শিমুর মেয়েকে বাবা : ‘মা ভুল করেছি মাফ করে দিও’

আগের সংবাদ

স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি : যে ফর্মুলায় স্মার্ট বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

এক রহেগা পাকিস্তান-জিন্দাবাদ!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দ্বিখণ্ডিত হওয়ার মতো বড় ফাটল নিয়েই পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল। সৃষ্টিলগ্নে পূর্ব বাংলার দুর্বল ও দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় শাসনের ন্যূনতম কর্তৃত্বও হাতে তুলে নিতে পারেনি। ১৯৪৭ পরবর্তী পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসনের যেটুকু ভাগ কখনো কখনো পূর্ব বাংলার ভাগ্যে জুটেছে তা ছিল মূলত তাঁবেদারির, তাঁবেদারির বৃত্ত ভাঙতে চেষ্টা করা হলেই কেন্দ্রীয় শাসনের সিনিয়র পার্টনার হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃত্ব পূর্ব বাংলার দুর্বল নেতৃত্বকে তাচ্ছিল্য করে অচিরেই নিষ্ক্রিয় করে দিত।
যে উদার গণতন্ত্রী লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারের ওপর ভিত্তি করে ১৯৭০-এ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে একক নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী আত্মপ্রকাশ করবে এটা অনুমান করতে পারলে নির্বাচন পরিচালনার কৌশলগত প্রক্রিয়াটি হতো ভিন্ন। স্মরণ রাখা আবশ্য সে নির্বাচনকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন একজন বাঙালি-বিচারপতি আবদুস সাত্তার।
পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতির বুলি মুখে নিয়ে আইয়ুব আমলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরবর্তীকালে পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোই হয়েছেন পাকিস্তান ভাঙার প্রধান কারিগর এবং ২৫ মার্চ ঢাকায় সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে সেদিনই ইয়াহিয়ার মতো তিনিও ঢাকা ছাড়েন, যখন করাচি বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তার পাকিস্তানি সমর্থকরা সেøাগান দেয় : এক রহেগা পাকিস্তান, এক রহেগা পাকিস্তান-জিন্দাবাদ। তিনি বিমানবন্দরেই জনতাকে জানিয়েছেন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সুসংবাদ : করুণাময় আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছে। পরদিনের সংবাদ সম্মেলনে যে বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তান রক্ষা করেছেন সে ‘গৌরবের কথা’ শোনান। তার সঙ্গে সেদিন ছিলেন আবদুল হাফিজ পরীজাদা, গোলাম মোস্তফা খার, মির্জা রফি রাজা, আলী খান তালপুর ও মাহমুদ আলী কাসুরী।
ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে একটি ফ্যাসিস্ট ও সাম্প্রদায়িক সরকার প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন, তিনি পাকিস্তানের সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেন না। ২৩ মার্চ ১৯৭১ আমাদের চূড়ান্ত খেলা দেখানো হয়েছে- পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলে নতুন পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নার প্রতিকৃতি পায়ে মাড়ানো হয়েছে। …ভুট্টো বলেন বক্তৃতা, সেøাগান দিয়ে ১২ কোটি মানুষের দেশকে বিভক্ত করা যাবে না। নাইজেরিয়ার মতো দেশ যেখানে একটি অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন হতে দিল না সেখানে পাকিস্তান ভাগ হতে দেয়া যাবে না। আর পাকিস্তানের বিষয় নিয়ে ভারতের নাক গলানোর কোনো অধিকারই নেই।
পাকিস্তানের এককালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুরোদস্তর বাঙালি হামিদুল হক চৌধুরী পুরো দায় ঠেলে দিলেন ভারতের ওপর : পূর্বাঞ্চলকে পশ্চিম থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সম্প্রসারণবাদী সুবিধা আদায়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা ভারত বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞের ভ্রান্ত বিবরণ তুলে ধরছে। ভারতীয় সংবাদের অর্ধাংশ জুড়েই থাকছে উদ্দেশ্যপ্রবণ ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ। ২৫ মার্চের ও পরবর্তী ক’দিনের হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে বলেছেন, ‘যে প্রাণহানি হয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পুনরুদ্ধারে বাধা প্রতিহত করতে গেলে হতে বাধ্য- তবে তা দুঃখজনক। ভারতের উর্বর সংবাদ মাধ্যমের ভাষায় যে কূটনৈতিক আবাসিক এলাকা ধূলিসাৎ হয়ে গেল বস্তুত কূটনৈতিকরা এখনো সবাই সেখানেই বসবাস করছেন। তার বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে : ‘জনগণ সমগ্র দেশকে (পূর্ব ও পশ্চিম) একটি ইউনিট গণ্য করে একটি মাত্র জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে বসার জন্য তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছে- একটি একক দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানসহ পাঁচটি স্বায়ত্তশাসিত ইউনিটে সমন্বয়ে গঠিত সেই দেশের সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। ভারতীয় প্রচারণাকারীরা কি করে দাবি করেন যে পূর্বাঞ্চল পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় এবং সেই অর্থহীন তত্ত্বের ভিত্তিতে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নৈতিক এবং বৈষয়িক সমর্থন দিতে শুরু করেছে। (৭ এপ্রিল ১৯৭১, দৈনিক বাংলা)
