নিউমার্কেটে সংঘর্ষ : তিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পেছাল

আগের সংবাদ

নামমাত্র প্রস্তুতিতে পাঠদান : বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী > বই, সহায়িকা ছাড়াই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ > নোট-গাইড ছাপার তোড়জোড়

পরের সংবাদ

‘শনিবার বিকেল’ ছবি প্রদর্শনে বাধা দূর হোক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে বলিউডে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ফারাজ’ ছবিটি। ছবিটি বানিয়েছেন মুম্বাইয়ের একজন গুণী মেধাবী চিত্রনির্মাতা হংসল মেহতা। বলিউডে বাংলাদেশের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়ংকর জঙ্গি হামলার আলোচিত ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা জানা গেছে আগেই। ইতোমধ্যে সেই বলিউডি সিনেমা ‘ফারাজ’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে সেই ছবিটি। ‘ফারাজ’ ছবির পরিচালক হংসল মেহতা ইতোমধ্যে সেই ছবিটির পোস্টার টুইটারে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর একমাত্র উপায় হলো একে পরাজিত করা। এটা বিভক্ত সময়ের গল্প।’ ২০১৬ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটে যাওয়া নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও নিজের বন্ধুদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তরুণ ফারাজ আইয়াজ হোসেন।
বাংলাদেশের গুণী চিত্রনির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ইতোমধ্যে তার নির্মিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক, ওয়েব সিনেমায় তার অসাধারণত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি বাংলাদেশের সিনেমাকে নিয়ে গেছেন, অধিষ্ঠিতও করেছেন উজ্জ্বল এক অবস্থানে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ঢাকার গুলশানে সংঘটিত হলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত সেই নৃশংস ট্র্যাজিক ঘটনাবলি নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি। যেখানে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকজন গুণী মেধাবী অভিনয় শিল্পী। ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের পর থেকে দেশের গুণীজন, সাধারণ মানুষ ছাত্রছাত্রী, সচেতন নাগরিক মহলের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে বহুল আলোচিত হৃদয়ে নাড়া দেয়া একটি বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি দেখার জন্য অধীরভাবে অপেক্ষা করছিলেন। সেলুলয়েডে সেই ভয়ংকর জঙ্গি হামলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করার অপেক্ষায় থাকা অগণিত সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সচেতন নাগরিক মহল, সংস্কৃতি কর্মী আজো ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি দেখতে পারেননি। সেন্সর বোর্ডের আপত্তির কারণে বহুল আলোচিত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ছবিটির মুক্তি আটকে আছে প্রায় ৪ বছর ধরে। যথাসময়ে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটির সব কাজ শেষ করেছিলেন পরিচালক ফারুকী। নির্মাণ শেষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছিল অনুমোদনের জন্য। সেন্সর বোর্ড সদস্যরা প্রথমে ছবিটি দেখে একটি অনবদ্য চলচ্চিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এ রকম একটি বাস্তব ঘটনানির্ভর চলচ্চিত্র অবিলম্বে দর্শকদের সামনে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার সুপারিশও করা হয়েছিল তখন। কিন্তু হঠাৎ করে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। গত ২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ড কর্তৃপক্ষ ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি আবার দেখে এর বিভিন্ন বিষয় ও দৃশ্য নিয়ে আপত্তি তোলেন। যার কারণে এ ছবিটি প্রদর্শনীর ব্যাপারে এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে আটকে দেয়া হয়। ছবিটি মুক্তি পেলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে তেমন অজুহাত তুলে এর প্রদর্শনীর অনুমোদন দিতে আপত্তি তোলা হয়েছে। তখন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপত্তিকৃত কিছু দৃশ্য পরিবর্তন সাপেক্ষে পুনরায় সেন্সর বোর্ডে পেশ করার কথা বলা হয়। সে মোতাবেক দৃশ্যগুলো পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন, করে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি আবার জমা দেয়ার পর ইতোমধ্যে বেশকিছু সময় পেরিয়ে গেছে। সেন্সর বোর্ড সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ না দেখিয়ে ছবিটি আটকে রেখেছে।
