প্রেরণ করেন তৎকালীন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এরপরও আবারো জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন যশোর জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী- এ তিন কর্মকর্তাকে। এ তিন কর্মকর্তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ভবনটি ১৯৪৭ সালের পূর্বে নির্মিত এবং দুজন মালিকের ভবনটি একই রুফ স্লাব দ্বারা নির্মিত ও অবিচ্ছেদ্য। এখানে ভাঙা হলে, ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদনকারী আব্দুল্যা হীল কাফি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এবং ভবনটি বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও জানমালের ক্ষতি সাধিত হবে। এ প্রতিবেদনটিও তারা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিতভাবে ২০২১ সালের ২ জুন পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৩১ মে যশোর জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা কে এম মামুনুর রশীদ বিষয়টি তদন্তপূর্বক জেলা প্রশাসককে উক্ত ভবন মালিক কাফির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদনসমূহ দেখে তার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
এতগুলো কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন, ভূমি অধিগ্রহণ ২০১৭ সালের ২১ নং আইন এর ১৫ নং কলাম বাংলাদেশ গেজেটে স্পষ্ট উল্লেখ থাকার পরও চিঠিপ্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় ভবন মালিক আব্দুল্যা হীল কাফি জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করছেন সেখানে তিন বছরের বেশি সময় ধরে যশোর এল এ শাখায় ঘুরেও সুরাহা পাচ্ছি না। গত বৃহস্পতিবার এ ভবনের উপরতলা থেকে ৪/৫টি ইট ধসে সামনে থাকা পিচের রাস্তায় পড়ে। জনগণের যাতায়াতের রাস্তায় এভাবে ইট ধসে পড়লে এ ভবনের কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে যে কোনো মুহূর্তে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়