কাগজ প্রতিবেদক : দেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পত্তি কেনার অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারের চারটি সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগামী এক মাসের মধ্যে চারটি সংস্থাকে অনুসন্ধানের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দুবাইয়ে ৪৫৯ জনের সম্পত্তি কেনার অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুল জারি করা হয়েছে। আইন ভঙ্গ করে গড়া এসব বাড়ি ও সম্পদের মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রবিবার এ নির্দেশ দেন।
সরকারি চার সংস্থা হলো- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট সুবীর নন্দী দাস। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন। এছাড়া আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল সুমন হক শুনানিতে অংশ নেন।

‘দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির হাজার প্রপার্টি’ শিরোনামে গত ১০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস গত ১২ জানুয়ারি আবেদনটি করেন। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়- বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে দুবাইয়ে। এ অর্থ পুনর্বিনিয়োগে ফুলে-ফেঁপে উঠছে দুবাইয়ের আর্থিক, ভূসম্পত্তি ও আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সিএডিএস) সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছে- বাংলাদেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে প্রপার্টি কিনেছেন ৪৫৯ বাংলাদেশি। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি ক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার। তবে প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের ব্যয়ের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুবাইয়ে বসবাসকারীসহ বিভিন্ন সূত্রের অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো তথ্য অনুযায়ী- ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির পরিসংখ্যানটি করা হয়েছে সিএডিএসের ২০২০ সালের তথ্য নিয়ে। এরপর গত দুই বছরে দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের প্রপার্টি কেনার প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন বাংলাদেশিরা, যার তথ্য তারা দেশে পুরোপুরি গোপন করেছেন।
বিভিন্ন মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী- দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের গোপনে কেনা সম্পদের অর্থমূল্য এখন কম করে হলেও এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। বৈশ্বিক অর্থনীতির করোনাকালীন বিপত্তির মধ্যেও দেশটির রিয়েল এস্টেট খাতের বিদেশি প্রপার্টি ক্রেতাদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন বাংলাদেশিরা।
দুবাইয়ের ভূমি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী- করোনায় দুবাইয়ে বাংলাদেশি ধনীরাই সবচেয়ে বেশি সম্পদ কিনেছেন। এদিক থেকে নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, চীন ও জার্মানির মতো দেশগুলোর বাসিন্দাদের পেছনে ফেলেছেন বাংলাদেশিরা। দেশের বিত্তবানদের কাছে দীর্ঘদিন দুবাইয়ের আকর্ষণ ছিল নিছক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে এ আকর্ষণ রূপ নিয়েছে প্রকাশ্য ও গোপন লগ্নির কেন্দ্র হিসেবে। দুবাইয়ে আকর্ষণীয় মুনাফার খোঁজে রিয়েল এস্টেট ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসায় নাম লেখাচ্ছেন অনেকে। দেশের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই দুবাইকে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে।