‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজন

আগের সংবাদ

মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ : জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে, কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন : স্মার্ট প্রশাসন গড়তে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের। এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে তিনি শুধু ঘোষণা দিয়েই নীরব থাকেননি, এর মধ্যে কাজও শুরু করেছেন। গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন উদ্বোধনের পর মুক্ত আলোচনায় তিনি দেশের সব জেলা প্রশাসকদের ‘স্মার্ট প্রশাসন’ গড়ার তাগিদ দিয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনেও সরকারের মন্ত্রী এবং উপদেষ্টারা ডিসিদের এ কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ডিসিরাও সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ কাজ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার মোট ৭টি অধিবেশন হয়েছে। এর বাইরে প্রধান বিচারপতি ও স্পিকারের সঙ্গে আলাদা দুটি অধিবেশন হয়।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে একটি অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার তিনি আরেকটা টার্গেট দিয়েছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলারে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে মাঠ পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে। ডিসিদের সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
টার্গেট পূরণে প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণা দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটার, অপটিক্যাল ফাইবার প্রযুক্তি যদি আমরা গ্রহণ করতে পারি, তাহলে টার্গেট অর্জন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, অনেকগুলো দেশ নি¤œ আয় থেকে মধ্য আয়ের দেশে গ্র্যাজুয়েট করেছে। দক্ষিণ এশিয়াতে পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কা ২০২৫ বছর

