কাগজ প্রতিবেদক : বিভিন্ন সময় ভুয়া র‌্যাব সদস্য পরিচয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও এবার ছিনতাইয়ে জড়িয়েছেন র‌্যাবের আসল এক সদস্য। গভীর রাতে রাজধানীর মহাখালী উড়াল সড়কে ফিল্মি কায়দায় ছিনতাই চেষ্টার অভিযোগে ওই র‌্যাব সদস্যসহ মোট ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বনানী থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। গত শুক্রবার মধ্যরাতে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত র‌্যাব সদস্যের নাম আল মোমেন (২৬)। তিনি র‌্যাব-১ এ কর্মরত আছেন। গ্রেপ্তারকৃত অপর দুজন হলেন- আরিয়ান আহমেদ জয় ও মো. ফরহাদ হোসেন (২২)। এদের মধ্যে ফরহাদ ভুক্তভোগীদের ভাড়ার প্রাইভেটকারটির চালক। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, একটি স্টিলের তৈরি হ্যান্ডকাপ, একটি ট্রাফিক সিগনাল লাইট, একটি কালো রংয়ের র‌্যাবের জ্যাকেট ও একটি গোল্ডেন কালারের প্রাইভেটকার উদ্ধার করা। বনানী থানার ওসি নুরে আজম মিয়া গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, ছিনতাইয়ের অভিযোগে একজনকে হাতেনাতে ও পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন র‌্যাব সদস্য রয়েছেন। ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগী শহীদুল ইসলাম গতকাল বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে র‌্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বনানী থানা সূত্র বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে অনুসন্ধানকালে জানা যায়, আল মোমেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক। তিনি বর্তমানে প্রেষণে র‌্যাব-১, উত্তরা, ঢাকায় কর্মরত আছেন। তার সৈনিক নম্বর-১০০৭৫৪৩। আল মোমেনকে সামরিক আদালতে বিচার তথা কোর্ট মার্শাল করার নিমিত্তে থানা পুলিশের

মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় হস্তান্তর করা হবে।
ভুক্তভোগী মো. শহীদুল ইসলামের মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে শহীদুল ইসলাম তার ভাগ্নে মো. রিয়াজকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার রাতে একটি ভাড়ার প্রাইভেটকারে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। সেখানে তার বিদেশ ফেরত এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। রাত পৌনে ১টার দিকে ওই প্রাইভেটকারেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তারা। বনানী থানার আমতলী ট্রাফিক বক্সের উপর বরাবর মহাখালী উড়াল সড়কের উপর রাত সোয়া ২টার দিকে আকস্মিকভাবে একটি প্রাইভেটকার তাদের প্রাইভেটকারকে ব্যারিকেট দিয়ে গতিরোধ করে। ওই প্রাইভেটকার থেকে ৩ জন ব্যক্তি নেমে তাদের প্রাইভেটকারের কাছে এসে পিস্তল দেখিয়ে সঙ্গে থাকা সব মালামাল নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বাঁচাও-বাঁচাও বলে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন স্থানীয় লোকজন আরিয়ান আহমেদ জয় নামে একজনকে আটক করে। অপর আসামিরা তাদের প্রাইভেটকার নিয়ে পালিয়ে যায়।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিলে বনানী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আরিয়ান আহমেদ জয়কে হেফাজতে নেয়। পরে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে তার সহযোগীদের নাম আল মোমেন, মো. ফরহাদ হোসেন ও জালাল। বনানী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে আল মোমেন ও ফরহাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। ভুক্তভোগী শহীদুল ইসলামের ভাগিনা মো. রিয়াজ জানান, ছিনতাইয়ের সময় তাদের মারধর করা হয়েছে। এতে তার মামা শহীদুল গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। শহীদুল এক সময় সৌদিআরবে থাকতেন। বর্তমানে বিমানের টিকেট বিক্রি করেন। সিংগাইরে বাসতি বাজারে তার অফিসও রয়েছে।