আইনমন্ত্রী : মানবাধিকারের উন্নতি হওয়ায় র‌্যাব নতুন নিষেধাজ্ঞায় পড়েনি

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাসী-জঙ্গি একাকার : স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর যোগসাজস, দুর্গম হওয়ায় অভিযান চালানো কঠিন

পরের সংবাদ

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সংসদে আলোচনা : মুক্তিযুদ্ধকালে জিয়ার রহস্যময় ভূমিকা ফাঁস মেজর রফিকের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে জিয়াউর রহমানের রহস্যময় ভূমিকার কথা তুলে ধরলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তম। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান তখন চট্টগ্রামে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ না দিয়ে জানজুয়ার নির্দেশে সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের জন্য আনা অস্ত্র খালাস করার চেষ্টা করেন। যদিও তিনি জনগণের দেয়া ব্যারিকেড ভেঙে পোর্ট পর্যন্ত যেতে পারেননি। পরে তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ম্যাপ দেখে বর্ডার কোনটা তার দিক নির্দেশনাও চান।
গতকাল বহস্পতিবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা তুলে ধরেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রফিকুল ইসলাম, বীর-উত্তমকে তার স্মৃতিচারণ চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন এবং স্পিকার তাকে প্রায় আধঘণ্টা বক্তব্য দেয়ার জন্য সময় দেন।
গতকাল বৃহসস্পতিবার জাতীয় সংসদে রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তম বলেন, মেজর জিয়া সাহেব, তাকে আমি অনুরোধ করলাম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে, এ সময় আমি সীমান্ত দখল করে ফেলেছিলাম ২৪ মার্চ রাতে। শহর যখন দখল করতে যাব তখন জিয়াউর রহমান সাহেব এবং কর্নেল চৌধুরী তারা আমার কাছে রেলের পাহাড়ে দেখা করতে আসছেন বলে জানান। এর মধ্যে আমরা পাক সৈন্যদের গ্রেপ্তার করে ফেলেছি, এখন শুধু শহর দখলের অপেক্ষায়। এমন সময় জিয়াউর রহমান সাহেব এবং এম আর চৌধুরী কর্নেল বললেন, তুমি যদি আজকে যুদ্ধ করো (২৪ মার্চ রাতের কথা) তাহলে আমরা তোমার সঙ্গে থাকতে পারব না। আমি বললাম, আজ যদি যুদ্ধ শুরু না করেন তাহলে চট্টগ্রাম বেদখল হয়ে যাবে। এ সময় একজন পশ্চিমা কমান্ডারকে (জানজুয়ার) দায়িত্ব দেয়া হয় পোর্টে গিয়ে সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাস করতে। আমি তখন তাদের গণহত্যার প্রস্তুতি বুঝে ফেললাম। হয় গণহত্যা আজকে রাতে শুরু করবে অথবা কালকের মধ্যে শুরু করবে। আমি তখন জিয়াউর রহমান সাহেবকে বললাম, আপনি যদি আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ না করেন তাহলে কালকে হয়তো সময় নাও পেতে পারেন। ২৪ মার্চ আমি শহর দখল থেকে বিরত থাকলাম, কিন্তু আমি জানতাম বিপদ আসছে। ২৫ মার্চ রাতে খবর পেলাম যে কোনো সময় ঢাকা আক্রমণ হতে পারে। আমি জিয়াউর রহমান সাহেবকে আমার সঙ্গে যুদ্ধ করার কথা বললাম। আমি বেরিয়ে আসলাম ইপিআরকে নিয়ে চট্টগ্রাম শহর দখল করার জন্য। কিন্তু জানজুয়ার নির্দেশে তখন জিয়াউর রহমান চলে গেছে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে।
রফিকুল ইসলাম, বীর-উত্তম বলেন, এদিকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এগুলো কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। বঙ্গবন্ধু দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি নিয়ে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। হঠাৎ করে কেউ রেডিও স্টেশনে গিয়ে ঘোষণা দিলে দেশ স্বাধীন হয় না। স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়, জনগণকে সংগ্রামে প্রস্তুত করতে হয়। সেটাই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের মূল কাজ। আমার কাছে যখন প্রস্তাব এলো রেডিও স্টেশনে গিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার, আমি বললাম, স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার আমি কেউ নই। এটা দেবে রাজনৈতিক নেতারা। পর দিন ২৬ তারিখ কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২টা ৪০ মিনিটে এম এ হান্নান চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এই ঘোষণা বাণী পাঠ করেন। ঘোষণা দেয়া আর ঘোষণা বাণী পাঠ এক কথা নয়। ঘোষণার অধিকার বঙ্গবন্ধুর ছিল আর কারো ছিল না। সেই অধিকার শুধু বঙ্গবন্ধুর, এম এ হান্নান শুধু বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সেই ঘোষণা বাণী পাঠ করেছিলেন। আমি বললাম, সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার, সৈনিকরা যে যুদ্ধ করছে এই জিনিসটা রেডিওতে প্রচার করলে ভালো হবে। আমাকে বলল, আপনি আসেন, আমি বললাম আমি তো যেতে পারছি না, আমি গেলে সৈনিকরা ভাববে আমাদের এক মাত্র অফিসার উনিও চলে গেছে। আমি বললাম টেপ রেকরর্ডার আনেন। কিন্তু তার আগেই প্রচণ্ড শেলিং শুরু হলো হেলিকপ্টার থেকে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন, সে ঘোষণা যখন প্রচার হচ্ছে, তখন জিয়াউর রহমান সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে যাচ্ছেন কর্নেল জানজুয়ার নির্দেশে। খবর পাঠানো হলো জিয়াউর রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্য, কারণ ওখানে গেলে মেরে ফেলতে পারে। জিয়া যখন যাচ্ছিল সেখানে বেরিকেড ছিল ওই বেরিকেড সরাতে গিয়ে সময় নষ্ট হয়। তা না হলে উনি চলে যেতেন। কিন্তু তাদের দুটি গাড়ি ফিরে এলো এবং তিনি চলে গেলেন ক্যান্টনমেন্টে। উনি আমার যুদ্ধের খবর পেলেন, বেলুচ রেজিমেন্টের উপর গুলি বর্ষণ করা হলো কিন্তু তিনি আক্রমণে না গিয়ে চলে গেলেন কক্সবাজার, রামু সেখান থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান সাহেব তাকে ফেরত পাঠায় যে রফিক সাহেব তো যুদ্ধ করছে, তখন সেখান থেকে জনগণের প্রতিরোধের মুখে ফিরে এসে কালুরঘাট ব্রিজের পূর্ব পারে একটা পাহাড়তলি হাইস্কুল আছে সেই স্কুলে তারা অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তিনি ম্যাপ দেখে বের করতে বললেন ইন্ডিয়া যাওয়ার রাস্তা কোনটা।
আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেন, বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে সাতক্ষীরা এক ভয়ংকর জনপদে রূপ নেয়। তার পরে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির পরে সাতক্ষীরায় শত শত মানুষকে বিএনপি-জামায়াত আক্রমণ করে। তাদের মধ্যে বেশ কিছু আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু হিন্দুকে তারা পিটিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে এক বিন্দু ছাড় দেয়া যাবে না। বিএনপি এখন বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছে, তারা আরো কিছু দাবি করছে- যা অসাংবিধানিক। তারা বিদেশিদের দারস্থ হয়ে তাদের ভুল বোঝাচ্ছে। কিন্তু তত্ত্ববধায়ক সরকাবে আর ফিরে আসার কোনো উপায় নেই। এই বিএনপি-জামায়াত জোট আবারো দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্র করে চলেছে, তারা পেছনের দরজা দিয়ে আবারো ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিরীন আখতার বলেন, বিএনপি বলছে দেশে গণতন্ত্র নেই, তাহলে তারা মিটিং মিছিল করছে কীভাবে, কীভাবে টক শোতে সরকারের সমালোচনা করছে?
আওয়ামী লীগের এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, অনেকে ভাবছেন আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। এটা ঠিক নয়, তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, নির্বাচনে সহিংসতা ঘটানোর চক্রান্ত করছে। সেইসঙ্গে বিএনপি অপেক্ষা করছে লন্ডনের বার্তার ওপর। তাই দেশবাসীকে ভাবতে হবে আপনারা এই দুটি পক্ষের মধ্যে আবার খুনি, জঙ্গিবাদের পোষক, দুর্নীতিগ্রস্ত বিএনপিকে আবার ক্ষমতায় আনবেন, নাকি উন্নয়নের কারিগর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওআমী লীগকে আবার বেছে নেবেন।
গতকাল রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় আরো অংশ নেন, এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, জিল্লুল হাকিম, এম এ মতিন, মাহফুজুর রহমান, মো.আফতাব উদ্দিন সরকার, আদিবা আনজুম মিতা এবং তানভীর শাকিল জয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়