আগে গ্র্যাজুয়েট করেছে। তারা কিন্তু এরপর নেক্সট ধাপে যেতে পারেনি। আমরা এলডিসি হিসাবেও ওদের চেয়ে ভালো আছি। যেসব দেশ এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েট করেছে সেসব দেশের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি উন্নত দেশ হতে পেরেছে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর দেশ উন্নত হতে পেরেছে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী খাদ্য নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়েছেন। এজন্য অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনতে বলেছেন। এই দুটো বিষয় যদি ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ ও ১২ হাজার ডলার মাথাপিছু আয় সম্ভব হবে। এছাড়া ডিসিরা নানান কথা বলেছেন, কোথাও গ্যাসের সমস্যা, বিসিকের শিল্পনগরীতে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেছেন।
রমজানে শক্ত ব্যবস্থা নেবেন, ডিসিদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী : রমজানে দ্রব্যমূল্য ইস্যুতে ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে জেলা প্রশাসকদের শক্ত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল তিনি এ নির্দেশ দেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, রমজান মাস সামনে। কেউ যাতে সুযোগ না নিতে পারে সেজন্য ডিসিদের খেয়াল রাখতে বলেছি। শক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। একই সঙ্গে বলেছি, ভোক্তাদের অধিকারের বিষয়ে তাদের সচেতন করতে হবে।
এছাড়া কুরবানির সময় পশুর চামড়ার দাম না পাওয়া নিয়ে ডিসিদের সতর্ক থাকতে বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। বাণিজ্য প্রসারের জন্য ডিসিদের সহযোগিতা দরকার রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং নিয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে ডিসিরা সতর্ক থাকবেন। তারা সরকারের হাত। সরকারের সব পদক্ষেপ তাদের বাস্তবায়ন করতে হয়।
জ্যামারের কারণে কলড্রপ বেশি : চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট টাওয়ার না থাকা এবং প্রচুর জ্যামার বসানোর ফলে নেটওয়ার্ক থাকলেও কল ড্রপ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের একটি সেশন শেষে তিনি বলেন, কলড্রপ হওয়ার কিছু কারণ আছে। প্রথমত, যে পরিমাণ টাওয়ার থাকার কথা, নেই। টাওয়ারের সংযোগে ফাইবার ব্যবহার না করা, ফাইভ-জি চালু করতে হলেও অবশ্যই ফাইবার সংযোগ লাগবে। আরেকটা কারণ হচ্ছে জ্যামার, প্রচুর জ্যামার বসানোর ফলে নেটওয়ার্ক থাকলেও কলড্রপ হয়। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। আমরা প্রতিনিয়ত কোয়ালিটি অব সার্ভিস ই¤প্রুভের দিকে ফোকাস করছি।
তিনি বলেন, আমাদের যারা টেলিকম অপারেটর আছেন, তাদের কলড্রপসহ অন্যান্য সমস্যা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। কলড্রপ নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা একটি পদক্ষেপ নিয়েছি। সেটি হলো প্রথমবার কল ড্রপে যে টাকা কাটা যাবে, গ্রাহক তার তিনগুণ ফেরত পাবেন। গত বছর বন্যায় নেটওয়ার্ক অবকাঠামো ডুবে যাওয়ায় সিলেট অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যাহত হয়। সে প্রসঙ্গ ধরে ভবিষ্যতের করণীয় নিয়ে ডিসিদের তরফ থেকে সম্মেলনে প্রশ্ন এসেছে বলে জানান মন্ত্রী।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে ফাইভ-জি সেবা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা পুরোপুরি ফাইভ-জিতে চলে যেতে পারতাম। সে লক্ষ্যে প্রস্তাব আমরা একনেকে নিয়েও গিয়েছিলাম। এর জন্য বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা দরকার। ফলে তখন ভেবেছিলাম কিছুদিন পরে আমরা এটা পুরোপুরি চালু করব। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমরা জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চেয়েছি।
কলাগাছ থেকে সুতার সম্ভাবনার কথা বললেন ডিসিরা : কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা তৈরির উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। গতকাল ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এ তথ্য জানিয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী সংবাদিকদের বলেন, সরকারও বিষয়টি ‘গুরুত্বের সঙ্গে’ বিবেচনায় নিয়েছে। আমাদের দেশে প্রচুর কলাগাছ হয়। কলাগাছ থেকে সুতা করা যায়। আমরা এটা নিয়ে রিসার্চ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলব। যদি সম্ভব হয় তাহলে তুলার বিকল্প কলাগাছের সুতাও কাজে লাগাব।
পাটের ব্যবহার বাড়াতে সরকারের উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে ডিসিদের গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এক সময় প্লাস্টিকের বস্তার ব্যবহার অনেক বেড়ে গিয়েছিল। পরে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে নির্দেশনা জারি করে পাট পণ্যের ব্যবহার বাড়িয়েছি। প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটের ব্যাগের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। কিন্তু ইদানীং ভারত থেকে প্রচুর চাল আমদানি করা হচ্ছে। সেসব চাল প্লাস্টিকের ব্যাগে আসে। এই সুযোগে দেশীয় চালগুলো প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে দিচ্ছে। আমরা বলেছি, দেশীয় চাল আগের মতই পাটের ব্যাগে বিক্রি করতে হবে।
নির্বাচনের আগে নতুন সড়ক হবে না : আগামী নির্বাচনের আগে দেশে নতুন করে আর কোনো সড়ক নির্মাণ হবে না। বিদ্যমান সড়কগুলোকে মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা হবে। গতকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসকদের এ তথ্য জানিয়ে সড়ক পরিবজন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, আমি আর এখন নতুন কোনো রাস্তা করতে চাই না। বিদ্যমান রাস্তাগুলো মেরামত করতে চাই, ব্যবহার উপযোগী করতে চাই।
তিনি বলেন, মফস্বল এলাকায় একটি মোটরসাইকেলে তিনজন করে উঠে কারো মাথায় হেলমেট নেই। এ বিষয়গুলো দেখতে ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমি আমার সচিবকে বলেছি, গরিব মানুষের জীবন যেমন আছে তাদের জীবিকাও আছে। তাদের জীবিকার চাকা বন্ধ করে দিতে পারি না। নসিমন করিমন ভটভটি এগুলোকে নীতিমালার মধ্যে আনা হবে। মহাসড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমলেও ছোট ছোট যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনতে না পারলে সব উন্নয়ন ¤øান হয়ে যাবে। এজন্য আমি শৃঙ্খলার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। ডিসিরাও জানিয়েছেন তারা তাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করবেন। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশেরই একটি অংশ।
সর্বকালের সর্বোচ্চ খাদ্যের মজুত রয়েছে : চলতি বছর খাদ্যের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মজুত আছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, প্রায় ১৯ লাখ ২৫ হাজার টন চাল আছে সরকারি মজুতে, যা আগে কোনো দিন ছিল না। ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল একটি সেশন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ধান সংগ্রহ এখনো চলছে। মাসে এক লাখ টন করে ওএমএস দিচ্ছি। কাজেই শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আল্লাহ নিজ হাতে গজব না দিলে দেশে কোনো দুর্ভিক্ষ বা খাদ্য সংকট হবে না।
আরো ৭০ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করা হবে : নতুন করে আরো ৭০ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন শেষে তিনি বলেন, এ বছর নতুন করে আরো ৭০ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যে লাকসাম থেকে আখাউড়া ১৭ কিলোমিটার ডাবল লাইন, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর থার্ড লাইন ১১ কিলোমিটার এবং রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের সঙ্গে পাকশী পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটারসহ মোট ৭০ কিলোমিটার রেললাইন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের প্রত্যেক জেলার সঙ্গে রেলপথ সংযোগ চালু করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ রেল ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমরা সমস্ত রেল ব্যবস্থাকে ব্রডগেজ হিসেবে চালু করতে চাই। তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে যে রেল ব্যবস্থা বন্ধ হয়েছিল, দুই দেশের চাহিদা অনুযায়ী নতুন করে সেগুলো চালু করতে চাই। বাংলাবান্ধা থেকে শিলিগুড়ি এবং আখাউড়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত রেলপথ সংযুক্ত করতে চাই। এছাড়া চলতি বছরের মধ্যেই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে রেলপথ চালু করার পাশাপাশি খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেল লাইনের প্রকল্পটি আগামী জুনের মধ্যে উদ্বোধন করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়