দুদক মামলা : আদালতে হাজিরা দিলেন আব্বাস দম্পতি

আগের সংবাদ

শিল্প খাতে বাড়ল গ্যাসের দাম > সবচেয়ে বেশি বাড়ছে ক্ষুদ্রশিল্পে, মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে : বিশেষজ্ঞদের অভিমত

পরের সংবাদ

চকরিয়ায় উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল : চোরাই কাঠ দিয়ে ফিশিং ট্রলার তৈরির হিড়িক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : চকরিয়ার উপকূলীয় জনপদের একাধিক পয়েন্টে সরকারি অনুমোদনহীনভাবে ফিশিং ট্রলার তৈরির হিড়িক চলছে। তিন মাস ধরে উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বদরখালী ফেরিঘাট, সাহারবিলের চোয়ারফাঁড়ি ও বেতুয়াবাজার সেতু এলাকায় মাতামুহুরী নদীর মোহনায় সংরক্ষিত বনের চোরাই গর্জন গাছ দিয়ে অবৈধ ফিশিং ট্রলার তৈরির প্রতিযোগিতা চললেও বনবিভাগের লোকজন রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছেন।
অভিযোগ উঠেছে, বনবিভাগের নীরব ভূমিকার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কাঠপাচারকারী চক্র। তারা এসব অবৈধ ফিশিং ট্রলার তৈরিতে কাঠের জোগান দিতে গিয়ে দিন দিন উজাড় করছে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ ও লামা বনবিভাগের গর্জন সমৃদ্ধ বিশাল বনজসম্পদ।
সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে চকরিয়া উপজেলার উপকূলের নৌ-চ্যানেলজুড়ে অবৈধভাবে ফিশিং ট্রলার তৈরির হিড়িক পড়েছে। পাশাপাশি গেল কয়েক বছর ধরে মাতামুহুরী নদীর মোহনা লাগোয়া এসব স্পটে কয়েকটি সিন্ডিকেট মিলেমিশে সরকারি বনাঞ্চল থেকে গর্জনসহ বিভিন্ন প্রকার গাছ কেটে অবৈধ ফিশিং বোট তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপকূলের তিনটি স্পটের মধ্যে সাহারবিলের চৌয়ারফাঁড়ি এলাকায় প্রতি বছর তৈরি করা হচ্ছে অনুমোদনবিহীন ফিশিং ট্রলার।
পরিবেশ সচেতন মহল বলছে, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই কক্সবাজার ও চকরিয়া উপজেলার বেশির ভাগ বনাঞ্চল বৃক্ষশূন্য হয়ে বিরান ভূমিতে পরিণত হবে।
অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগ ও চকরিয়ার সুন্দরবন রেঞ্জে কর্মরত কতিপয় লোকজনকে ম্যানেজ করে অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে ফিশিং ট্রলার তৈরির ব্যবসা চালাচ্ছেন। একটি ফিশিং ট্রলার তৈরি শেষে ৪০-৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। সারা বছরই এসব নদীর উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর তীরে বনবিভাগের অনুমতি ব্যতীত অবৈধ ফিশিং ট্রলার তৈরির রমরমা বাণিজ্য চললেও তা বন্ধে স্থানীয় বনবিভাগ ও প্রশাসন কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরজমিনে দেখা যায়, বদরখালী সেতুর উত্তর পাশে চারটি, সাহারবিলের চৌয়ারফাঁড়ি বাজার সংলগ্ন নদীর তীরবর্তী স্থানে ৫টি ও বেতুয়াবাজারস্থ সেতু এলাকায় দুটি বড় ফিশিং ট্রলার তৈরির কাজ চলছে। ফিশিং ট্রলার নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বনাঞ্চল থেকে গর্জনসহ বড় আকারের বিভিন্ন গাছ কেটে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথে আনা হয়। পাচারকারীদের সঙ্গে বনবিভাগের লোকজনের যোগসাজশ থাকায় বনাঞ্চল থেকে কাটা এবং পাচারে কেউ বাধা দেয় না তাদের।
স্থানীয় ব্যবসায়িরা বলেন, আমরা টাকা দিয়ে গাছ ক্রয় করি। বনাঞ্চল থেকে তো আমরা চুরি করি না। তাদের দাবি, পাচারকারী কাঠচোর চক্র এসব গাছ সড়ক ও নদীপথে মোকামে পৌঁছে দেয়। তার আগে কাঠচোর চক্রের লোকজন বনবিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিভিন্ন পয়েন্টে বর্তমানে নির্মাণাধীন ফিশিং ট্রলারগুলোর কোনো ধরনের সরকারি অনুমোদন নেই। মূলত বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ফিশিং বোট মালিকরা গোপনে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফিশিং ট্রলার তৈরির আগে স্থানীয় বনবিভাগ থেকে অনুমোদন নিতে হয় বলে স্বীকার করেছেন চকরিয়া উপজেলার সাহারবিলের চৌয়ারফাঁড়ি পয়েন্টের বোট ব্যবসায়ী আক্কাস সওদাগর। তিনি বলেন, প্রতিবার বোট তৈরির আগে বনবিভাগ থেকে অনুমোদন নিই। তবে দুই মাস আগে তৈরি করা ফিশিং ট্রলারের অনুমোদন নিইনি। সেবার রেঞ্জ অফিসার রুহুল আমিনকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এখন নতুন বোট তৈরি করেছি, সেটির জন্য অনুমোদন নেব। বোট ব্যবসায়ী আক্কাস সওদাগরের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে চকরিয়া সুন্দরবন রেঞ্জ কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, আক্কাস সওদাগর বোট তৈরির আগে বনবিভাগ থেকে অনুমোদন নেননি, চুরি করে বোট তৈরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন নিজের অপরাধ ঢাকার জন্য আমাকে জড়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে চকরিয়া উপকূলে যেসব ফিশিং বোট তৈরি করা হচ্ছে, তার কোনোটির অনুমোদন নেই। বিষয়টি ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করে অভিযান পরিচালনা করার জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, চকরিয়া উপকূলে বর্তমানে যেসব ফিশিং ট্রলার তৈরি করা হচ্ছে তার একটির জন্যও কেউ অনুমোদন নেয়নি। তাই অনুমোদনবিহীন এসব অবৈধ ফিশিং ট্রলার জব্দে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ফিশিং ট্রলারগুলোতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ ব্যবহার করার সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা ছাড়াও পাচারকাজে বনকর্মীরা জড়িত থাকলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়