বর্তমানে আমরা সমৃদ্ধির চমৎকার একটি অবস্থানে অধিষ্ঠিত। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়ে পথচলা শুরু করেছি। এখন আমাদের কূপমণ্ডূক, পুরনো ধ্যানধারণা, মূল্যবোধ, সংস্কার, বিধিবিধান আঁকড়ে বসে থাকার অবকাশ নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন আমাদের আধুনিক স্মার্ট ধ্যানধারনার অনুসারী হতে হবে। তেমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড আধুনিক স্মার্ট দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারী হয়ে বহুল আলোচিত ও দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি প্রদর্শনীর অনুমোদন প্রদানে বাস্তব অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ দেবেন, এটা আজকের দৃঢ় প্রত্যাশা আমাদের। এভাবে লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, গল্পকার, উপন্যাসিক চলচ্চিত্রকারদের নিজস্ব সৃজনশীলতা প্রকাশে তার শিল্পকর্ম চলচ্চিত্র, গল্প, নাটক, সিনেমা সবার সামনে প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হলে ভবিষ্যতে দেশে সৃজনশীলতার ধারা রুদ্ধ হয়ে পড়বে। মুক্ত স্বাধীন সাংস্কৃতিক বিকাশকে বাধা দেয়া হলে সামাজিক রাজনৈতিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হবে এটা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে সিরিয়াসভাবে। আমাদের চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ড এখনো ১৯১৮ উপনিবেশিক কাঠামো বা ভাষার বাইরে বের হতে না পারার বিষয়টি বলা যায় এ প্রসঙ্গে। এত পালাবদলের পরও ব্রিটিশ সরকারের তৈরি করা সেই নিপীড়নমূলক আইনের স্পিরিট অব দ্য ল বা মূলভাবনা আশ্চর্যজনকভাবে পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ, পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক শাসনামল থেকে নব্বই-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারের যুগেও, কী ভাষায়, কী সংস্কৃতিতে শাসক আর শাসিতের সেই পুরনো আমরা-তোমরা বাইনারি মেজাজেই রয়ে গেছে। এ সময়ের চ্যালেঞ্জটাকে আমলে না নিয়ে নির্বিকার বসে থাকার সুযোগ নেই- এটা উপলব্ধি করতে হবে সব পক্ষকেই।
গত এক দশকে আমাদের চলচ্চিত্র, ওয়েব কনটেন্ট দুনিয়াজুড়ে দর্শকদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতারা বিশ্বচলচ্চিত্র মঞ্চে একের পর এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করছেন। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ওটিটির বাজার দাঁড়াবে ১ হাজার কোটি টাকার। এই দশকেই এশিয়ার অন্যতম অর্থনীতি হওয়ার হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। অথচ এই নতুন বাংলাদেশের ইমেজ তৈরি করবেন যে চলচ্চিত্র নির্মাতা তাদের এখনো গল্প বলার স্বাধীনতার দাবিতে কাঁটাতারের বেড়ার পেছনে গিয়ে বসতে হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটাও এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। স্বাধীনভাবে সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশের সুযোগ সমাজে এক ধরনের সুস্থ চিন্তার পরিবেশ সৃষ্টি করে স্বাভাবিকভাবেই। আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য এটার প্রয়োজনীয়তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। সবাইকে এটা সিরিয়াসভাবে অনুভব করতে হবে। কেবলমাত্র অর্থনীতিই একটি দেশ বা জাতির উন্নয়নের সূচক হতে পারে না, এর পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের সূচকও সমান গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ কিংবা অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে সেই সমাজ কিংবা রাষ্ট্রকে স্মার্ট বা আধুনিক বলা যায় না। শিল্পী বা শিল্পের কাজই হলো চোখে আঙুল তুলে সেই পথটা দেখিয়ে দেয়া। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের অবশ্যই স্মার্ট মানুষ, স্মার্ট পরিবার এবং স্মার্ট সমাজ গড়ে তোলার প্রয়াস চালাতে হবে। এজন্য যা যা প্রয়োজন তা যদি পূরণ করা সম্ভব না হয়, তাহলে যথার্থ প্রক্রিয়ায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। এজন্য প্রত্যেককে যার যার নিজের অবস্থান বদলাতে হবে, পরিশুদ্ধ করতে হবে নিজেকে। নতুন নতুন চিন্তাভাবনা, ধারণার উন্মেষ ঘটাতে হবে সমাজে। পুরনো জরাজীর্ণ ধ্যান-ধারণা গতানুগতিক ভাবনা ত্যাগ করতে হবে।

রেজাউল করিম খোকন : সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়