হাইকোর্টে বিএনপি নেতা খোকন ও মিলনের জামিন

আগের সংবাদ

ভোটের আগাম প্রচারে আ.লীগ : সভা-সমাবেশে উন্নয়ন তুলে ধরে নৌকায় ভোট চাওয়া হচ্ছে

পরের সংবাদ

সর্বজনীন পেনশন বিল পাস : জনগণের টাকার গ্যারান্টি দাবি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন বিল-২০২২’ পাস হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। তবে কতিপয় সংশোধনী গ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী।
নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে গতকাল সংসদে এ ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস করেছে। বিলে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সি সব নাগরিকের নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্বরাও এই আইনের আওতায় নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা দেয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স হতে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। আজীবন বলতে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, একজন পেনশনার আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন। তবে পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেয়ার আগে মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।
এতে আরো বলা হয়েছে, পেনশন তহবিলে জমা দেয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন- যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। আইনে পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে। এর আগে বিলটি পাশের ব্যাপক বিরোধিতা করে

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে এ বিলের কথা উল্লেখ ছিল। দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ লাখ মানুষ চাকরি করে, বাকিটা বাইরে। বিলে বলা আছে, দেশের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র, দুস্থ অসহায় জনগোষ্ঠীর জন্য বিলটি আনা হবে। কিন্তু আমাদের সংবিধানে ১৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক অধিকার- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা নিশ্চিত করবে। আর ১৫ (ঘ) ধারার বিধানমতে, দেশের অভাবগ্রস্ত, দুস্থ ও অসহায় মানুষ সরকারি সহায়তা পাবেন। এটা আগে থেকেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। তাহলে বিলটি কেন আনা হচ্ছে? এটা সংবিধানের সঙ্গে স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এতটা খারাপ যে, জনগণ পেনশনের এ বিলে টাকা দেবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যেভাবে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে, কানাডায় বেগম পাড়া হচ্ছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় পাচার হচ্ছে, ব্যাংক লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাঠানো হচ্ছে, তার কোনটিই অর্থমন্ত্রী ফেরত আনতে পারেননি। আবার জনগণের এ অর্থ ব্যাংকে থাকবে। কিন্তু বিলে গরিব মানুষের এসব অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ ব্যাংক মালিক, ম্যানেজাররা মিলে ঋণ দেয়ার নামে ব্যাংক লুটপাট করে আবার অন্যকেও সুযোগ দেয়। এমনকি এটা বন্ধ করতে তিনি কোনো যথার্থ উদ্যোগই নেননি। এ সময় চুন্নু অর্থমন্ত্রীকে এ বিষয়ে কিছু বলার জন্য আহ্বান জানান।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এই সর্বজনীন পেনশনকে বেসরকারি একটি প্রফিডেন্ট ফাণ্ডের বাইরে আমার কিছু মনে হচ্ছে না। আপনি কিছু টাকা দেবেন আর সরকার দেবে মুনাফা। কিন্তু কী মুনাফা দেবে তা বিলে স্পষ্ট করে বলা নেই। কারণ ১৫ (ঘ) তে বলা আছে, রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে জনগণের বার্ধক্যকালীন চিকিৎসা, স্বাস্থ্য তার রোগব্যাধিতে চিকিৎসা দেবে। রাষ্ট্র কি তাহলে কন্টিবিউশন দিয়ে নিশ্চিত করবে? রাষ্ট্রটি তাহলে জনগণের চাঁদা দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে? এটা তো সংবিধান সমর্থন করছে না। এটা কেবলই একটা প্রফিডেন্ট ফান্ড।
তিনি বলেন, বিলটি সার্বজনীন হচ্ছে না। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আছেন, অর্থমন্ত্রী আছেন, সচিবরা আছেন, সিকিউটিরি এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধিরা আছেন। সেখানে সংসদ সদস্য নেই, অন্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরাও নেই, জনগণের প্রতিনিধিও নেই। জাস্ট একটা ব্যবসায়ী ক্লাবের কমপোজিশন। তিনি জনগণকে কি মুনাফা দেয়া হবে তার সুষ্পষ্ট ব্যাখা জানতে চান।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, সাধারণত বিশ্বে চার ধরনের পেনশন স্কিম চালু রয়েছে- একটা হচ্ছে ফাণ্ডেড, আনফাণ্ডেড, ডিফাইন বেনিফিট এবং আর একটা হচ্ছে ডিফাইন কনট্রিবিউশন। কিন্তু আমাদের এটি আসলে কোন ধরনের পেনশন তা পরিষ্কার না। যে টাকা জমা হবে তার নিরাপত্তা কোথায়? এ বিশাল অঙ্কের অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করা হবে তারও উল্লেখ নেই।
বিলটিকে ‘শিয়ালের কাছে মুরগী রাখা’র উদাহরণ টেনে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জনগণ তাদের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংকে রাখবে আর ব্যাংকওয়ালা তা দেদারসে বিদেশে পাচার করে দেবে। ব্যাংকের ওপর থেকে মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। জনগণের টাকা ব্যাংকে নেয়ার একটা ফাঁদ, ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট হচ্ছে, অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার নেই, দেখারও নেই।
তিনি বলেন, দেশে খেলাপি ঋণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, পাচার হচ্ছে। এ দেশে ২০১৯ সালে ঋণখেলাপিদের সবচেয়ে সুবিধা দেয়া হয়। পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে মামলা হয়েছে ৭৫২টি, বিদেশে মানিলন্ডারিং মামলা ১১৯টি, তদন্ত চলছে ৩৫০টি, বিচার হয়েছে মাত্র ১০টির। অর্থাৎ আমরা টাকা রাখব, সে টাকা পাচার হয়ে যাবে। কেননা, মানিলন্ডারিংকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। কানাডার বেগমপাড়া, সিঙ্গাপুরে, মালয়েশিয়া, কুয়েতসহ বহু দেশে আমাদের দেশের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তির বাড়ি আছে, জমি আছে। হাইকোর্ট বার বলছে, এসব লোকের তালিকা দিন, কই দেয়া হচ্ছে- কই।
স্বতন্ত্র এমপি রেজাউল করিম বলেন, সরকারি চাকরিজীবীরা ৩২-৩৫ বছর জীবনপাত করে চাকরি করেও পেনশন পায়নি। অনেক চাকরিজীবী আছেন- যারা বছরের পর বছর পেনশনের জন্য জুতার তলা ছিঁড়ে ফেলছেন, কিন্তু তারা পেনশন পাচ্ছেন না। আর সাধারণ মানুষ যারা, পেনশন কোথা থেকে পাবেন তার বারান্দা পর্যন্ত দেখেননি, চেনেন না। তারা কী সত্যি ৬০ বছর বয়সে গিয়ে জীবনের এসব সঞ্চয় তুলতে পারবেন? এ আমি বিশ্বাস করি না। কেননা, তার আগে ব্যাংক থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাবে। ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়