মাছরাঙা টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা ডা. নাতাশার মৃত্যু

আগের সংবাদ

৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপনকালে বিশ্বব্যাংক এমডি : বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের সর্ম্পক নতুন মাইলফলকে

পরের সংবাদ

পিবিআইয়ের আদলে হচ্ছে পুলিশের ‘সাইবার ইউনিট’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারের মতো মাধ্যমগুলোতে ঢু-না মারলে যেন দিনই পার হয় না। শুধু সামাজিক মাধ্যম নয়, জীবনের সবক্ষেত্রেই তথ্যপ্রযুক্তির নির্ভরতা বাড়ছেই। এতে জীবন যেমন সহজতর হচ্ছে, বিপরীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধও। পর্নোগ্রাফি, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা উত্তোলন, নারীদের সম্মানহানি, অনলাইনে জঙ্গি সংগঠনে ভেড়ানো, সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে হানাহানি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার প্রভৃতি ‘সাইবার অপরাধ’ আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছেছে।
তাই সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের বিশেষ ইউনিট ‘সাইবার পুলিশ ইউনিট’ গঠন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে এই ইউনিট গঠনের প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। মন্ত্রণালয় ও পুলিশ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) আদলে শিগগিরই এই ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হবে।
বর্তমানে শুধুমাত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও র‌্যাবে ছোট পরিসরে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলছে। বিভাগ, জেলা ও থানা পর্যায়ে কোনো ব্যবস্থা নেই। ঢাকা মহানগর এলাকার বাসিন্দারা এসব ইউনিট থেকে সেবা নিতে পারলেও বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বাসিন্দারা এই সেবা থেকে বঞ্চিত। পিবিআইয়ের মতো ঢাকায় হেড অফিস এবং প্রতি জেলায় একটি সাব অফিস থাকবে এই ইউনিটের। ফলে সাইবার অপরাধের শিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দারাও এই সেবা নিতে পারবেন।
এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের প্রায় সব মামলাই ৫৭ ধারায় হলেও তথ্যপ্রযুক্তিতে পূর্বঅভিজ্ঞতা ছাড়াই থানা পুলিশ মামলাগুলোর তদন্ত করে আসছিল। সাইবার পুলিশ ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হলে প্রশিক্ষিত সদস্যরা মামলাগুলোর নির্ভুল তদন্ত করতে পারবে। এতে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হবে, সাইবার অপরাধও কমে আসবে।
এদিকে গত কয়েক মাস ধরে পুলিশের সাইবার ইউনিট গঠন নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যত বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আলোচনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে গড়িয়েছে। বিগত কয়েকটি বৈঠকে কমিটির অনেক সদস্য সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আলাদা ইউনিট গঠনের বিষয়ে জোর দিয়েছেন। ২৪তম বৈঠকে কমিটির সদস্য ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান

