নিউমার্কেটে সংঘর্ষ : তিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পেছাল

আগের সংবাদ

নামমাত্র প্রস্তুতিতে পাঠদান : বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী > বই, সহায়িকা ছাড়াই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ > নোট-গাইড ছাপার তোড়জোড়

পরের সংবাদ

আরো ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী : ধর্ম নিয়ে কেউ যেন কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায় যে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সরকার নির্মাণ করছে এর মধ্যে দুই দফায় ১০০টির উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ১০ জুন। সরকার আশা করছে, ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ আরো ৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করা সম্ভব হবে। এ সময় ধর্ম নিয়ে আর কেউ যেন কোনোরকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারপ্রধান।
গণভবন থেকে গতকাল সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফরিদপুর, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এবং কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেন তিনি। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান বক্তব্য রাখেন। এছাড়া কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম, রাজশাহী ও শরীয়তপুর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও-ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, যেমন- মাদকাসক্তি, বাল্যবিয়ে, নারীর প্রতি সহিংসতা, গৃহকর্মী ও অধীনস্থদের নির্যাতন, খাদ্যে ভেজাল, দুর্নীতি ইত্যাদি দূরীকরণে ইমাম ও খতিবদের প্রতি আমার অনুরোধ, মসজিদের বয়ান ও খুতবার শেষ সময়ে এসব বিষয় থেকে মানুষ যেন বিরত থাকে সেজন্য সচেতন করবেন। মানুষের কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। নৈতিক বিষয়গুলো যেন উঠে আসে, সেদিকে নজর দেবেন।
শিক্ষক-অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক সমাজ ও পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সবাইকে বলব, প্রত্যেকের ছেলেমেয়েরা যেন এসব থেকে বিরত থাকে। ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, এসব লক্ষ্য রাখবেন। ইমাম খতিবরাও বিশেষ অবদান রাখতে পারেন। আমরা চাই, দেশে সত্যিকার ইসলামের জ্ঞানচর্চা হোক। সমাজ থেকে সব ধরনের অন্ধকার, কুশিক্ষা-অশিক্ষা, বিভেদ, হানাহানি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দূর করে গোটা সমাজকে সুন্দর রাখতে পারি। তিনি বলেন, প্রতিটির

ধর্মের মানুষ যেন তার নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে, সেই স্বাধীনতা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। পরমত সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা যেন বজায় থাকে। দলমতনির্বিশেষে সব মুসলমান অন্যান্য ধর্মের প্রতি সম্মান দেখিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যাব। আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। দেশের মানুষের উন্নতি হবে।
আওয়ামী লীগ সব সময় ইসলামের খেদমত করে উল্লেখপূর্বক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ওআইসির সদস্য লাভ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন, মাদ্রাসা বোর্ড গঠন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের জায়গা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া, বিশ্ব ইজতেমা যেন বাংলাদেশে হয়, তারও উদ্যোগ নেয়ার তথ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইজতেমার জায়গাটাও বঙ্গবন্ধুর দেয়া।
যেসব এলাকায় মসজিদ উদ্বোধন : ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নগরকান্দা, গাজীপুরের কাপাসিয়া, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা, কটিয়াদী, মানিকগঞ্জের ঘিওর, সাটুরিয়া, নরসিংদী সদর উপজেলা, মনোহরদি, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা, জেলা সদর, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা, বগুড়ার ধুনট উপজেলা, নন্দীগ্রাম, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলা, পাবনার ভাঙ্গুরা সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা, শেরপুরের সদর উপজেলা, পিরোজপুরে সদর উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর ও কসবা, খাগড়াছড়ির সদর উপজেলা ও মানিকছড়ি, কুমিল্লার চান্দিনা ও চৌদ্দগ্রাম, খুলনার রূপসা, কুষ্টিয়ার খোকশা ও ভেড়ামারা, মেহেরপুর জেলা সদর ও গাংনী, সাতক্ষীরার দেবহাটা, সিলেটের গোয়াইনঘাট, সুনামগঞ্জ জেলা সদর এবং জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা।
যা থাকছে : মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী ও পুরুষের আলাদা ওজু ও নামাজের জায়গা রাখা হয়েছে। হজে ইচ্ছুকদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, লাইব্রেরি, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র, কুরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন। মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে।
ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি রাখার জায়গা রাখা হয়েছে। সারাদেশে এসব মসজিদে প্রতিদিন চার লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ এবং ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী এক সঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন। এক সঙ্গে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ কুরআন তেলাওয়াত করতে পারবেন, ৬ হাজার ৮০০ জন ইসলামিক বিষয়ে গবেষণা করতে পারবেন, ৫৬ হাজার মানুষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নিতে পারবেন এবং প্রতি বছর এখান থেকে ১৪ হাজার কুরআনে হাফেজ হবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়