সমাজকল্যাণমন্ত্রী : ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছে মোবাইল কোর্ট

আগের সংবাদ

বৈশ্বিক সংকটে চাপা প্রত্যাবাসন : রোহিঙ্গা শরণার্থী

পরের সংবাদ

এক শিক্ষক ও আট শিক্ষার্থীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফেরদৌস জুয়েল, গাইবান্ধা থেকে : গল্পটি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। নাম তেকানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মোট আটজন। শিক্ষক মাত্র একজন। তাও তিনি প্রধান শিক্ষক। তিনিই পাঠদানের পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজও চালান। অবাক হলেও দীর্ঘ চার বছর ধরে এ অবস্থা চলছে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৭৩ সালে এক একর জমিতে বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে। ২০১৩ সালে এটি সরকারিকরণ হয়। চলতি বছর এই বিদ্যালয়ে আটজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে শিশু শ্রেণিতে পাঁচজন, প্রথম শ্রেণিতে দুজন ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে একজন। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীও নেই। গত বছর বিদ্যালয়টিতে মাত্র চার জন শিক্ষার্থী ছিল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম এখানে ২০১৮ সালে যোগদান করেন। তখনও

বিদ্যালয়ে ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ছিল না।
গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরে তেকানি গ্রাম। গ্রামটি পলাশবাড়ীর কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের অন্তর্গত। গ্রামের তিনদিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা। তেকানি বিদ্যালয়ের অদূরে করতোয়া নদী বহমান। নদী পারাপার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের সামনে বিশাল মাঠ। দুদিকে শীতকালীন ফসলের মাঠ। অন্যদিকে বসতবাড়ি ও লোকালয়। ভবনের সামনে পতাকা উড়ছে। শিক্ষার্থী নেই। তাই কয়েকটি কক্ষ তালাবদ্ধ। মাঠে কয়েকজন কৃষক বস্তায় আলু ভরছেন। ভবনে ঢুকে দেখা গেল, বিদ্যালয়ের কার্যালয়ে আসবাব আছে। কিন্তু কোনো শিক্ষক নেই।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নেই কেন জানতে চাইলে, তেকানি গ্রামের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছাব্বির মিয়া বলে, আমার বাড়ি বিদ্যালয়ের পাশেই। কিন্তু এখানে শিক্ষক নেই। তাই আমরা গ্রাম সংলগ্ন দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত অন্য বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। তেকানি গ্রামের অভিভাবক শেফালি বেগম বলেন, আমি আমার একমাত্র মেয়েকে এ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে দিয়েছিলাম। এবার তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু এখানে ওই শ্রেণিতে অন্য কোনো ছাত্রছাত্রী নেই। আমার মেয়েকে তো আর একাই পড়াবে না। তাই আমি দিনাজপুরের একটি বিদ্যালয়ে দিয়েছি।
একই গ্রামের অভিভাবক গফুর মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষক একজন। এক শিক্ষক কতজনকে পড়াবেন। তাই এলাকাবাসী তাদের সন্তানদের ওই বিদ্যালয়ে পাঠান না। গ্রাম সংলগ্ন দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত একটি বিদ্যালয়ে দেন। শিক্ষক না থাকলে এখানে ছাত্র কেন থাকবে। তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য মারুফ বিল্লাহ বললেন, আমি এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছি। তখন এখানে ২০০-২৫০ শিক্ষার্থী ছিল। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ মুখর ছিল। কিন্তু এখন শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থী নেই। বিদ্যালয় আবার পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীতে ভড়ে উঠুক এলাকাবাসী এমনটাই চান।
এলাকাবাসী জানান, বিদ্যালয়টি বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন আশপাশের লোকজনই এখানে শিক্ষকতা করতেন। সরকারি হওয়ার পর আগের শিক্ষকরা পর্যায়ক্রমে অবসরে চলে যান। তখন করতোয়া পার হয়ে অন্য শিক্ষকরা এখানে আসতে চান না। আসলেও বদলি নিয়ে চলে যান। ফলে বিদ্যালয়টি শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়ে।
এসব বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, শিক্ষক না থাকায় ছাত্রছাত্রী নেই। আমি এখানে যোগদানের পর ২০২০ সালে সরকার সারাদেশে শিক্ষক নিয়োগ দেয়। সেসময় শিক্ষকের জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেয়া হয়নি। কয়েক মাস আগে সারাদেশে আবারো নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এবারো শিক্ষক চেয়ে আবেদন জানানো হয়।
একই বিষয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল আজিজ বলেন, এবারো শিক্ষক চেয়ে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছেন। সেখান থেকে চলতি নিয়োগে তাদের শিক্ষক দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। অন্তত তিনজন শিক্ষক হলেও বিদ্যালয়টি চলতে পারে।
পলাশবাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমা বেগম বলেন, ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেয়ার জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ বলেন, সম্প্রতি জেলায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে আরো শিক্ষক দেয়া হবে। তবে কবে নাগাদ দেয়া হবে তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়