(১৯৫০-এর পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন যে মন্ত্রীর হাত দিয়ে পাস হয়েছে পাকিস্তানি রাজনীতি তাকে কতটা অন্ধ করে দিয়েছে এই বিবৃতিই তার প্রমাণ। তার প্রতিবেশী পাড়ার বাসিন্দা হিসেবে আমি তাকে কৈশোরে বহুবার দেখেছি, খতাও বলেছি; তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতিতেও পরিত্যক্ত নেতাদের একজন ছিলেন। ২৫ মার্চের ঘাতক ট্যাংক তার বাড়ির পাশ দিয়েই গেছে। তিনি দেখেননি কিংবা দেখতে চাননি, বরং নারকীয় হত্যাকাণ্ডকে যৌক্তিকীকরণ করেছেন। পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকার সচেতন মালিক এই হামিদুল হক চৌধুরী দেয়ালের লিখনও পড়তে পারেননি। গণআন্দোলনের গর্জনও শোনেননি। একাত্তরে এমন একটি গোষ্ঠীর পূর্ণাঙ্গ সমর্থন পাকিস্তানের সংহতি রক্ষায় সামান্য অবদানও রাখতে পারেনি।)
একাত্তরের মার্চে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো কথিত ‘লন্ডন পরিকল্পনা’র অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তার ভাষ্য- ‘১৯৬৯ সালের অক্টোবরে পশ্চিম পাকিস্তানের পরাজিত নেতারা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগসাজশ করে এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন।’
পশ্চিম পাকিস্তানের ভুট্টোবিরোধী নেতৃবৃন্দও তার আক্রমণের টার্গেট। ‘মূলত এসব নেতা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের অস্তিত্ব, স্থায়িত্ব ও আদর্শকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। …এসব নেতা এমন একজনের কাছে তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছিলেন, যিনি দেশকে টুকরো করতে চেয়েছিলেন… পিপলস পার্টি যে দেশকে টুকরো টুকরো করা থেকে রক্ষা করেছে ইতিহাস তা প্রমাণ করবে।’
ভুট্টো তার দুষ্কর্মের যত সাফাই গেয়ে যান না কেন অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান থেকে শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানি ইসলামপন্থি দলগুলো পর্যন্ত সবাই ভুট্টোকে ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রে অবস্থানকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রেসিডেন্ট পীর মোহসিন উদ্দিন আহমদ মার্চের বর্বরোচিত সেনা আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডকে শ্রেফ ভারতীয় মিথ্যা প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিলেন, বললেন ভারত পাকিস্তানের ‘আজাদী’ হরণ করার চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে- ভারতের কার্যকলাপ আজাদী-পূর্ব দিনগুলোতে মুসলমানদের ওপর হিন্দুদের নির্যাতনের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর বর্বরতা প্রত্যক্ষ করার পরও তিনি তার বিবৃতিতে উল্লেখ করলেন : ‘এই মুহূর্তে সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে শান্তিপ্রিয় জনসাধারণের জানমাল ও ইজ্জত রক্ষার কাজে নিয়োজিত ও দেশের সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী দুষ্কৃতকারী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালাচ্ছে।’ সুতরাং দেশে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করতে নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছেন।
পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে ইত্তেহাদুল ওলেমার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মিয়া মফিজুল হক বলেন, যারা ভারতের তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী হয়ে ভারতীয়দের সাহায্যের আশায় আছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। অতীতে প্রাক-বিভক্তিকালীন ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদ ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ মুসলমানদের সঙ্গে কি ধরনের ব্যবহার করেছিল তা থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। এই মাওলানা মফিজুল হক শত্রæ প্রতিহত করতে এবং অপশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান।

তোষামোদের নগ্ন ভাষা
যখন ২৫ মার্চ ১৯৭১-এর হত্যাযজ্ঞ বাংলাদেশকে স্তম্ভিত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিদিনের নির্মমতা বিশ্বকে বিচলিত করছে পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বাঙালি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আলী ৬ এপ্রিল ১৯৭১ সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে দেশপ্রেমিক নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সশস্ত্র ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের ও তাদের সহযোগীদের প্রতিরোধ করা এবং তাদের একটি চরম শিক্ষা দেয়ার জন্য আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী মাঠে নেমেছে। আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী সব দেশপ্রেমিক মানুষের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার দাবি রাখে। এই সমর্থন যত বেশি হবে, তত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে, দেশের এই অংশে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক তৎপরতা শুরু সহজ হবে। আমি আশা করি ও বিশ্বাস করি যে আমাদের জনসাধারণ পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করবেন এবং জাতির আহ্বানে সাড়া দেবেন, যেমন করে তারা ১৯৬৫ সালে ভারত ও তার সহযোগীদের সব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন।
