দুদক মামলা : আদালতে হাজিরা দিলেন আব্বাস দম্পতি

আগের সংবাদ

শিল্প খাতে বাড়ল গ্যাসের দাম > সবচেয়ে বেশি বাড়ছে ক্ষুদ্রশিল্পে, মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে : বিশেষজ্ঞদের অভিমত

পরের সংবাদ

ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেটের প্রেমের ফাঁদে অর্ধশত তরুণী! বহুরূপী প্রতারক রুহানী হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে নিত্যনতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হওয়া যতটা সহজ, প্রতারণার বাহারি ফাঁদে পড়ার পথও ততটাই উন্মুক্ত। ফেসবুক আইডিতে উল্লেখ করা পেশাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে প্রতিনিয়তই প্রতারণার ফাঁদে পা বাড়াচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ফেসবুক আইডিতে ভুয়া পেশা উল্লেখ করে প্রতারণার ফাঁদ পাতা তেমনই এক তরুণ জুনায়েদ রুহানী ওরফে রুবেল রানা ওরফে রুবেল রুহানী। নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে অর্ধশত নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। পরে নানাভাবে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। যারা টাকা দিতে রাজি হতেন না, তাদের ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) পাঠানো, স্বজন ও সহপাঠীদের কাছে কুৎসা রটানো, এমনকি ছবিসংবলিত বাজে পোস্টার লাগাতেও পিছপা হতেন না রুহানী।
অভিনব এই পন্থায় এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। শুধু তরুণীদের ফাঁদে ফেলা নয়, সরকারি চাকরি দেয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে রুহানী হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। এই প্রতারণায় তিনি নিজেকে বড় রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন এমপি-মন্ত্রীর পিএস ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এছাড়া করোনাকালে মানুষকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে জনপ্রতি অগ্রিম ১০ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেন। ডিবি বলছে, প্রতারক রুহানীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা এলাকায়। তার প্রধান টার্গেট ছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলা। পাশাপাশি তিনি সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা নিয়ে গাঢাকা দিতেন।
রুহানীর খপ্পরে পড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হাফসা (ছদ্মনাম) সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের

করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ২০২০ সালে রুহানীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হওয়ার পর সে নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দেয়। এরপর তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাকে সুবিধার লোক মনে না হওয়ায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে সরে এলে, রুহানী আক্রমণাত্মক আচরণ করতে থাকে। পরে দেখতে পাই, সম্পর্ক চলাকালীন কোনো এক সুযোগে সে আমার ফেসবুক আইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন ছবি সংরক্ষণ করে রেখেছে। এরপর আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি, আমার ওইসব ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগানো হয়েছে। যাতে লেখা, ‘চিনে রাখুন ডিভোর্সি, বহুরূপী, মিষ্টভাষীকে’। আমার কর্মক্ষেত্রেও বিভিন্ন কুৎসা রটানো হয়, পাঠানো হয় ভুয়া ওয়ারেন্টের কাগজ। মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করেও তার অপতৎপরতা থেকে মুক্তি মিলছে না।
নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে হাফসার মতোই হৃদি (ছদ্মনাম) নামে আরেক তরুণীকে ফাঁদে ফেলেন রুহানী। তাকে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এছাড়া সরকারি চাকরির প্রলোভনে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ও নুরুল আমিন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৬০ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিমলিডার অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, বহুরূপী প্রতারক রুহানীকে গত ১১ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে রুহানী কারাগারে আছেন। তবে রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আমরা সেগুলো তদন্ত করে দেখছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়