‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজন

আগের সংবাদ

মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ : জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে, কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনে সাবের চৌধুরী : নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া প্রশংসনীয় উদ্যোগ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সিলেট অফিস : ৮ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন সফল করার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে সমাপনী অধিবেশনে ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। নীতি ও কর্মের রূপান্তর করার জন্য আমাদের এখন শনাক্ত করতে হবে কীভাবে নদী ও প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্যায়ন করা যায়।
তিনি বলেন, সরকার বিবিএস-এর সহায়তায় প্রাকৃতিক সম্পদের হিসাব করার উদ্যোগ নিয়েছে যেখানে নদীও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে। এটি দেশের জিডিপিতে প্রতিফলিত হবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্যায়নের ওপর বার্ষিক প্রকাশনা থাকবে। এ ছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, পানি ও এর ব্যবস্থাপনার মধ্যে যোগসূত্রকে সর্বত্র জোর দিতে হবে। যেহেতু আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে রয়েছি এবং দেশের আরো উন্নয়ন ঘটছে, তাই পানি শাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠবে। তিনি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত পানি জাদুঘরকে কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায় সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন এবং পানি ও নদী সম্পর্কে মানুষের জানার জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরির বিষয়েও অভিমত দেন।
একশনএইড বাংলাদেশ এর আয়োজনে ‘জীবন-জীবিকার জন্য পানি এবং নদী : যুবদের ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সিলেট জেলায় গত ২৩ থেকে ২৫ জানুয়ারি তিন দিনব্যাপী ৮ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট জেলার ফেঞ্চগঞ্জে উপজেলায় কুশিয়ারা নদী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা পরিদর্শনের মাধ্যমে সম্মেলনের সূচনা হয়।
এই সম্মেলন নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সরকার প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করে পানি ও নদী সম্পর্কিত সমস্যার ক্ষেত্রে যুব সংহতকরণ এর উপর আলোকপাত করে। সম্মেলনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পানি ও নদী শাসনে অবদান রাখতে পারে এমন বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় উঠে আসে।
সম্মেলনটি পাঁচটি বিষয়ভিত্তিক ক্ষেত্র- জলাশয় ইতিহাস, রূপবিদ্যা এবং পরিবর্তন; নদী একটি জীবন্ত সত্তা এবং নদীর ওপর নৃতাত্ত্বিক হস্তক্ষেপের প্রভাব; পানি ও নদী অধিকারে যুব সম্পৃক্ততা; আন্তঃদেশীয় নদী ও পানি রাজনীতি; উদ্ভাবন, পানি, বাস্তুতন্ত্র ও টেকসই জীবিকাকে আবর্ত করে অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, মৎস্য আহরণ, কৃষিকাজ এবং শিল্প সবই পানির ওপর নির্ভর করে, যেখানে বাংলাদেশের ৮২০ টিরও বেশি নদী রয়েছে। যা আমাদের ভূখণ্ডকে বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত ব-দ্বীপে পরিণত করেছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি। যার ফলে নদী ভাঙন, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ এবং অন্যান্য ঘটনা বেড়েছে। এটি আমাদের জন্য একটি অস্তিত্বের প্রশ্ন, এজন্য পানির বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কিত সমস্যা মোকাবিলায় প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান খুঁজতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি আঞ্চলিক শান্তি ও সংহতির জন্য সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ২০১৯ সালে দেশের উচ্চ আদালত তুরাগ নদীকে জীবিত সত্তা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়, যা একটি যুগান্তকারী রায়। একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, নদীর প্রভাব আমাদের জীবন ও জীবিকার ওপর ব্যাপকভাবে রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নদীগুলো দখল ও দূষিত হচ্ছে। নদীগুলোর আয়তনও সংকুচিত হচ্ছে দিনদিন। নদীর অস্তিত্ব ও প্রাণ আছে। জোর করে এর গতিপথ পরিবর্তন করা প্রকৃতি এবং মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। নদীগুলোকে প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত হতে দিতে হবে। সম্মেলনের একাধিক সেশন সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো ভাগ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। এই বছর আমরা আমাদের স্বপ্ন, সংস্কৃতি এবং জীবন ও জীবিকার অংশ হিসাবে নদী ও পানির ওপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে তরুণদের অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যেহেতু আমরা ৮ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন শেষ করছি, আমি বিশ্বাস করি এই সম্মেলনগুলো আমাদের সঠিক পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে সারা দেশ এবং দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলের মানুষকে পানি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। এই বছর যেহেতু আমরা নদীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তরুণদের সম্পৃক্ত করার গুরুত্বের উপর জোর দিচ্ছি, নীতিনির্ধারকদেরও ভাবতে হবে কীভাবে দেশের ছাত্র সংগঠনগুলিকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি নদী ও পরিবেশের সমস্যাগুলির পক্ষে সমর্থন করার জন্য সংগঠিত করা যায়।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এর সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ এন্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ এর ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, নদীর অবয়ব নির্ভর করে পানি ও পলল প্রবাহের ওপরে। এসবের পরিবর্তন হলে স্বাভাবিকভাবেই নদীর ভৌগোলিক পরিবর্তন আসে যার কারণে নদী ভাঙন দেখা দেয়। নদী ভাঙনের ফলে মানুষের বসতি ও ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে নদী শাসনের কথা আসে, আর এই নদী শাসন করতে গেলেই নদীর স্বাভাবিক অবস্থা ও প্রবাহগত চরিত্রের পরিবর্তন আসে। তাই এসব বিষয় বিবেচনা করে টেকসই সমাধানের পথ বের করতে হবে।
ভারতের পরিবেশ ও জলবায়ু সাংবাদিক জয়ন্ত বসু বলেন, আমাদের একটি উপায় চিহ্নিত করতে হবে যাতে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েরই উপকার করে। এসব নদীর পানির ওপর উভয় দেশের জনগণের সমান অধিকার রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বরাদ্দ চুক্তি অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত নদীর জন্য আলোচনার একটি প্রেক্ষাপট শুরু করেছে এবং আমাদের এই গতি ধরে রাখতে হবে। পোস্টডেম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট একশন রিসার্চের বিজ্ঞানী মফিজুর রহমান বলেন, আমরা যদি খাদ্য নিরাপত্তা চাই, তাহলে আমাদের পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তন, বাস্তুসংস্থান ও অর্থনীতিসহ নদীর অধিকারের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখতে হবে।
এস এম মনজুরুল হান্নান খান, নির্বাহী পরিচালক, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট; ইব্রাহিম খলিল আল জায়াদ, ভাইস-চেয়ার, একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটি; মো. জহির বিন আলম, অধ্যাপক, সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; শেখ রোকন সাধারণ সম্পাদক, রিভারাইন পিপল; হাসিন জাহান, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ; ডা. ঝাং জিন, সহযোগী অধ্যাপক এবং ভাইস ডিরেক্টর, সেন্টার ফর আফ্রিকান স্টাডিজ, সাংহাই নরমাল ইউনিভার্সিটি; কলকাতায় অবস্থিত লিভিং ওয়াটারস মিউজিয়াম (এলডব্লিউএম) এর আর্ট এন্ড আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর সুকৃত সেন অন্যদের মধ্যে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনের অগ্রগতির পথ হিসেবে নদীর অধিকার নিশ্চিত করতে তরুণদের আরো বেশি সম্পৃক্ত হতে হবে বলে জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়াও দেশের প্রতিটি নদীর জন্য একটি যুব প্ল্যাটফর্ম চালু করার প্রস্তাবনা আসে, যা নদী রক্ষাকারীদের কার্যক্রমকে নেতৃত্ব দেবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়