আইনমন্ত্রী : মানবাধিকারের উন্নতি হওয়ায় র‌্যাব নতুন নিষেধাজ্ঞায় পড়েনি

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাসী-জঙ্গি একাকার : স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর যোগসাজস, দুর্গম হওয়ায় অভিযান চালানো কঠিন

পরের সংবাদ

ট্রান্সফর্মার-মিটার চুরি করে চাঁদাবাজি : অসহায় সেচযন্ত্র মালিক ও কৃষকরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আখতারুজ্জামান তালুকদার, ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) থেকে : জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে চলতি রবি মৌসুমে গ্রামীণ জনপদে গভীর ও অগভীর সেচযন্ত্র মালিকরা চাঁদাবাজ ও চোরদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতি রাতেই কোনো না কোনো ফসলের মাঠ থেকে বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রের মিটার, ট্রান্সফর্মারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটে। ফলে চুরি যাওয়া সেচযন্ত্রের মালিক ও কৃষকরা অসহায় হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ওই উপজেলার কৃষকরা চলতি রবি মৌসুমে অধিক ফলনের আশায় আলু, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যেই কৃষকরা আলু, সরিষা চাষ করে ফসলের মাঠে সবুজ ও হলুদের বিপ্লব ঘটিয়েছে। তবে বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে আলু ক্ষেতে সেচের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। সেই পানি সরবরাহ করে সেচযন্ত্র মালিকরা। তবে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে এসে চাঁদাবাজ ও চোরদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সেচযন্ত্র মালিকরা।
মূলত সেচযন্ত্র মালিকদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে একটি চক্র। তবে চাঁদা না পাওয়ায় তারা গভীর রাতে সেচযন্ত্রের মিটার, ট্রান্সফর্মারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ চুরিসহ পাহারাদারদের ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। চুরির কিছুদিন পর মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে ওই সব যন্ত্রাংশ ফেরত দেয়া হয়। আবার অনেক সময় চোরের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় ওই সব চুরি যাওয়া মিটার নষ্ট করে ফেলে রাখা হয়। ফলে সময় মতো পানি না পাওয়ায় আলু ক্ষেতে সেচের অভাবে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনেকটা হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কৃষকরা।
তবে এসব চাঁদাবাজ বা চোররা এলাকার সেচযন্ত্র মালিক ও কৃষকের রাতের ঘুম হারাম করলেও পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ না করায় থানায় এর কোনো রেকর্ড নেই। মূলত পুলিশকে জানালে চাঁদাবাজদের অত্যাচার আরো বৃদ্ধি পাবে এমন ভয়ে নীরব থাকেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, গত আমন মৌসুম থেকে চলতি রবি মৌসুম পর্যন্ত এ উপজেলায় সেচযন্ত্রের ৩৩টি ট্রান্সফর্মার এবং ১৭টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়েছে। চুরি যাওয়া এসব মিটার চাঁদার বিনিময়ে ফেরৎ পাওয়া গেলেও অধিকাংশ মিটার নষ্ট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলার আলমপুর গ্রামের কৃষক ও সেচপাম্প মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘পরপর দুইবার আমার সেচযন্ত্রের ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়েছে। ট্রান্সফর্মার ফেরত পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু ফেরত না পেয়ে প্রথমবার ১ লাখ ৫৫ হাজার এবং দ্বিতীয় বার ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ট্রান্সফর্মার ক্রয় করে কৃষকের জমিতে সেচ দিয়েছি। একইভাবে আমার মতো সেচযন্ত্র মালিকরা হয়রানিসহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।’
উপজেলার মামুদপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও সেচযন্ত্র মালিক মশিউর রহমান শামীম জানান, অপরাধ জগতের কতিপয় ব্যক্তি এসবের চুরির সঙ্গে জড়িত। এদের ক্ষমতা সুদূরপ্রসারী। ঐক্যবদ্ধভাবে এসব অপরাধ সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করা উচিত। তবে এক্ষেত্রে প্রশাসনের জোড়ালো কোনো ভূমিকা নেই।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ক্ষেতলাল সাব জোনাল অফিসের এজিএম (ও এন্ড এম) নাজিম হোসাইন বলেন, ‘ট্রান্সফর্মার চুরি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলেও বৈদ্যুতিক মিটার চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক মিটার চুরি প্রতিরোধে পাহারা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে উপজেলার আলমপুর ইউপি চত্বরে সেচযন্ত্র মালিকদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। চুরি যাওয়া মিটার নষ্ট হলে আমাদের করার কিছ্ইু নাই। গ্রাহকদের নতুন মিটারের মূল্য দিয়ে সেচপাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে হচ্ছে।’
ক্ষেতলাল থানার অফিসার ইনচার্জ রাজিবুল ইসলাম জানান, সেচযন্ত্রের (গভীর ও অগভীর নলকুপ) ট্রান্সফর্মার চুরি ঘটনা আগের। তবে বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনায় এ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ পেলে চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়