নিউমার্কেটে সংঘর্ষ : তিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পেছাল

আগের সংবাদ

নামমাত্র প্রস্তুতিতে পাঠদান : বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী > বই, সহায়িকা ছাড়াই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ > নোট-গাইড ছাপার তোড়জোড়

পরের সংবাদ

আলামত সংগ্রহ : বান্দরবানে জঙ্গির ‘কবরে’ মরদেহ নেই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি : বান্দরবানের থানচি ও রুমা- দুই উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র এক সদস্যের কবরে মরদেহের সন্ধান চালালেও তা পাওয়া যায়নি। তবে কবর দেয়ার জায়গায় যে সামান্য কিছু আলামত পাওয়া গেছে সেসব নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রুমা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুন শিবলী।
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে গতকাল সোমবার সকালে রুমার ইউএনও মামুন শিবলী সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের স্পষ্ট আদেশ ছিল মরদেহ উঠাতে হবে। যারা জঙ্গি ছিল তারা কবরস্থান দেখিয়ে দেবে। তারা দেখিয়ে দিয়েছে। কবর খোঁড়াও হয়েছে কিন্তু মরদেহ পাওয়া যায়নি। সেখানে সামান্য কিছু আলামত ছিল সেগুলো নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি বলেন, থানচি-লিক্রি সীমান্তে সড়কে ২২ কিলোমিটার এলাকা থেকে দেড় ঘণ্টার মতো হাঁটতে হয় লুংয়ংমুয়াল পাড়া পর্যন্ত। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ওই কবর পর্যন্ত পৌঁছাতে লাগে আরো ২ ঘণ্টা। কবরস্থানে যেতে পাহাড় থেকে রশি ধরে নামতে হয়েছে। কবর খোঁড়ার সময় উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা সদস্যসহ মোট ২০ জন উপস্থিত ছিলেন।
রুমা উপজেলার ৩নং রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম এলাকায় নিজেদের ‘দ্ব›েদ্বর জেরে’ এক জঙ্গিকে খুন করে কবর দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। ১১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার ৫ জঙ্গিকে রিমান্ডে নেয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে ২ জঙ্গি এমন তথ্য দেয় বলে জানায় তারা। গত শুক্রবার র‌্যাব ও পুলিশের একটি দল দুই জঙ্গিকে সঙ্গে নিয়ে সেই কবর চিহ্নিত করে এসেছে বলেও জানানো হয়। পরে আদালতের নির্দেশে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহ উত্তোলন করতে শনিবার যাওয়ার কথা থাকলেও শীতে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তা বাতিল করা হয়।
গত রবিবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে সেখানে মরদেহ তুলতে যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক, পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা সদস্যের একটি দল। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন ওই দুর্গম গহীন পাহাড় থেকে রবিবার রাতে ফিরে আসে দলটি। রুমা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন গতকাল সোমবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাস্থলে একজন এসআইসহ দুই পুলিশ সদস্যকে পাঠানো হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য হলো, কবর খুঁড়ে মরদেহের পরিবর্তে একটি কম্বল পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েকদিন আগে এটা খোঁড়া হয়েছে। মাটি দেয়া হয়েছে।
জঙ্গিরা বা অন্য কেউ আগেই মরদেহটি সরিয়ে ফেলেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আমলগীর হোসেন বলেন, পুলিশের ধারণা সেখান থেকে কোনো মৃতদেহ সরানো হয়নি। হতে পারে এটা ভুয়া, একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে জঙ্গিরা নাটক করেছে। বিশেষ কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা বা উদ্দেশ্যও তাদের থাকতে পারে। তবে সেখানে এরকম কিছু পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। তা না হলে সেখানে কবরের মতো কিছু একটা করা হবে কেন। তবে এমনও হতে পারে- যার কথা (নিহত জঙ্গি) বলা হচ্ছে তাকে মেরে মাটিচাপা দিয়েছে। তারা হয়ত চিন্তা করেনি যে, এত দুর্গম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৌঁছাতে পারবে। হয়তো তারা ভেবে নিয়েছে সে তো মরেই গেছে তাকে আর খুঁজবে না।
ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করতে রবিবার সকালে হেলিকপ্টারে রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লুংয়ংমুয়াল পাড়া পর্যন্ত যান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ও গোয়েন্দা শাখা প্রধান মো. মশিউর রহমান। সেখানে র‌্যাবের এই মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, কুমিল্লা থেকে একই সময়ে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হওয়া ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরে সঙ্গে আমিনুল ইসলাম ওরফে আল আমিন নামে যিনি নিখোঁজ ছিলেন, কবরটি তারই। ১৭ বছর বয়সি কিশোর ওই জঙ্গি কবরটি দেখিয়েছেন। মরদেহ উত্তোলন দলটির সঙ্গে নিহত আল আমিনের বাবা মো. নূর হোসেনকেও নিয়ে আসা হয়।
মো. নূর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আসল পরিবেশটা কী, আজকে এসে দেখলাম। ঘটনাস্থলে ডেকচি, হাড়ি-পাতিল এবং থালা-বাটি দেখে মনে হচ্ছে এই গহীন অরণ্যে তারা (কেএনএফ) কোনো একটি গ্রুপকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বান্দরবান জেলায় কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) একটি সশস্ত্র সংগঠন অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলে অক্টোবর মাসে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে জানায় র‌্যাব। এরপর থেকে জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব ও সেনাসদস্যের যৌথ বাহিনী। পরবর্তীতে এ অভিযান চালানো হয় থানচি উপজেলাতেও। যৌথ বাহিনীর এ অভিযানে এ পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ১২ জন সদস্য এবং পাহাড়ে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়