দুদক মামলা : আদালতে হাজিরা দিলেন আব্বাস দম্পতি

আগের সংবাদ

শিল্প খাতে বাড়ল গ্যাসের দাম > সবচেয়ে বেশি বাড়ছে ক্ষুদ্রশিল্পে, মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে : বিশেষজ্ঞদের অভিমত

পরের সংবাদ

যেমন চাই এবারের মুদ্রানীতি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

লন্ডনভিত্তিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রধান অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মার্টিন উলফকে বলা হয়েছিল মাত্র তিনটি শব্দে ২০২২ সালের অর্থনীতিকে বর্ণনা করতে। তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি ও জ¦ালানি সংকটের ধাক্কা। কিন্তু এই তিন সংকটই কি একই রকম থাকবে নতুন বছরেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি সংকটের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিনা জর্জিয়েভা জানিয়েছেন বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ মন্দায় পড়তে যাচ্ছে। এমনি এক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২-২৩ সালের জন্য দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুদ্রানীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।
মুদ্রানীতি হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত নীতি যা দেশের অর্থনীতিতে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। মুদ্রানীতি দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সুদের হার এবং অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি রুটিন কাজ হচ্ছে মুদ্রানীতি প্রণয়ন। আগে বছরে দুবার মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হতো। কিন্তু মাঝে কয়েক বছর ধরে বছরে একটি মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হচ্ছে। এবার থেকে আবারো বছরে দুবার করে মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হবে। জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এবার মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হবে। এরই মধ্যে ‘কেমন মুদ্রানীতি চাই’ বিষয়টি নিয়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, উদ্যোক্তা, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে মতামত সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মতামত প্রকাশ করছেন।
মুদ্রানীতির মূল কাজ হচ্ছে অর্থ প্রবাহ এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এবারের মুদ্রানীতিতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ আছে। কারণ দেশে মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেড়ে আছে, অন্যদিকে রিজার্ভ দিন দিন কমছে, তারল্য নিয়ে একটা বাড়তি উদ্বেগ রয়ে গেছে, করোনার জন্য কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে খেলাপি ঋণ বিগত বছরে কম ছিল কিন্তু এবার খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সামগ্রিক অর্থনীতির গতি প্রকৃতি ঠিক রাখতে গিয়ে মুদ্রানীতি একটু ব্যতিক্রমধর্মী হওয়ার দাবি রাখে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হতে হবে এবারের মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্য।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংক হার বৃদ্ধি করা অন্যতম কৌশল। এ ছাড়াও নগদ জমার হার বাড়িয়ে বা বাজারে ঋণপত্র বিক্রি করে বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য উঠিয়ে নিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এবারের মুদ্রাস্ফীতি ভিন্ন টাইপের। এটা নিয়ন্ত্রণে তাই ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। সুদের হার বাড়ালে ঋণ নেয়ার হার কমে এতে বাজারে টাকা সরবরাহ কমে। এতে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হলেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিছুটা ধীর হতে পারে। তবে উৎপাদনশীল খাতে ঋণের প্রবাহ ঠিক রেখে অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণের সহজলভ্যতা কমানো যেতে পারে। অর্থনীতিবিদগণ বলে আসছেন সুদ হারের ক্যাপ তুলে দেয়ার জন্য। এটা বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের অস্থিতিশীলতা দূর করার ব্যবস্থা করা দরকার। ডলারের একটা সিঙ্গেল রেট বিবেচনা করা যায় কিনা ভেবে দেখা। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আকৃষ্ট করার জন্য প্রণোদনা বাড়ানো যেতে পারে। কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশকিছু নীতি আশা করা যায় সুফল বয়ে আনবে। এই মুদ্রানীতিতে এটিও বহাল রাখা এবং কলেবর বাড়ানো যেতে পারে। বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য বড় বড় ঋণখেলাপি গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আদায়ের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি বিষয়গুলোকে আরো সহজ করা এবং ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের জন্য, ধনী দরিদ্রের ব্যবধান কমানোর জন্য গ্রাম পর্যায়ে ঋণ সুবিধা বিস্তৃত করার কোনো বিকল্প নেই। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সেরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে। তবে যাই করা হোক না কেন এই সময়ে ভারসাম্যমূলক মুদ্রানীতি অতীব প্রয়োজন।

আনোয়ার ফারুক তালুকদার শামীম, অর্থনীতি বিশ্লেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়