‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজন

আগের সংবাদ

মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ : জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে, কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : ব্যর্থতাগুলো খুঁজে বের করে দিন, সংশোধন করে নেব

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সরকারের ব্যর্থতা থাকলে তা খুঁজে বের করার জন্য বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে গতকাল বুধবার বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নের জবাবে এ আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সফলতা কী, ব্যর্থতা কী এটা যাচাই করবে জনগণ। এটা যাচাই আমার দায়িত্ব না। সততা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জনগণের কল্যাণ বিবেচনা করে কাজ করলে ব্যর্থ হব কেন? কোথায় সাফল্য, কোথায় ব্যর্থতা সেটা জনগণই নির্ধারণ করবে। তবে মাননীয় সদস্যের যখন এতই আগ্রহ, তাহলে আমার ব্যর্থতাগুলো আপনিই খুঁজে বের করে দিন, আমি সংশোধন করে নেব।
সরকারদলীয় সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরই ফলশ্রæতিতে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে চালানো হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে (হাউস অব রিপ্রেজেন্টিভস) একটি প্রস্তাব আনা হয়েছে। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন ওহিও অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসম্যান স্টিভ

চ্যাট এবং ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান রো খান্না। পরবর্তীতে কো-স্পন্সর হিসেবে যোগ দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাটি পোর্টার এবং নিউজার্সির ট. ম্যালিনোস্কি। কংগ্রেসম্যানদের উত্থাপিত প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির কাছে পাঠিয়েছে।
জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূলত ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতার ইসিহাস বিকৃত করা শুরু হয়। যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল এবং যারা এরপরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, এই ইতিহাস বিকৃতি ধারাবাহিকভাবে ২১ বছর ধরে চলতে থাকে। তবে যারা সত্যটাকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে চেয়েছিল তারাই আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে চলে গেছে। সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে, সত্য অনেক কঠিন, সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। আর বিচার! প্রাকৃতিকভাবে তার বিচার হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরে বাংলাদেশকে সে ইতিহাস বিকৃতি থেকে থেকে মুক্তি দিয়েছে।
‘জয় বাংলা’ স্লোগানের উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে স্লোগানের ওপর ভিত্তি করে দেশের লাখ শহীদ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই জয় বাংলা স্লোগান কিন্তু নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জাতীর পিতার ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আজ সেই ভাষণ ইউনেসকো কর্তৃক আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, আজ দেশের ইতিহাস শুধু উদ্ভাসিত হয়নি, দেশের মানুষ, বিদেশিরা এমনকি নতুন প্রজম্ম এ ইতিহাস জানার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের যে সংগ্রাম ও স্বাধীনতা অর্জন তা আজ স্বীকৃত, এটাকে আজ আর কেউ বিকৃত করতে পারবে না। সম্ভবও না। শুধু তাই না, জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ যে সমস্ত রিপোর্ট করেছিল সেগুলো কিন্তু আমি ১৪ খণ্ডে বই আকারে প্রকাশ করেছি। ১১ খণ্ড ইতোমধ্যে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে, বাকি তিনটি খণ্ড আমার কাছে আছে, যা আমি পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি, এডিট করছি। এর মধ্য থেকে ধারাবাহিকভাবে বঙ্গবন্ধুর যে সংগ্রামী জীবন, এ দেশের মানুষের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের অধিকার, আইনের জন্য যে সংগ্রাম, তার ইতিহাস কিন্তু এখানে বিবৃত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, নয়াচীন প্রতিটি বইতে কিন্তু তার সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস পাওয়া যায়। আরো একটি বই- বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা নিয়ে আমি কাজ করছি। যা অচিরেই প্রকাশিত হবে।
এ কে এম রহমতুল্লার এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, মা-বোনদের ওপর পাশবিক অত্যাচারকারী, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটকারী সেই সকল যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করেন। কিন্তু ‘৭৫ পরবর্তীতে সবকিছু পালটে যায়। মনে হয় যেন মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে, দেশ স্বাধীন করে অপরাধ করেছে, আর যারা স্বাধীনতাবিরোধী তারাই ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল শুরু করে এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে জিয়াউর রহমান তাদের অন্যতম। তিনি নিজেকেই নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। জিয়া ক্ষমতা দখলের পর বিচারাধীন কারাবন্দি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে দেন। তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে, শুধু তাই না, সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ এবং ৩৮ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে এদের রাজনীতি করার সুযোগ এবং ভোটের অধিকার দেয়, উপদেষ্টা বানায়, মন্ত্রী বানায়। পরবর্তীতে আমরা দেখি তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে এইসব যুদ্ধাপরাধীদের ক্যাবিনেটে স্থান দেয়, মন্ত্রী বানায়। এভাবে যুদ্ধাপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়া- এটা গোটা জাতির জন্য কলঙ্কজনক। আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, যারা জিয়ার সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি ছিল না তাদের বাদ দিয়ে তাদের অপমান করা, তাদের নাম বাদ দেয়া এবং যারা মুক্তিযোদ্ধা না তাদেরও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এটা ঠিক। সেগুলো যাচাইবাছাই করা হয়েছে, ইতোমধ্যেই পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ, এই যুদ্ধ পরিচালনা করার সময় অনেক সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়ির যে মুরুব্বি তাকে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান বা মেম্বার করে রেখেছে, কিন্তু বাড়ির ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে, তাদের অস্ত্র রাখতে দিয়েছে, অপারেশন চালিয়ে, মহিলারা রান্না করে খাইয়েছে। যেজন্য জাতির পিতা একটা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু যারা গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং নারী ধর্ষণ করেছিল তাদের তিনি ক্ষমা করেন নাই, তাদের তিনি বিচার করেছিলেন এবং বিচারের আওতায় এনেছিলেন, জিয়া ক্ষমতা দখল করে তাদের মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসায়, যা লজ্জাজনক, দুঃখজনক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়