পদ্মা সেতু : মোটরসাইকেল চলাচল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য টাইগ্রেসরা

পরের সংবাদ

নতুন মাইলফলক : চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজও ভিড়ছে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : আজ থেকে ৮ বছর আগেও চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশ করতে পারত। তবে দিন দিন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি ও ব্যয় কমানোর জন্য ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ ভেড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। একই সঙ্গে ব্যবসায়ী সংগঠন ও বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো কর্ণফুলী নদী খনন করে চ্যানেলের গভীরতা বাড়ানোরও জোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এসব কিছু মিলিয়ে বন্দর কর্র্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিট্যাল ড্রেজিং এর মাধ্যমে গভীরতা বাড়িয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে এখন থেকে ১০ মিটার গভীরতা সম্পন্ন (পানির নিচে ১০ মিটার ডুবে থাকবে যে জাহাজ) এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে। আজ সেই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে একটি নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি বন্দরের জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ানোর মধ্য দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি পণ্য পরিবহন খাতে সাশ্রয় হবে কোটি কোটি টাকা। অপরদিকে বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য বাড়বে সুযোগ সুবিধা।
এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটি এবং সিসিটি (চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনাল) ও এনসিটি (নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল) জেটিতে বড় বড় জাহাজ ভেড়ার উপযোগী করা হয়েছে। আজ সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ বার্থিংয়ের উদ্বোধন করবেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার, শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, কর্ণফুলী রিভার স্টাডি কনসালটেন্ট প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, এতে বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বাড়বে, কমবে কন্টেইনারে করে আনা-নেয়া করা পণ্যের পরিবহন ব্যয়। কারণ একসঙ্গে বেশি পরিমাণ কন্টেইনারবাহী পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যবে। এতে করে শুধু যে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন তা নয় কিন্তু, দেশও উপকৃত হবে। কারণ এতে সময় এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ ভেড়ানো ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়াতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়েলিংফোর্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের সমীক্ষা রিপোর্টের পর বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের ক্যাপিট্যাল ড্রেজিং, ব্যাকআপ ফেসিলিটিজসহ (ইয়ার্ড-ডক সম্প্রসারণ) নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে। এরপরই ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জাহাজ ভেড়াতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে দক্ষ পাইলট। পাইলটদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজও সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট এবং ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজ ভেড়তে পারত। এর আগে বন্দরে আরো ছোট জাহাজ ভেড়তো। জেটিতে সাড়ে নয় মিটার গভীরতা এবং ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজে মাত্র ১৮শ থেকে ২৪শ কন্টেইনার বহনের সুযোগ থাকে। বড় ড্রাফটের জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে এসে অপেক্ষায় থাকতে হয়। লাইটারেজ জাহাজ গিয়ে পণ্য খালাস করে জেটিতে আনার পর আবার সেই পণ্য খালাস করতে হয়। রপ্তানি পণ্যও একই পদ্ধতিতে জাহাজীকরণ করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যায়। অপেক্ষাকৃত ছোট জাহাজ ভিড়লে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। বিশ্বের শিপিং সেক্টরের অনেক বড় জাহাজই চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না। ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজে আরো ১ হাজার থেকে ১১শ কন্টেইনার বেশি পরিবহন করা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের ভিত্তিতে বন্দরের জেটিতে বড় জাহাজ অর্থাৎ ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে এখনকার চেয়ে বেশি কার্গো পরিবহন করা যাবে। বন্দরের টার্ন এরাউন্ড টাইম কমে আসবে। তবে কী পরিমাণ বেশি কন্টেইনার পরিবহন করা যাবে সেটা কার্যক্রম শুরুর পর বলা যাবে। ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর পর আমরা বিশ্বের বিভিন্ন শিপিং কোম্পানির কাছে সার্কুলার পাঠাব।
তবে বন্দরের একটি সূত্র জানিয়েছে, বন্দরের ১৮টি জেটির সবকটিতে একই ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে না। জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে ড্রাফট করা সম্ভব হবে। নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১০ মিটার ড্রাফট দেয়া সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়