মাছরাঙা টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা ডা. নাতাশার মৃত্যু

আগের সংবাদ

৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপনকালে বিশ্বব্যাংক এমডি : বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের সর্ম্পক নতুন মাইলফলকে

পরের সংবাদ

অঙ্গদান একটি মানবিক শুভ কাজ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেশে প্রথমবারের মতো ২০ বছরের একটি মেয়ের মরণোত্তর দান করা কিডনির সফল প্রতিস্থাপন করা হলো। গত বুধবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সার্জনরা ব্রেন ডেথ এক রোগীর দুটি কিডনি দুজন পৃথক কিডনি রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন। অত্যন্ত আশাজাগানিয়া একটি খবর। আজকের এই হতাশার যুগে মানবিক মূল্যবোধ যখন তলানিতে এসে পড়েছে ঠিক তখন এমন একটি মানবিক ঘটনা জাতীয় মনস্তত্ত্বকে একটি নতুন মাত্রা দেবে। তার সঙ্গে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় চিহ্নিত হলো একটি যুগান্তকারী মাইলফলক। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন আগামী দিনের উন্নত বাংলাদেশের জন্যই প্রয়োজন। প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গগুলো সাধারণত জীবিত জেনেটিক আত্মীয় (পারিবারিক আত্মীয় নয়); হৃদস্পন্দনকারী মৃতদেহের কাছ থেকে পাওয়া যায়। হৃদস্পন্দনকারী মৃতদেহ- কথাটার মধ্যে অনেক গভীর এক অনুভূতি, সম্মান, নৈতিকতা, নীতি, মানবিকতা এবং মনুষ্যত্বের এক জৈবিক মূল্যবোধ রয়েছে। জেনেটিক আত্মীয়; একজন মানুষের একটি অঙ্গ নিঃস্বার্থভাবে দান এবং অন্য দেহের সেই অঙ্গ নিজ দেহে গ্রহণ করে বেঁচে থাকার মধ্যকার কাজটি এত সহজ নয়- একটি মানবিক উত্তরণ রয়েছে এখানে। মৃত একজন মানুষের অঙ্গ নিয়ে আরেকজন মৃতপ্রায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীই বটে। আমার মৃত্যুর পরে আমার হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হচ্ছে আর একটি মানুষের দেহে। সে ব্যক্তিটিকে আমি চিনি না জানি না- কিন্তু আমার জেনেটিক আত্মীয়। বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির ওপর ভর করে আমরা পুনর্জীবন দিতে পারছি।
একটি ব্রেন-ডেথ মৃতদেহ থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে অনেক জীবন সুস্থ করে তোলা যায়- কার্যত জীবন দেয়া যায়। শুধু কর্নিয়া নয়। হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, ত্বকসহ অনেক অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। এর জন্য দরকার একটি সমন্বিত ব্যবস্থা। জাতীয় নীতিমালা আইন সংস্কার। সর্বোপরি জনগণকে সচেতন করা। সময়মতো অঙ্গ সংগ্রহ করে অন্য দেহে প্রতিস্থাপন করা গেলে অনেক রোগী দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যয় থেকে নিস্তার পাবে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। এই প্রক্রিয়ার মূলধন মানবিকতা। মূল ভিত্তি মনুষ্যত্ব। মূল নায়ক মানুষ। আইনের সঠিক ভিত্তিতে যথাযথ সমন্বয় ও অবকাঠামোর ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের অঙ্গ সংগ্রহ এবং প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া কালোবাজারে অঙ্গ বেচাকেনা বন্ধ করতে অবশ্যই সাহায্য করবে।
এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত রোগী, কার্ডিয়াক এরেস্টের রোগী, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত গুরুতর রোগী যাদের বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব বা যাদের মৃত্যু অনেকটা নিশ্চিত তাদেরও এই প্রক্রিয়াতে আনা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয়রা সিদ্ধান্ত দেবে সচেতনতা এবং মানবিক কারণে- কোনো আর্থিকভাবে লাভবানের আশায় নয়। এভাবে মৃত্যুর পরে অঙ্গদানে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমাদের দেশে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম অঙ্গ প্রতিস্থাপন (ব্রেন ডেথ দেহ থেকে) অবশ্যই আমাদের দেশের চিকিৎসা ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে, যা আমি পূর্বেই বলেছি। সাধুবাদ জানাই অঙ্গদানকারী সেই মহান মেয়ে সারাহ ইসলাম আর তার মাকে। তাদের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত একটি মানবিক সমাজ এবং রাষ্ট্র গড়ার পথে অনুকরণীয় হয়েই থাকবে। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরই দেহের কোষের পচন ঘটে। কিন্তু আপনার একটি সিদ্ধান্তে মৃত্যুর পরও আপনার দানকৃত অঙ্গে অনেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।

বিপ্লব শাহনেওয়াজ : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, উপসলা ইউনিভার্সিটি হসপিটাল, সুইডেন।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়