দুদক মামলা : আদালতে হাজিরা দিলেন আব্বাস দম্পতি

আগের সংবাদ

শিল্প খাতে বাড়ল গ্যাসের দাম > সবচেয়ে বেশি বাড়ছে ক্ষুদ্রশিল্পে, মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে : বিশেষজ্ঞদের অভিমত

পরের সংবাদ

বিচারককে গালিগালাজ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট : পৃথিবীর কোথাও আদালত কক্ষে এমন ঘটনা ঘটেনি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতে বিচারককে গালিগালাজ এবং অশালীন আচরণের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত শুনানিতে উচ্চ আদালত বলেন, আদালত অবমাননার রুল জারির পর থেকে এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নজির দেখেছি, পড়েছি। পৃথিবীর কোথাও আদালত কক্ষে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। এটি সভ্যতাবিবর্জিত ঘটনা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাসে ২ জানুয়ারি হট্টগোল, বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের ‘গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের’ অভিযোগে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। রুলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কার্যক্রম কেন নেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তিন আইনজীবীকে ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হতে আদেশ দেয়া হয়। এই আদেশে তিন আইনজীবী আদালতে উচ্চ আদালতে গতকাল মঙ্গলবার হাজির হয়। একই বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। সেই শুনানিতে আদালত এই মন্তব্য করেন।
শুনানির শুরুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার নেতাদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি এডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির আদালত অবমাননার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য দুই মাস সময় প্রার্থনা করেন। তখন আদালত বলেন, আপনারা কি কনটেস্ট করতে চাচ্ছেন? উত্তরে মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আমরা ব্যাখ্যা দেব বলে সময় প্রার্থনা করছি।
তখন আদালত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার সভাপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি তো শুধু আইনজীবী নন। আপনি আইনজীবীদের নেতা। মানুষ যখন বড় পদে যায়, তখন আরো বিনয়ী হয়। তার দায়িত্ব বেড়ে যায়। মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার সভাপতি আইনজীবী সমিতির সব সদস্যের পক্ষে কথা বলেছেন। এটা বারের সিদ্ধান্ত ছিল। তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থে এটা করেননি। তিনি সাধারণ আইনজীবীদের স্বার্থে কথা বলেছেন। তখন হাইকোর্ট বলেন, শুধু ভোটের চিন্তা করবেন না। আমাদের সবার ইমেজের বিষয়। আদালতকে অসম্মান করতে থাকলে এটা কারো জন্য শুভ হবে না। আদালতকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তাহলে আপনারা সম্মান পাবেন। আদালত না থাকলে আপনারাও থাকবেন না।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য সময় আবেদন করেন। তখন আদালত আইনজীবী নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সময় দিতে পারি তবে আপনারা পরিস্থিতি শান্ত করুন। কেউ কোর্ট বর্জন করবেন না। সবাই মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আগুন থামান। অন্যথায় আমাদের সবাইকে জ্বলতে হবে। তখন আইনজীবীরা বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি। কাজ শুরু করেছি। আমাদের সময় দিন। আদালত বলেন, আপনারা পরিস্থিতি শান্ত করুন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরা কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখব। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা জুডিশিয়ারিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। আমরা প্রতি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করছি।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় আপনারা আইনজীবীদের তলব করলেন। আদালত অবমাননার রুল জারি করলেন। কিন্তু বিচারকদের প্রতি আদালত অবমাননার রুল জারি করলেন না। বিচারকদের বিরুদ্ধেও আদালত অবমাননার রুল জারি করুন। আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারক খুব খারাপ আচরণ করেছেন। আমরা কতদিন এ আচরণ সহ্য করব। এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতির বক্তব্যের প্রতি উচ্চস্বরে সমর্থন জানান।
এ ঘটনায় আদালত ক্ষুব্ধ হয়। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জে বি এম হাসান বলেন, এটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। এখানে কি বার আর বেঞ্চের যুদ্ধ শুরু হয়েছে? এজলাস কক্ষে কি বাইরে থেকে লোক ঢুকেছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা তো এ রকম করতে পারে না। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা এটা করতে পারেন না। সবাই চুপ করুন। তখন আদালত বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিচারক ভুল করতে পারেন। এর জন্য প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী আছেন। তাদের কাছে বিচার চাইতে পারতেন। আদালত তো শক্তি প্রদর্শনের জায়গা নয়। এটা আমাদের জুডিশিয়ারির অস্তিত্বের বিষয়। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনজীবী নেতাদের সমঝোতার প্রচেষ্টা চালানোর পরামর্শ দিয়ে আদালত বলেন, সমঝোতা হলে আমরা অন্যভাবে চিন্তা করব।
এ সময় শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক এডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা, এডভোকেট শাহ মঞ্জরুল হক। এজলাস কক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) এডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও এডভোকেট জুবায়ের ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রাব্বানী, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
শুনানিতে বিচারকের সঙ্গে অশালীন আচরণের ঘটনায় যে ভিডিও ছড়িয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তা দ্রুত অপসারণ করতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আইনজীবীদের সময় আবেদন গ্রহণ করে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করে দেন হাইকোর্ট।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়