মাহমুদ আলী তার বক্তব্যের সমর্থনে ভারতের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে সোৎসাহে প্রস্তাব পাস করানোকে ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী অভিসন্ধি প্রতিষ্ঠা করার বিরুদ্ধে তামিলনাড়–র মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধির আপত্তির কথা জানান। করুণানিধি একে প্রতিবেশী পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেছেন।
পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বি এ সালিমি নিজের দল ছেড়ে ১৩ এপ্রিল ১৯৭১ বিবৃতি দিয়েছেন, ইয়াহিয়া ভুট্টোর নাম পাকিস্তানের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার দলের নেতৃত্বের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা’র সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই এবং তিনি তা অনুমোদন করেন না। তার দলের প্রতি এতদিনকার আনুগত্য প্রত্যাহার করে সম্পূর্ণ উল্টোস্বরে বলেন বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা নস্যাৎ করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো যে বীরত্বপূর্ণ ও গৌরবজনক ভূমিকা পালন করেছেন সে জন্য জাতি তাদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। আর তাদের নাম লিপিবদ্ধ হবে স্বর্ণাক্ষরে। জাতি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। ভারত পাকিস্তানের প্রতি নিন্দনীয় শত্রæতামূলক আচরণ করছে। তিনি নিশ্চিত পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দুঃশাসনের চক্রান্ত থেকে দেশকে রক্ষা করবে। বি এ সালিমি দেখে গেছেন তার বিবৃতির শক্তি ইয়াহিয়া খানের পদচ্যুতি আর জুলফিকার আলী ভুট্টোর ফাঁসি ঠেকাতে সামান্য ভূমিকাও পালন করতে পারেনি। এই হচ্ছে দেশবাসীর কৃতজ্ঞতার নমুনা।
এটাও খুব কৌতূহলোদ্দীপক যে এ সময় পাকিস্তান পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো দেশের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের হাতকে শক্তিশালী করতে তিনি তার নিজের দলের সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন।
৮ এপ্রিল ১৯৭১ দৈনিক পাকিস্তান সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা লিখেছে- ভুট্টো বলেছেন : আমাদের মহান প্রতিবেশী চীন এ অঞ্চলে ভারতকে তার সম্প্রসারণমূলক যুদ্ধ লিপ্ত হতে দেবে না… এশিয়ার এই বিরাট শক্তি ১৯৬৫ সালে ভারতকে যে চরমপত্র দিয়েছিল ভারতের তা বিস্মৃত হওয়া উচিত নয়।
পাকিস্তান মুসলিম লীগের ১১ জন নেতার চোখে দেশের অভ্যন্তরের কোনো সমস্যাই পড়েনি বরং তারা মনে করছেন ভারত ভাগ বাতিল করে পাকিস্তানের আজাদী হরণ করতে ভারত উঠেপড়ে লেগেছে, পার্লামেন্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনেছে, সীমান্তে সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দিয়েছে- এর সবই ভারতের দুরভিসন্ধিমূলক কাজ যার লক্ষ্য পাকিস্তানকে ধ্বংস করা। সুতরাং অপশক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিবৃতিদাতারা হচ্ছেন- পাকিস্তান মুসলিম লীগের সহসভাপতি এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি খাজা খয়েরউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক খান, যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট আতাউল হক, যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হক মজুমদার, ঢাকা শহর মুসলিম লীগ সভাপতি মোহাম্মদ সেরাজুদ্দিন, প্রাদেশিক লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম মুজিবুল হক, ঢাকা জেলা মুসলিম লীগ সভাপতি কে এম সেরাজুল হক, জেলার সাধারণ সম্পাদক নেজামুদ্দিন, শহর মুসলিম লীগের সম্পাদক এ মতিন।
অন্যদিকে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইয়ুম গ্রুপ) নেতা সাবেক মন্ত্রী কাজী আবদুল কাদের বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে ভারতের হস্তক্ষেপ সন্দেহাতীতভাবে প্রকাশিত হয়েছে, সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পাকিস্তানের চরম শত্রæ ভারতের পক্ষে কাজ করেছে আওয়ামী লীগ।
১৯৭১-এর এপ্রিলে এ ধরনের বেশ কিছু বিবৃতির মাধ্যমে গণবিচ্ছিন্ন কিছুসংখ্যক রাজনীতিবিদ তাদের কীর্তিকলাপ স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাদের আস্ফালন দ্রুত মিলিয়ে গেছে। বিভাজনের আয়োজনই শুরু থেকে জোরদার করা হয়েছে। এক রহেগা পাকিস্তান সেøাগান এখন ব্যর্থতার মহাকাব্যিক ইতিহাস।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়