তার আলোচনায় বলেন, অনলাইনে দেশবিরোধী নানান ধরনের প্রচারণা এবং অনলাইন জুয়া বেড়ে যাওয়ায় পুলিশের সাইবার ইউনিট গঠন করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সাইবার ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দেশে পুলিশের অনেক বিশেষায়িত ইউনিট থাকলেও সাইবার নিয়ে কাজ করার জন্য পুলিশের কোনো বিশেষায়িত ইউনিট নেই। সিআইডি ও পুলিশের অন্যান্য ছোট ছোট ইউনিটের মাধ্যমে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে বর্তমানে অনলাইন জুয়া, সাইবার ক্রাইম বেড়ে যাওয়ার একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করা সময়ের দাবি। কমিটির সভাপতি ও ঢাকা-২০ আসনের এমপি বেনজির আহমেদ পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন করা সময়ের দাবি উল্লেখ করে ইউনিট গঠনের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বৈঠকে জরুরি ভিত্তিতে আলাদা ইউনিট গঠনের জন্য কার্যক্রম শুরু করার সুপারিশ করা হয়।
সম্প্রতি শেষ হওয়া পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতবিনিময়ে উঠে এসেছে সাইবার ইউনিট গঠন। ওই দিনের আলোচনায় অংশ নেয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা বিশেষায়িত কোনো ইউনিট নেই। তাই যতদ্রুত সম্ভব এই ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হবে বলে পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ কর্মকর্তা ও সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারই প্রথম সাইবার অপরাধ ঠেকাতে পূর্ণাঙ্গ একটি ইউনিট হচ্ছে। সাইবার পুলিশ অপরাধ ঠেকাতে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টহল দেবে। সাইবার ক্রাইম সার্ভিলেন্স ও পেট্রলিং কার্যক্রম চালাবে এই সংস্থা। বিদ্বেষ ছড়ানো, সা¤প্রদায়িক উসকানি বন্ধেও কাজ করবে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের মামলার তদন্তও করবে।
পুলিশেরই এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে দেশে ২৬৭টি সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয়। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭১টিতে। ২০১৭ সালে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে অন্তত ১৩শ’ সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয়। ২০১৭ সালের পর থেকে বিগত বছরগুলোতে এই অপরাধের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে বহুগুণ। এছাড়া জঙ্গিদের মধ্যে অন্তত ৮২ ভাগ তরুণ অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অন্ধকার পথে গেছে, যা সাইবার অপরাধের ভয়ংকর দৃষ্টান্ত। এসব অপরাধ ঠেকাতে সাইবার পুলিশের বিকল্প নেই। শুধু জঙ্গিবাদ নয়, আর্থিক অপরাধ, প্রতারণা, নারীদের সম্মানহানি, সা¤প্রদায়িক উসকানি ছড়িয়ে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়ার ক্ষেত্রেও সাইবার স্পেস ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব বিষয়ও দেখবে সাইবার পুলিশ ইউনিট।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠনের জন্য গত ৯ সেপ্টেম্বর জননিরাপত্তা বিভাগে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রস্তাব পাঠানোর জন্য পুলিশ সদরদপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তর থেকে ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাব পাঠনো হয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগে। সেখানে বলা হয়েছে, ইউনিটটির নাম হবে ‘সাইবার পুলিশ ইউনিট’। এ ইউনিটটি গঠন করার জন্য ২ হাজার ১২১ জনবলের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ইউনিটের প্রধান হবেন একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা। ইউনিটের হেড অফিস হবে ঢাকায়। তবে দেশের প্রতিটি জেলায় সাইবার ইউনিটের সাব অফিস থাকবে।
পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা বলেছেন, পিবিআইয়ের আদলেই পুলিশ সাইবার ইউনিট গঠন করা হবে। প্রস্তাবনায় ইউনিট প্রধান হিসাবে ডিআইজি পদ মর্যাদার কর্মকর্তার কথা বলা হলেও ইউনিটপ্রধান হিসেবে একজন অতিরিক্ত আইজিপির বিষয়টিও আলোচনায় আছে। ইউনিটটি বিদ্যমান পুলিশ কাঠামোয় থেকে স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে কাজ করবে। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে¡ দুজন এএসপি, চারজন ইন্সপেক্টর, আটজন এসআই, ১৬ জন এএসআই এবং এর সঙ্গে সাপোটিং ফোর্স নিয়ে জেলার অফিস গঠন করা হবে।
বিভিন্ন ইউনিটের কয়েক বছরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, এই তিনটি ইউনিটের সাইবার ইউনিটের যাত্রার পর থেকে এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে ১৩২৭টি। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭৫৯ জন সাইবার সন্ত্রাসীকে। বর্তমানে সাইবার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যারা কাজ করছেন, তারাও বলছেন সাইবার পুলিশ ইউনিট গঠিত হলে অনেক অপরাধ ও অপরাধী সহজে প্রতিহত করা সম্ভব হবে। বর্তমানে সাইবার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যেই সংখ্যক জনবল কাজ করছে, সেটি বর্তমানে ঠিক থাকলেও দিনকে দিন সাইবার অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় এই জনবল দিয়ে সাইবার অপরাধ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এই কাজের জন্য আরো প্রশিক্ষিত জনবলও বাড়বে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইকবাল হোসাইন বলেন, বর্তমানে সাইবার সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ে কাজ করা জনবল যেমন কম, তেমনি প্রশিক্ষিত জনবলেরও স্বল্পতা রয়েছে। এতে কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। সাইবার পুলিশ ইউনিট হলে অধিক ও প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে সাইবার অপরাধ দমন করা সহজ হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়